বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পতন টানা পাঁচ দিন, বিনিয়োগ এখন ব্যাংকমুখী

  •    
  • ১৭ অক্টোবর, ২০২১ ১৪:৫৯

গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকেই এই খাতে ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে। সেদিন ব্যাংক খাতে হাতবদল হয়েছিল ১৯১ কোটি ২০ লাখ টাকা। পরদিন কিছুটা কমে হয় ১৪০ কোটি ২০ লাখ টাকা। ১২ অক্টোবর আবার বেড়ে হয় ১৭৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। ১৩ অক্টোবর তা আরও বেড়ে হয় ১৯৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। ১৪ অক্টোবর পুঁজিবাজারে লেনদেন প্রায় ৫০০ কোটি টাকা কমে গেলেও ব্যাংক খাতে শতকরা হারে হিস্যা আরও বাড়ে। সেদিন এই খাতে লেনদেন হয় ১৯৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সেখান থেকে প্রায় ৯০ কোটি টাকা বেড়ে আজ হাতবদল হলো ২৮৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

আগের সপ্তাহে টানা চার কর্মদিবসের পর পুঁজিবাজারে নতুন সপ্তাহের শুরুটাও হলো বাজে। দিনের অর্ধেক সময় বাজার ইতিবাচক থাকলেও শেষ পর্যন্ত বড় পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো লেনদেন।

সামগ্রিক পতনের মধ্যেও সবচেয়ে বড় বাজার মূলধনের ব্যাংক খাতে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট হওয়ার বিষয়টি আরও স্পষ্ট হলো। বহু বছর পর লেনদেনের শীর্ষে উঠে এলো ব্যাংক খাত।

সামগ্রিকভাবে লেনদেন কমলেও এই খাতে লেনদেন বেড়েছে ৯০ কোটি টাকার মতো। মোট লেনদেনের ১৮ শতাংশের মতো হাতবদল হলো একটি খাতে।

আগের সপ্তাহে টানা চার কর্মদিবসে সূচক পড়েছিল ১২৫ পয়েন্টের মতো। রোববার পড়েছে আরও ৫৬ পয়েন্ট।

গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া বাজার সংশোধনে এ নিয়ে টানা পাঁচ কর্মদিবস সূচক কমল, যা গত ২৩ ফেব্রুয়ারির পর আর ঘটেনি। এর আগে গত ১৬ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা ছয় কর্মদিবস সূচক পড়েছিল।

দিনের শেষটা হতাশ করলেও শুরুটা খারাপ ছিল না। ৩৬ পয়েন্ট বেড়ে গিয়ে শুরু হয় লেনদেন। দুপুর ১২টা পর্যন্তও সূচক ৩৫ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন হচ্ছিল। কিন্তু এরপর কেবলই পড়তে থাকে।

বেলা একটা পর্যন্ত সূচক আগের কর্মদিবসের চেয়ে বেশিতে লেনদেন হচ্ছিল। কিন্তু এরপর থেকে কেবলই কমেছে। একপর্যায়ে লেনদেন শেষ হওয়ার ৭ মিনিট আগে সূচক পড়ে যায় ৭৭ পয়েন্ট। পরে সেখান থেকে কিছুটা বাড়ে সূচক।

শেয়ার মূল্য বেড়েছে কেবল ৬৫টি কোম্পানির। বিপরীতে পড়েছে ২৮৭টির। অপরিবর্তিত ছিল বাকি ২৪টির।

রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বৃদ্ধি পাওয়া ১০টি কোম্পানির তিনটি ছিল ব্যাংক খাতের আর সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া ১৫টি কোম্পানির মধ্যে ছয়টি ছিল এই খাতের। বহু দিন পর এই চিত্র দেখা গেল।

এর মধ্যে নতুন তালিকাভুক্ত সাউথ বাংলা ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে এক দিনে যত বাড়া সম্ভব ততই। আগের দিনের দামের সঙ্গে যোগ হলো ৯.৯৪ শতাংশ।

টানা চতুর্থ দিন বৃদ্ধি পাওয়া এনআরবিসির দর বেড়েছে ৮.২২ শতাংশ। এ ছাড়া আইএফআইসি ব্যাংকের শেয়ার দর ৫.০৫ শতাংশ, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের দর ৩.৫১ শতাংশ, আল-আরাফাহ ব্যাংকের দর ৩.৪১ শতাংশ এবং এবি ব্যাংকের দর বেড়েছে ৩.৪০ শতাংশ।

সব মিলিয়ে ৩২টি ব্যাংকের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১৯টির। শেয়ার দর ১০ থেকে ৩০ পয়সা কমেছে ৭টি ব্যাংকের, দর অপরিবর্তিত ছিল বাকি ৬টির।

