বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আফসার আহমদের মৃত্যুতে সন্তানের স্বীকৃতি নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বর্ণপ্রভা

  •    
  • ১৭ অক্টোবর, ২০২১ ১৬:৪৪

বিয়ের বিষয়টি ২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি লিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে জানান স্বর্ণপ্রভা। একই সঙ্গে সন্তানের ভরণপোষণ ও খোরপোশের দাবিতে ওই বছরের ২৫ জানুয়ারি তিনি পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। গত ৯ অক্টোবর আফসার আহমদের মৃত্যুর পরপর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেয়া শোকবার্তায় উল্লেখ করা হয় তিনি স্ত্রী ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। স্বর্ণপ্রভার দাবি, এই শোকবার্তা তার সন্তানের পিতৃপরিচয়কে আরও সংকটে ফেলেছে। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত শিক্ষক অধ্যাপক আফসার আহমদের দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করা ফারজানা নাজ স্বর্ণপ্রভা সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তিনি বলছেন, জীবিত অবস্থায় আফসার আহমদ তার সন্তানের ভরণ-পোষণ দেননি। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছে আদালতে। এমন অবস্থায় আফসার আহমদের মৃত্যুর পর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেয়া শোকবার্তায়ও দ্বিতীয় সন্তানের উল্লেখ নেই। ফলে সন্তানের পিতৃপরিচয়হীনতার শঙ্কা বেড়েছে।

স্বর্ণপ্রভার কাছ থেকে পাওয়া ‘বিয়ের নথিপত্রে’ দেখা গেছে, ২০১৬ সালের ২৪ নভেম্বর তাকে বিয়ে করেন আফসার আহমদ। নিকাহনামার ২১ নম্বর ঘরে আফসার আহমদ তার আগের বিয়ের তথ্য গোপন করে লিখেছেন ‘স্ত্রী নাই’। এই বিয়ের এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই ২০১৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর স্বর্ণপ্রভাকে তালাকনামা পাঠান আফসার। এর মাত্র তিন দিন আগে ২২ সেপ্টেম্বর স্বর্ণপ্রভা একটি ছেলেসন্তান জন্ম দেন।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক স্বর্ণপ্রভার অভিযোগ, এই সন্তান জন্মানোর আগে একবার গর্ভপাতে বাধ্য করেছিলেন আফসার আহমদ।

আফসার আহমদ ও স্বর্ণপ্রভার বিয়ের নথি

বিয়ের বিষয়টি ২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি লিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে জানান স্বর্ণপ্রভা। একই সঙ্গে সন্তানের ভরণপোষণ ও খোরপোশের দাবিতে ওই বছরের ২৫ জানুয়ারি তিনি পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। মামলাটি এখনও চলমান।

এরই মধ্যে গত ৯ অক্টোবর মারা যান আফসার আহমদ। তার মৃত্যুর পরপর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেয়া শোকবার্তায় উল্লেখ করা হয়, আফসার আহমদ স্ত্রী ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। স্বর্ণপ্রভার দাবি, এই শোকবার্তা তার সন্তানের পিতৃপরিচয়কে আরও সংকটে ফেলেছে।

বিষয়টি নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলামকে চিঠি দিয়েছেন স্বর্ণপ্রভা। তবে এর কোনো জবাব এখনও পাননি।

সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার অভিযোগ স্বর্ণপ্রভার

স্বর্ণপ্রভা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি যখন কনসিভ করি, তখন তার (আফসার আহমদ) একটি ভিন্ন রূপ দেখি। আমি লুকিয়ে ছিলাম অনেক দিন। তখন আমি প্রেগন্যান্ট ছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘বাচ্চা হওয়ার পর আমি একটা ভালো ডাক্তার দেখাতে পারিনি। বাচ্চা হয়েছে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের ২২ তারিখে। আমিই তাকে ডিভোর্স লেটার পাঠাতাম, কিন্তু সিজার হওয়ার কারণে আমার তখন সেই অবস্থা ছিল না। তবে সে জানতে পেরেছিল যে আমার বাচ্চা হয়েছে। সেপ্টেম্বরের ২৫ তারিখ সে আমাকে ডিভোর্স লেটার পাঠায়।’

ডিভোর্স নিয়ে স্বর্ণপ্রভার কোনো আক্ষেপ না থাকলেও সন্তানের পিতৃপরিচয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে তিনি অনড়। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সহকারী অধ্যাপক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি একটা ভুল করেছি ভুল মানুষকে বিশ্বাস করে। তবে আমি আমার মতো থাকতে চেয়েছিলাম। আমার বাচ্চার বয়স যখন আড়াই মাস, তখনও আমি লুকিয়েই ছিলাম। তবে সে (আফসার আহমদ) মানুষকে বলছে, তার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়নি, বাচ্চা হয়নি। বাচ্চা তার না। যখন আমি দেখলাম সামাজিকভাবে আমার অবস্থানটা এ রকম তখন আমি আর কী করব!

