ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতের তাণ্ডবের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
২৬ মার্চ তাণ্ডবের পর থানা থেকে পুলিশ পোশাক বদলে পালিয়ে যান বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ ছাড়া গোয়েন্দা বাহিনী কোনো কাজে আসেনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জেলা সার্কিট হাউসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-কুমিল্লা সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী সন্ত্রাস সম্পর্কে ‘বাংলাদেশ মৌলবাদী সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন’-এর গণশুনানিতে তিনি এসব কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মোকতাদির বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবসে মলয়া সংগীতের অনুষ্ঠানে আসার প্রস্তুতি নেয়ার সময় হেফাজতি তাণ্ডবের কারণে প্রশাসন মানা করে আসার জন্য। তখন বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙার কথা শুনে জামিয়া ইউনুছিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি মোবারক উল্লাহকে ফোন করে বাধা দিতে অনুরোধ করি।
‘তবে তিনি জানান, বিক্ষোভকারীরা তার কথা শুনছে না। শুধু বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল ভাঙচুর নয়, সেদিন হেফাজতি বিক্ষোভকারীরা দল ভারী করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনেও অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালায়।’
স্থানীয় সংসদ সদস্য বলেন, ‘২৭ মার্চ জেলার অন্য জায়গাগুলোতে হামলা চালানো হয়। তখন পুলিশকে কারফিউ জারি করতে বলি। তবে সেখানে থানার কর্মকর্তারা ড্রেস বদল করে পালিয়ে যান।
‘শুধু থানার কর্মকর্তা নন, একজন অ্যাডিশনাল এসপিও পালিয়ে যান। তবে সেদিন ১৪৪ ধারা দেয়া হলে ২৮ তারিখ যে নৃশংস হামলা-ভাঙচুর তা ঘটত না। ২৬, ২৭ ও ২৮ তারিখ পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা ছিল নির্বিকার।’
শহরের বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে জাতির পিতার ম্যুরালের উপর আগুন দিয়ে ভাঙচুর করা হয়
গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ভূমিকার সমালোচনা করে এ সংসদ সদস্য বলেন, ‘ডার্টি রোল প্লে করেছে। তাদের যে কাজ রয়েছে তা করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। হেফাজতি তাণ্ডবের ঘটনায় তারা কোনো কাজেই আসেনি।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমি ফোন করার পর তিনি আমার ওপর দোষ চাপিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও আইজিপির দপ্তরেও ফোন করে কোনো রকম সাহায্য পাইনি।’
মাওলানা সজিদুর রহমান ও মোবারক উল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মামলা করার চেষ্টা করেছি, হয়নি। চট্টগ্রামেও মামলার জন্য আপিল করেছি, তাও হয়নি।
‘কারণ আমার মামলাগুলো গ্রহণ না করতে দুজন মন্ত্রী ফোন করেছিলেন। তাদেরকে কেন লালনপালন করছে আমার জানা নেই।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মৎস্য অধিদপ্তর কার্যালয়ে হেফাজতের দেয়া আগুনে পোড়া মোটরসাইকেল। ছবি: নিউজবাংলা
গণশুনানিতে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশনের চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে গুরুত্ব সহকারে আমরা বিষয়টি জানাব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতাবিরোধীদের শাস্তি দিয়ে আসছেন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হেফাজতিদের তাণ্ডবের বিষয়টি স্বাধীনতাবিরোধী কাজ।
‘আমরা আশা করি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, তাণ্ডবের সাথে যারা জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।’
শুনানিতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আদিবাসী ও সংখ্যালঘুবিষয়ক সংসদীয় ককাসের আহ্বায়ক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মোহাম্মদ নুরুল আনোয়ার, মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশনের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ এবং মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন ও সচিবালয়ের সমন্বয়কারী কাজী মুকুল।