২০২০ সালে যেকোনো খাতের তুলনায় ভালো লভ্যাংশ দেয়া ব্যাংকগুলোর আয় অর্ধবার্ষিকে আরও বেড়েছে। তার মধ্যেও এই খাতটির ঘুমিয়ে থাকা নিয়ে আলোচনার মধ্যে দর সংশোধনের বাজে সময়েও বিনিয়োগকারীরা উৎসাহী হয়ে উঠছেন।

গত কয়েক দিন ধরেই ব্যাংক খাতে বিনিয়োগ বেড়ে চলার যে প্রবণতা দেখা দিয়েছিল, তা আরও স্পষ্ট হলো

গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকেই এই খাতে ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে। সেদিন ব্যাংক খাতে হাতবদল হয়েছিল ১৯১ কোটি ২০ লাখ টাকা। পরদিন কিছুটা কমে হয় ১৪০ কোটি ২০ লাখ টাকা। ১২ অক্টোবর আবার বেড়ে হয় ১৭৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। ১৩ অক্টোবর তা আরও বেড়ে হয় ১৯৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। ১৪ অক্টোবর পুঁজিবাজারে লেনদেন প্রায় ৫০০ কোটি টাকা কমে গেলেও ব্যাংক খাতে শতকরা হারে হিস্যা আরও বাড়ে। সেদিন এই খাতে লেনদেন হয় ১৯৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সেখান থেকে প্রায় ৯০ কোটি টাকা বেড়ে আজ হাতবদল হলো ২৮৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

দিন শেষে সূচকের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ১৮৬ পয়েন্ট। গত ১৯ সেপ্টেম্বরের পর সূচকের সর্বনিম্ন অবস্থান এটি।

সূচক কমলেও লেনদেন বেড়েছে কিছুটা। বৃহস্পতিবার হাতবদল হয়েছিল ১ হাজার ৪৩৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। সেখান থেকে খানিকটা বেড়ে আজ লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৬৫৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

ব্যাংক ছাড়া অন্য কোনো খাতেই দিনটি ভালো যায়নি। এর ভিড়ে সবচেয়ে বেশি খারাপ দিন গেছে সিমেন্ট খাতে। গত মাসে হঠাৎ করেই ব্যাপক লেনদেন শুরু হওয়া খাতটির সবগুলো কোম্পানিই দর হারিয়েছে।

আর্থিক খাতের ২২টি কোম্পানির মধ্যে একটি মাত্র দর ধরে রাখতে পেরেছে, পতন হয়েছে বাকি সবগুলোর।

বিমা খাতে কেবল চারটি কোম্পানির দর বেড়েছে, কমেছে বাকি ৪৭টির। লেনদেনের দ্বিতীয় শীর্ষে থাকলেও ওষুধ ও রসায়ন খাতেও পতন হয়েছে। চারটি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ২৬টির দর।

বস্ত্র খাতে ৭টির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ৪৬টির দর, জ্বালানি খাতে দুটির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ২০টি আর প্রকৌশল খাতে ৭টির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ৩৪টির দর।

বড় মূলধনি ১০ কোম্পানির উত্থানেও ঠেকানো গেল না পতন

টানা দর বাড়তে থাকা ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানির শেয়ার দর আরও ৩.৭৬ শতাংশ বেড়েছে। এই একটি কোম্পানির কারণেই সূচকে যোগ হয়েছে ৩০.৭৭ পয়েন্ট।

এ ছাড়া বেক্সিমকো লিমিটেডের দর বৃদ্ধি পাওয়ায় সূচকে যোগ হয়েছে ৮.১১ পয়েন্ট, গ্রামীণ ফোন বাড়িয়েছে ৪.৮৩ পয়েন্ট।

পতনের বাজারে সূচক টেনে তুলতে প্রধান ভূমিকায় ছিল যেসব কোম্পানি

অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে এনআরবিসি ৪.০৩, আইএফআইসি ৩.২২, সাউথবাংলা ব্যাংক ৩.১৩, ফরচুন সুজ ২.৯৩, ইসলামী ব্যাংক ২.৩৭, ডেল্টালাইফ ২.০৩ এবং আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক সূচকে যোগ করেছে ২.০১ পয়েন্ট।

