গুচ্ছ পদ্ধতিতে দেশের ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক প্রথম বর্ষের বিজ্ঞান বিভাগের ভর্তি পরীক্ষা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার কর্মদিবসের শুরুতে পরীক্ষার্থীদের ভিড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
তবে ভোগান্তি হলেও একটি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ভর্তিযুদ্ধ শেষ করতে পেরে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া দীর্ঘদিন পর ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশ উপভোগ করেন অনেকে।
গুচ্ছ পদ্ধতিতে প্রথম দিনে পরীক্ষা দুপুর ১২টায় শুরু হলেও শিক্ষার্থীরা শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে সকাল ৯টা থেকেই ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করেন। ১০টা ৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি গেট ও পোগোজ স্কুলসংলগ্ন গেটটি খুলে দেয়ার পর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন।
পরীক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে মূল ফটকসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় নিরাপত্তাকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা স্যানিটাইজার ও মাস্ক বিতরণ করেন। দুপুর ১২টায় জবি ও এর আওতাভুক্ত পোগোজ স্কুল কেন্দ্রে ‘এ’ ইউনিটের (বিজ্ঞান) পরীক্ষা শুরু হয়।
এর আগে কেন্দ্রের বাইরে জেলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদ, বিভিন্ন ধর্মীয় ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী স্বেচ্ছাসেবকদের পরীক্ষার্থীদের মোবাইল, ঘড়িসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংরক্ষণের দায়িত্ব নিতে দেখা যায়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক পরীক্ষার হল পরিদর্শন করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ, প্রক্টর ড. মোস্তফা কামালসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুরান ঢাকা একটি ব্যস্ততম স্থান। এখানে যানজট হওয়াটা স্বাভাবিক। এর মধ্যে কিছু শিক্ষার্থী যানজটে আটকা পড়ে দেরিতে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছালে তাদেরও পরীক্ষা দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়।
পরীক্ষার্থীদের ভিড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
পরীক্ষা চলাকালীন ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি গেটে পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেছে। প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরাও সব দিকে খেয়াল রেখেছেন। স্বেচ্ছাসেবকরা শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় দায়িত্ব পালন করেছেন।’
পরীক্ষার হল পরিদর্শন শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশে প্রথমবারের মতো গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কষ্ট লাঘব করতেই গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। শিক্ষার্থীরা আনন্দঘন পরিবেশে পরীক্ষা দিয়েছে। আমাদের উদ্যোগ সফল হয়েছে।’
এতগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা একসঙ্গে হওয়ার পরও ছুটির দিনে পরীক্ষা না নেয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘করোনাকালীন আমরা বারবার পরীক্ষা পিছিয়েছি। এখন এ পরীক্ষা না নিলে এটি আবার পিছিয়ে নভেম্বরে চলে যেত। আর শুক্রবার আগে থেকেই অনেক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তাই বাধ্য হয়েই রোববার পরীক্ষা নিতে হলো।’
তবে সময় যখনই হোক, একসঙ্গে পরীক্ষা দিতে পেরে খুশি শিক্ষার্থীরা।
পরীক্ষা শেষে নটর ডেম কলেজ থেকে পাস করা সুচ্চ রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পরীক্ষার প্রশ্ন মানসম্মত হয়েছে। গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান অংশের প্রশ্ন কিছুটা কঠিন হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে একসঙ্গে পরীক্ষা দিতে পেরে ভালো লাগছে। এতে আমাদের ভোগান্তি কমেছে। এ জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ।’
দেশের মোট ২৬টি কেন্দ্রে একযোগে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষায় বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য- এই তিনটি ইউনিট রয়েছে। মোট আসনসংখ্যা ২২ হাজার ১৩টি। এর বিপরীতে আবেদন করেছিলেন ২ লাখ ৩২ হাজার ৪৫৫ শিক্ষার্থী।
এর মধ্যে ‘এ’ ইউনিটে ১ লাখ ৩১ হাজার ৯০১ জন, ‘বি’ ইউনিটে ৬৭ হাজার ১১৭ জন এবং ‘সি’ ইউনিটে ৩৩ হাজার ৪৩৭ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য মনোনীত হয়েছেন।