বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বেঁচে থাকলে আর্মি অফিসার হতো রাসেল: প্রধানমন্ত্রী

  •    
  • ১৮ অক্টোবর, ২০২১ ১৩:০০

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কেউ যদি জিজ্ঞেস করতো তুমি (রাসেল) কি হবে? বলতো, আমি আর্মি হব। আর্মি অফিসার হবে এটাই তার জীবনের স্বপ্ন ছিল। কামালও মুক্তিযুদ্ধ করে ট্রেনিং নেয়। সেনা সদস্য ছিল, পড়ে রিজাইন করে। যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতো, পড়াশোনা শেষ করতে সে চলে আসে। জামাল সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়। রাসেলেরও সেই আকাঙ্ক্ষা ছিল। তার সে স্বপ্ন কিন্তু আর পূরণ হয়নি।’

বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে রাসেলের আকাঙ্ক্ষা ছিল সেনা অফিসার হবে, কিন্তু ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে তার সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। প্রথম শেখ রাসেল দিবসে ছোট ভাইয়ের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হতে না পারার আক্ষেপ ঝড়ল শেখ হাসিনার কণ্ঠে।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সোমবার শেখ রাসেল দিবস ২০২১-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কেউ যদি জিজ্ঞেস করতো তুমি (রাসেল) কি হবে? বলতো, আমি আর্মি হব। আর্মি অফিসার হবে এটাই তার জীবনের স্বপ্ন ছিল। কামালও মুক্তিযুদ্ধ করে ট্রেনিং নেয়। সেনা সদস্য ছিল, পড়ে রিজাইন করে। যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতো, পড়াশোনা শেষ করতে সে চলে আসে। জামাল সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়।

‘রাসেলেরও সেই আকাঙ্ক্ষা ছিল। তার সে স্বপ্ন কিন্তু আর পূরণ হয়নি। আজকে হয়তো বেঁচে থাকলে সেনাবাহিনীর একজন অফিসার হতে পারত, কিন্তু সেটা আর হতে পারল না।’

১০ বছরের রাসেলকে কেন হত্যা করা হলো তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কারো জীবনে যেন এমন ঘটনা আর না ঘটে। একজন শিশুকে হত্যা মানে লাখো শিশুর জীবনে আশঙ্কা এসে যায়। আমার একটাই প্রশ্ন আসে, কেন? এই শিশুটির কি অপরাধ ছিল? আমার বাবার কি অপরাধ ছিল? বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে এজন্য?

‘১৫ আগস্ট, আমার বাবাকে ক্ষমতার লোভে হত্যা করল। একই সাথে আমার মা, আমার ভাই কামাল-জামাল। তাদের স্ত্রী সুলতানা, রোজি। সবচেয়ে কষ্ট হলো রাসেল। বাবা মা ভাই সকলকে হত্যার পর সবারর শেষে রাসেলকে…। রাসেল মায়ের কাছে যাব বলে কান্নাকাটি করছিল। সেই রাসেলকে ভাই চাচা বাবা সকলের লাশ ডিঙিয়ে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।’

বক্তব্যে শেখ রাসেলকে নিয়ে নানা স্মৃতি বর্ণনা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘একটা ছোট্ট শিশু, তার জীবনে তো অনেক স্বপ্ন থাকে। জীবনটাকে সে উপভোগ করতে চায়। জন্মের সময় থেকেই রাসেল আমাদের সকলের এত আদরের ছিল।

‘আমরা চারটি ভাইবোন, রাসেল আসার পরে পাঁচ ভাইবোন। আমরা রাসেলের জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করেছিলাম। আমাদের একটি ছোট্ট সোনামণি আসবে তাকে নিয়ে আমরা খেলব, তাকে বড় করব। রাসেলের যেদিন জন্ম হলো সেদিন থেকেই সে আমাদের সকলের চোখের মনি।’

তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে কষ্ট হয় যে রাসেল আসলে বাবার স্নেহ ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ৬৪ সালের অক্টোবরে রাসেলের জন্ম আমার বাবা বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন, বারবার তাকে কারাবরণ করতে হয়েছে। আমরা ছোটবেলা থেকেই বাবা কিছুদিন ঘরে তারপর জেলে। রাসেলের জন্মের পর ৬৬ সালে বাবা যখন ছয় দফা দিলেন তারপর তিনি সারা বাংলাদেশ ছুটে বেড়িয়েছেন।