অর্থাৎ এই ১০টি কোম্পানিই সূচকে যোগ করেছে মোট ৬৩.৪৩ পয়েন্ট।

অন্যদিকে সূচক সবচেয়ে বেশি কমেছে লাফার্জ হোলসিম সিমেন্টের দরপতনে সূচক থেকে কমেছে ১৫.১৪ পয়েন্ট। অন্যদিকে আইসিবির কারণে ৮.৩ পয়েন্ট, বিকন ফার্মার কারণে ৬.৯৪ পয়েন্ট, রবির কারণে ৬.৬১ পয়েন্ট, ইউনাইটেড পাওয়ারের কারণে ৬.০৯ পয়েন্ট, ওরিয়ন ফার্মার কারণে ৫.৪১ পয়েন্ট, পাওয়ারগ্রিডের কারণে ৫.০৯ পয়েন্ট, জিপিএইচ ইস্পাতের কারণে ৪.১৭ পয়েন্ট, বেক্সিমকো ফার্মার কারণে ৩.৫৬ পয়েন্ট এবং সাবমেরিন কোম্পানির শেয়ারের দরপতনে সূচক কমেছে ৩.৪৩ পয়েন্ট।

সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানির কারণে সূচকের পতন হয়েছে ৬৪.৭৪ পয়েন্ট।

সূচক পতনে প্রধান ভূমিকায় ছিল এই ১০টি কোম্পানি

দর হারানো কোম্পানির দাম কমেছে ব্যাপক হারে

টানা দুই মাস ধরে চাঙা থাকা ওরিয়ন ফার্মার শেয়ার এক দিনেই দর হারিয়েছে ৯.৫৪ পয়েন্ট। ১১৫ টাকা ২০ পয়সা থেকে দাম নেমে এসঠে ১০৪ টাকা ২০ পয়সায়।

এছাড় উদ্যোক্তা পরিচালকদের চার কোটিরও বেশি শেয়ার লক ফ্রি হওয়ার খবরে ইন্দোবাংলা ফার্মা দর হারিয়েছে ৮.৮৭ পয়েন্ট।

লোকসানি কোম্পানি ইমাম বাটন ৮.৪৭, আরেক লোকসানি জিলবাংলা সুগার ৮.০৭, শেয়ার এক টাকা লভ্যাংশ ঘোষণার খবরে লাফ দেয়ার পর পতনমুখি ফারইস্ট নিটিং ৭.৭৯ শতাংশ, এক মাস ধরে ঊর্ধ্বমুখি এডভেন্ট ফার্মা ৭.৬৯ শতাংশ, ওরিয়ন গ্রুপের আরেক কোম্পানি ওরিয়ন ইনফিউশন ৭.৩০ শতাংশ, নতুন প্ল্যান্ট উৎপাদনে আসার খবরে উল্লম্ফনে থাকা জিপিএইচ ইস্পাত ৭.২৬ শতাংশ কমেছে।

ব্যাংক ছাড়া সব খাতের পতনের ভিড়ে সবচেয়ে বেশি বাজে দিন গেছে সিমেন্ট ও আর্থিক খাতে

এক বছরে শেয়ার দর তিন গুণের বেশি বেড়ে যাওয়ার পর পতনমুখি ফুওয়াং সিরামিক ৭.১৭ শতাংশ, অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির তদন্ত চলতে থাকা জিবিবি পাওয়ার ৭.০৯ শতাংশ, গত এক মাস ধরে তুমুল আলোচিত লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট ৬.৪৬, ওটিসি মার্কেট থেকে মূল মার্কেটে ফিরে ছুটতে থাকার পর এক মাস ধরে পতনের মুখে থাকা পেপার প্রসেসিং আরও ৬.৩৬ শতাংশ, দেড় বছর ধরে অস্বাভাবিক হারে দর বৃদ্ধি পাওয়া ঢাকা ডায়িং ৬.১৮ শতাংশ, দুই বছরে শেয়ার দর ১০ গুণ হয়ে যাওয়া বিকন ফার্মা ৬.১৮ শতাংশ, ছয় মাসে শেয়ার দর পাঁচ গুণ বেড়ে যাওয়ার পর পতনমুখি আনোয়ার গ্যালভানাইজিং ৬.০৪ শতাংশ দর হারিয়েছে।

আরও ১২টি কোম্পানি ৫ শতাংশের বেশি, আরও ২৯টি কোম্পানি ৪ শতাংশের বেশি, ৪৭টি কোম্পানি ৩ শতাংশের বেশি দর হারিয়েছে।

এত বেশি হারে কোম্পানির দরপতনের কারণেই মূলত সূচক কমেছে বেশি।

সূচক ও লেনদেন

ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৫৬ দশমিক ৮০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ১৮৬ দশমিক ৪৬ পয়েন্টে।

শরিয়াভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ২১ দশমিক ১১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৪৬ দশমিক ৩১ পয়েন্টে।

বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ১৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭০৫ দশমিক ১৩ পয়েন্টে।

দিনশেষে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা।

এ বিভাগের আরো খবর