সরকার সব দিক থেকে গণধিক্কারের মধ্যে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রোববার বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় কৃষক দলের মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনার যে গণতন্ত্রহীনতা, তার যে গণতন্ত্র হত্যা- সবকিছু মিলিয়ে আজকে যে গণধিক্কৃত অবস্থার মধ্যে পড়েছেন, সেখান থেকে নিজেদের ভাবমূর্তি বাঁচানোর জন্য পরিকল্পিতভাবে, চক্রান্তমূলকভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিনষ্ট করছেন এবং আমাদের ঐতিহ্যকে ধুলায় লুণ্ঠিত করেছেন।’
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিক্রি করে দিয়েছেন নিজেকে ক্ষমতায় রাখার জন্য। তিনি দেখাচ্ছেন বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টে কেউ প্রতিক্রিয়া জানালে, কেউ ক্ষুব্ধ হলে আমি গুলি চালাচ্ছি, মানুষ মেরেও ফেলছি। আমাকে আন্তর্জাতিকভাবে সুদৃষ্টিতে দেখবে, আমাকে ভালো জানবে যে আমি এসব প্রশ্রয় দিচ্ছি না।’
খালেদা জিয়ার প্রশংসায় রিজভী বলেন, ‘যে ব্যক্তির সুস্থতা কামনায় আজ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে, সেই মহান ব্যক্তিটি আমাদের ছাত্রজীবন থেকে প্রেরণা জুগিয়েছেন, সাহস জুগিয়েছেন। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কীভাবে লড়াই করতে হয়, দেশ এবং জাতির ক্রান্তিকালে কীভাবে দেশকে পরিচালনা করতে হয়, সেই অদম্য দৃষ্টান্ত তিনি দেখিয়েছেন। তার নাম দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। অসুস্থ থাকার পরও দেশের মানুষের প্রতি প্রতিশ্রুতি, অঙ্গীকার থেকে বিন্দুমাত্র বিচলিত হননি।’
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আজকে এই সরকার শুধু অবৈধ ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য জনগণের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীকে বন্দি করে রেখেছে। সুচিকিৎসা তার নাগরিক অধিকার, মৌলিক অধিকার, সে অধিকারও হরণ করছেন শেখ হাসিনা, আর বড় বড় কথা বলছেন।
‘দেশের স্বার্থ বিক্রি করে দিলে ২০০১ সালেও ক্ষমতায় আসতাম’ শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যেরও সমালোচনা করেছেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘আপনি কোনোবারই সঠিক পন্থায় ক্ষমতায় আসেননি, আপনি আন্তর্জাতিক মাস্টার প্ল্যানের মাধ্যমে সব সময় ক্ষমতায় এসেছেন। কারণ, আপনি দেশকে ভালোবাসেন না, দেশের মানুষকেও ভালোবাসেন না। যদি ভালোবাসতেন, তাহলে আপনি দিনের ভোট রাতে করেন কেন? আপনি দেশের প্রধান বিরোধী দল এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে বাদ দিয়ে ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন করেন কেন? আপনি বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের পাইকারি দরে মামলা দিয়ে কারাগারে ভরে রাখেন কেন?
‘আপনার অবৈধ ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য। আপনি দেশ বিক্রি করেছেন বলেই আপনি দেশের গণতন্ত্রকে বিক্রি করছেন, দেশের নাগরিকত্বকে বিক্রি করছেন। দেশের প্রধান বিরোধী দলের নেত্রীকে জেলখানায় ভরে মানুষের অধিকারকে বিক্রি করে আজকে ক্ষমতায় রয়েছেন। আপনি সবচেয়ে বড় বিক্রেতা, অবৈধ বিক্রতা।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘আপনি (শেখ হাসিনা) দেশের স্বার্থ বিক্রি করেননি? দেশের স্বার্থ বিক্রি করছেন বলেই আজকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করতে পারছেন না। আপনি কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে তাদের তাদের নিজ দেশে পাঠানোর উদ্যোগ নেননি। এখানেও দেশের স্বার্থ বিক্রি করেছেন। আপনি নোবেল প্রাইজ পাওয়ার জন্য রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর স্বার্থকে বিক্রি করে দিয়েছেন। আপনি দেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব বিক্রি করছেন।
‘আজকে সবাই জানে আপনি অনেক চুক্তি করেছেন গোপনে। সেই চুক্তি জনগণের সামনে আপনি উপস্থাপন করেননি, আপনি পার্লামেন্টেও সেটা নিয়ে আসেননি। আপনি দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে ক্ষমতায় রয়েছেন। আপনি তো নির্বাচিত নন, এটা আপনি ভালো করেই জানেন। সারা দেশের মানুষের হৃদয়ের ভাষা আপনি টের পান ঠিকই, কিন্তু বলতে চান না।’
বর্তমান সরকার নাগরিক স্বাধীনতা চায় না মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ‘ওরা নিজের ক্ষমতায় টিকে থাকাটাই বড় মনে করে। সে কারণে এক এক করে ধ্বংস করেছেন আমাদের সব প্রতিষ্ঠানকে। আপনি আদালতে যাবেন যদি দেখা যায় আপনি বিএনপির কোনো নেতা, তাহলে আপনি বিচার পাবেন না। আর সরকার যেটা বলে দেবে আপনার বিচারের রায় সেটাই হবে।
‘আপনি আক্রমণের শিকার হয়েছেন, আপনি পুলিশের কাছে যাবেন পুলিশ উল্টো আপনার নামে মামলা দেবে। কারণ, আপনি বিএনপি করেন। আপনি সত্য কথা লিখবেন আপনার নামে মামলা হবে, আপনি মুক্ত কণ্ঠে কথা বলবেন আপনার গলায় দড়ি ঝুলবে। এই হচ্ছেন শেখ হাসিনা।’
সংগঠনের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের সঞ্চালনায় দোয়া মাহফিলে কৃষক দলের সহসভাপতি গৌতম চক্রবর্তী, যুগ্ম সম্পাদক টি এস আইয়ুব, সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য মেহেদী হাসান পলাশ, বর্তমান দপ্তর সম্পাদক শফিকুল ইসলামসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।