‘ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি ছয় দফা দিলেন অল্প সময়ের মধ্যে মে মাসে তাকে গ্রেপ্তার করা হলো। সে সময় বাবাকে রাসেল খুব একটা কাছে পায়নি। তবুও যতটুকু সময় পেতেন আমার বাবা শিশুদের খুবই পছন্দ করতেন, আদর করতেন। রাসেলকে তিনি কোলেই রাখতেন, নিজের হাতে দুধ খাওয়াতেন শিশি ভরে। সেটা খুব অল্প সময়ের জন্য। এরপর তাকে গ্রেপ্তার করা হলো।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারাগারে যেদিন দেখা করে আসতো রাসেল তখন কথা বলতে পারতো না, কিন্তু তার ভেতরের যে অস্থিরতা, মনের যে কষ্ট সেটা আমরা বুঝতে পারতাম। সে যখন কান্নাকাটি করতো আমাদের সব ভাইবোনকে ডাকতো আমরা সবাই তার সঙ্গে বসতাম। এভাবেই তার কষ্টটা সে চেপে রাখতো। রাসেল এভাবেই বড় হলো।

‘১৯৬৯ সালে যখন বাবা মুক্তি পেলেন তখন রাসেল কিছুতেই তার কাছছাড়া হতো চাইতো না। কিছুক্ষণ পরপরই আব্বাকে দেখে আসতো যে তিনি আছেন কি না।’

শেখ হাসিনার কথায় উঠে আসে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় বন্দি থাকার স্মৃতি। তিনি বলেন, ‘এরপরতো আসলো ৭১ সাল। আব্বাকে যখন গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হলো এরপরেই আমার মাসহ আমাদের বন্দি করা হলো। রাসেল ছোট্ট তাকেও বন্দি করা হলো। সে বন্দিখানায় তার খেলাধুলার কোনো সুযোগ নেই। খেলার সাথী নেই।

‘আমার দুই ভাই মুক্তিযুদ্ধে চলে গেছে। রাসেলের ভেতরে যে কষ্ট সেটা কিন্তু সে কখনও প্রকাশ করতো না। তার চোখে পানি থাকতো, জিজ্ঞেস করতাম বলতো কিরে তোর চোখে পানি কেন? বলতো চোখে ময়লা পড়েছে। ওইটুকু একটা ছোট বাচ্চা তার কষ্টটাকে লুকিয়ে রাখতো।’

রাসেলের স্মৃতি তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার পর সর্বক্ষণ বাবার সঙ্গে সঙ্গেই থাকার চেষ্টা করতো। এজন্য আব্বা যখন যেখানে যেতেন তাকে নিয়ে যেতেন। তার কাপড় চোপড়ও মা সেভাবেই তৈরি করে দিত।

‘রাসেল আরেকটা কাজ করতো, আমরা যখন টুঙ্গিপাড়ায় যেতাম, গ্রামের যে গরীব ছেলে তাদের একসঙ্গে করে প্যারেড করাতো। কাঠের বন্দুক তৈরি করে দিয়ে তাদের প্যারেড শেখাতো। সেটা আবার এমনি না পুরস্কারেরও ব্যবস্থা থাকতো। সবাইকে একটি করে টাকা দিতো। আর এই ছেলেদের জন্য আমার মা কাপড় কিনে নিয়ে যেতেন। এটা রাসেলেরই একটা নির্দেশ ছিল, যে বাচ্চাদের প্যান্ট শার্ট কিনে দিতে হবে।’

ভাই রাসেলের স্মৃতি চারণায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্কুলে যেতে প্রথমে একটু বাধা ছিল, তার সঙ্গে আমাদের কাউকে যেতে হতো। বিশেষ করে রেহানা প্রায়ই গিয়ে বসে থাকতো। পরে অবশ্য ঠিক হয়ে যায়। কমিক বই পড়তে খুব পছন্দ ছিল। যখন ঠিক মতো পড়তেও পাড়তো না তখনও তাকে কমিক পড়ে শোনাতে হতো।’

এ বিভাগের আরো খবর