‘যখন আমি দেখলাম আমার বাচ্চার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, তখন আমি কীভাবে ঠিক থাকব! সে সবাইকে বাচ্চার সামাজিক পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক কথা বলেছে। এটা যে কত বড় অপমানের বিষয়। আর যত ভুলত্রুটি যা হয়েছে তা তো বাবা-মায়ের, এর জন্য বাচ্চা তো দায়ী নয়। এটা তখন তার আইডেন্টিটি ক্রাইসিস তৈরি করল।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে যাওয়ার কথা জানিয়ে স্বর্ণপ্রভা বলেন, ‘আমি বাচ্চা হওয়ার আগেই উপাচার্য মহোদয়ের কাছে গিয়েছি। তখন আমি কনসিভ করেছিলাম। তাকে মৌখিকভাবে হুমকির বিষয়গুলো জানাই। একবার দেখা করে বলেছি, এরপর ফোনে অনেকবার কথা হয়েছে।

‘তখন আমার প্রেগন্যান্সির চার মাস। তখন তিনি খুব সহানুভূতিশীল ছিলেন। দুই ঘণ্টার বেশি আমার কথা শুনলেন। তিনি আফসার আহমদকে ডেকে আবার সংসার করার কথা বলেছিলেন। এটাও বলেছিলেন, তুমি চাইলে সংসার করো, আমি জোর করে হলেও আফসারকে রাজি করাব। তবে আমি রাজি হইনি। ডিভোর্স হলেও আমার বাচ্চার সঙ্গে যেন কোনো অন্যায় না হয়, সেটি তাকে বলেছিলাম।’

স্বর্ণপ্রভা বলেন, ‘বাচ্চা হওয়ার পর যখন সে (আফসার আহমদ) তার সামাজিক পরিচয় হুমকির মুখে ফেলে দেয়, তখন আমি উদ্বেগে পড়ে যাই। তখন আমি লিখিত অভিযোগ নিয়ে উপাচার্য মহোদয়ের কাছে গিয়েছিলাম। আমার বাচ্চার আইডেন্টিটি লাভের আর কী পথ থাকতে পারে! আমি তো পারিবারিক সহিংসতার শিকার।’

আফসার ও স্বর্ণপ্রভার সন্তানের জন্মনিবন্ধন সনদ

স্বর্ণপ্রভা বলেন, ‘আমার অভিযোগ ছিল সে আমার সঙ্গে এভাবে সম্পর্কে জড়িয়েছে, আমাকে বিয়ে করেছে, আমার একটা বাচ্চা হয়েছে। এর আগে অ্যাবরশন করিয়েছে। এখন বাচ্চা হওয়ার পর আমাকে ডিভোর্স দিয়েছে, বাচ্চাকে অস্বীকার করছে। সে যে অন্যায় করেছে, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে সে এই অন্যায় করতে পারে না।’

তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযোগটিকে গুরুত্ব দেয়নি বলে দাবি স্বর্ণপ্রভার। তিনি বলেন, ‘তখন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় আমার সঙ্গে নাটক করা শুরু করে। তারা বলে, একটা ই-মেইল এসেছে, তবে সেটা কে পাঠিয়েছে তারা নিশ্চিত নয়। আমি তাদের আবার নিশ্চিত করলাম। তারা সেটি যৌন নিপীড়ন সেলে পাঠিয়ে আমাকে কল করেছে, তবে অভিযোগের কোনো সুরাহা হয়নি। এরপর আরেকবার চিঠি দিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি।’

স্বর্ণপ্রভা বলেন, ‘২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে বাচ্চার ভরণপোষণ ও খোরপোশ দাবি করে আমি মামলা করি। তবে এখন পর্যন্ত মামলাটা যেভাবে দাখিল করেছিলাম সেভাবেই আছে।’

