দেশের সকল শিশুর মাঝে স্নেহের ছোট ভাই শেখ রাসেলকে খুঁজে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রথম শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বাণীতে এ কথা বলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।
জাতির পিতার পাঁচ সন্তানের মধ্যে শেখ রাসেল ছিলেন সবার ছোট। বড় বোন হিসেবে শেখ হাসিনার কাছে থাকত নানা আবদার।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে খুনিরা বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্য সদস্যদের পাশাপাশি ১১ বছর বয়সী রাসেলকেও হত্যা করে।
১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে জন্ম নেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ সন্তান শেখ রাসেল। গত ২৩ আগস্ট মন্ত্রিসভা দিনটিকে ‘শেখ রাসেল দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।
দিনটি ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত করে জাতীয়ভাবে পালন করার নির্দেশ দেয়া হয় মন্ত্রিসভা থেকে। সে হিসেবে এ বছরই প্রথম দিনটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হচ্ছে।
প্রথমবারের মতো পালিত ‘শেখ রাসেল দিবস ২০২১’ এর প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে ‘শেখ রাসেল দীপ্ত জয়োল্লাস, অদম্য আত্মবিশ্বাস’।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘শেখ রাসেল আজ আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু আছে তার পবিত্র স্মৃতি। বাংলাদেশের সকল শিশুর মধ্যে আজও আমি রাসেলকে খুঁজে ফিরি।
‘এই শিশুদের রাসেলের চেতনায় গড়ে তুলতে হবে। এমন এক উজ্জ্বল শিশুর সত্তা বুকে ধারণ করে বাংলাদেশের শিশুরা বড় হোক। খুনিদের বিরুদ্ধে তারা তীব্র ঘৃণা বর্ষণ করুক। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে তারা এগিয়ে আসুক- আজ এ প্রত্যাশাই করি।’
ভাই হারানোর কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘এই কোমলমতি শিশু রাসেলকে আমরা হারিয়েছি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ইতিহাসের এক নির্মম, জঘন্য ও বিভীষিকাময় রাতে। স্বাধীনতাবিরোধী, ষড়যন্ত্রকারী ও বিশ্বাসঘাতকদের হাতে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের ১৮ জন সদস্য শহিদ হন ঐ কালরাতে।
‘সেদিন ছোট্ট শিশু রাসেলও খুনিদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। রাসেল তো বাঁচতে চেয়েছিল। বাঁচার জন্য ঘাতকদের কাছে আকুতি জানিয়েছিল, মায়ের কাছে যাবার কথা বলেছিল। মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ঘাতকরা তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।’
কালরাতের স্মৃতিচারণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘বিভীষিকাময় সেই রাতের প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি মুহূর্ত এখনও গভীর শোকের সঙ্গে স্মরণ করি। এখনও ভাবি, কারও বিরুদ্ধে শত্রুতা থাকতেই পারে, কিন্তু সেই ক্ষোভ একজন কোমলমতি শিশুকে কেন কেড়ে নেবে? এই শিশু কী দোষ করেছিল? সে তো কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। সে কেন এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের অংশ হবে?’
দুঃখের এই স্মৃতি স্মরণ করতে কষ্ট হয় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বুকে পাথর বেঁধে সেইসব স্মৃতির সাগরে ডুব দেই। কারণ সেদিন ঘাতকের বুলেট যে কোমলমতি শিশুটির প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল, সে ছিল নির্দোষ-নিস্পাপ।’
আদরের ছোট ভাইকে স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘সে আজ বেঁচে থাকলে কী করত- এই ভাবনাটা আমাকে প্রায়ই ভাবায়।
‘রাসেল যদি বেঁচে থাকত, তাহলে হয়ত একজন মহানুভব, দূরদর্শী ও আদর্শ নেতা আজ আমরা পেতাম, যাকে নিয়ে দেশ ও জাতি গর্ব করতে পারত।’
ছোট ভাইয়ের নামকরণের ইতিহাসও জানান শেখ হাসিনা। বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অত্যন্ত প্রিয় লেখক ছিলেন খ্যাতনামা দার্শনিক ও নোবেলজয়ী লেখক বাট্রার্ন্ড রাসেল। জাতির পিতা বার্ট্রান্ড রাসেলের বই পড়ে বঙ্গমাতাকে ব্যাখ্যা করে শোনাতেন। তাই বঙ্গবন্ধু আর বঙ্গমাতা দুজনে মিলে শখ করে তাদের আদরের ছোট ছেলের নাম রেখেছিলেন রাসেল।’
তিনি বলেন, ‘রাসেল নামটি শুনলেই প্রথমে যে ছবিটি সামনে আসে তা হলো- হাস্যোজ্জ্বল, প্রাণচঞ্চল এক ছোট্ট শিশুর দুরন্ত শৈশব; যে শিশুর চোখগুলো হাসি-আনন্দে ভরপুর। মাথা ভর্তি অগোছালো চুলের সুন্দর একটি মুখাবয়ব- যে মুখাবয়ব ভালোবাসা ও মায়ায় মাখা।’