সন্তানকে নিয়ে যত দুশ্চিন্তা স্বর্ণপ্রভার

আফসার আহমদের মৃত্যুর পরের পরিস্থিতি নিয়েও উৎকণ্ঠিত স্বর্ণপ্রভা। তিনি বলেন, ‘আমি যখন তার মৃত্যুসংবাদ শুনি, তখন আমি শকড। মৃত ব্যক্তির কোনো অপরাধ থাকে না। আমি সেখানেই থাকতে চেয়েছি। তবে আমার ওই সময়টা তো ভুল না।’

স্বর্ণপ্রভা বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় যে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে সেটা আমি দেখেছি। বিভিন্ন মিডিয়ায় সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তির বরাতে ছাপা নিউজগুলো দেখেছি। সবাই লিখেছে তার (আফসার আহমদ) এক মেয়ে। যখন আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহোদয়ের শোকবার্তা দেখলাম, তখন শকড হয়েছি। কীভাবে তিনি একটা মেয়ের কথা উল্লেখ করে পারেন!

‘আমি উপাচার্য মহোদয়কে ফোন করেছি। ওনার সঙ্গে আমার ৩৩ মিনিট কথা হয়েছে। আমি ওনাকে বলেছিলাম আপনি সব জানেন। আপনি জানেন তার একটা ছেলে আছে। উপাচার্য তখন আমাকে বললেন, আমি তোমার কাছ থেকে শুনেছি। এটা তো প্রতিষ্ঠিত না। আফসার তো স্বীকার করেনি।’

স্বর্ণপ্রভা বলেন, ‘আমি উপাচার্যকে বলেছি যে, আপনি সমস্ত ঘটনা জানেন। তাহলে মৃত্যুর এক দিনের মাথায় কেন এমন বলেছেন? তার জবাবে উপাচার্য আমাকে বলেছেন, এটা তো আমার স্বীকার বা অস্বীকার করার ব্যাপার না। তিনি (আফসার আহমদ) তো স্বীকার করে যাননি।’

উপাচার্যের এমন অবস্থানে নিজের সন্তানের বঞ্চনার শঙ্কা আরও বেড়েছে বলে অভিযোগ স্বর্ণপ্রভার।

আফসার আহমদের মৃত্যুর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের শোকবার্তা নিয়ে স্বর্ণপ্রভার পাঠানো চিঠি

বিষয়টি নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলামের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা। শনিবার বিকেলে দুই দফা ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। এরপর তিনি খুদে বার্তায় মিটিংয়ে থাকার কথা জানিয়ে প্রশ্নের বিষয়বস্তু মেসেজের মাধ্যমে পাঠাতে বলেন। নিউজবাংলা প্রতিবেদক এরপর খুদে বার্তায় বিষয়বস্তু জানানোর পর তিনি কোনো সাড়া দেননি, পরে ফোন করা হলেও ধরেননি।

আইন কী বলছে?

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রথমত ওনার (স্বর্ণপ্রভা) ডিভোর্সের তারিখ দেখতে হবে, বাচ্চার জন্মতারিখ দেখতে হবে। এ দুটি বিবেচনায় নিলে সাক্ষ্য আইনের ১১২ ধারা অনুযায়ী বিষয়টি চূড়ান্তভাবে বলা যায়, আফসার আহমদের সঙ্গে বিবাহিত থাকা অবস্থায় উনি গর্ভধারণ করেছেন। এমনকি ডিভোর্সের ১৮০ দিনের মধ্যেও যদি সন্তান জন্ম নেয়, তাহলেও এই সন্তানের পিতার স্বীকৃতি নিয়ে ভিন্নমত করার সুযোগ নেই। আইনিভাবে শিশুটির পিতৃপরিচয় নিঃসন্দেহে আছে।’

‘আইন অনুযায়ী উনিই (আফসার আহমদ) এই সন্তানের পিতা। উনি মারা যাওয়ার পর যদি অন্য ঘরে সন্তানাদি থাকে, তাদের মতো সমান হারেই এই সন্তানও রেখে যাওয়া সম্পত্তির ভাগ পাবে। আর অন্য ঘরে সন্তান না থাকলে তার পুরো সম্পত্তিই এই ছেলে পাবে।’

এই আইনজীবী বলেন, ‘পাশাপাশি এই সন্তানকে এতদিন ভরণপোষণ দেয়া না হলে তার সমপরিমাণ সম্পত্তি আদালতের আদেশের মাধ্যমে পিতার সম্পত্তি থেকে নেয়ার সুযোগ রয়েছে। সম্পত্তি না দিলে নতুন সাকসেশনের মামলা দেয়া যাবে। সেই মামলার ভিত্তিতে আদালত সম্পত্তির ভাগ নির্ধারণ করবে।’

এ বিভাগের আরো খবর