বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দারিদ্র্য বিমোচনে ঈর্ষণীয় সাফল্য, করোনায় কিছুটা ম্লান

  •    
  • ১৭ অক্টোবর, ২০২১ ১১:৩২

খোদ বিশ্বব্যাংক বলছে, দারিদ্র্য বিমোচনে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এই দেশের দারিদ্র্য জয়ের গল্প এখন অনেক দেশেই শোনানো হয়। তবে করোনা মহামারির কারণে বাংলাদেশের দারিদ্র্য জয় করার গতি অনেকটা ধীর হয়ে পড়েছে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসে সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ পরিণত হতে চলছে উন্নয়নশীল দেশে। ব্যাপকহারে কমে এসেছে দারিদ্র্যহার। যদিও করোনাভাইরাস মহামারির কারণে অনেকটা থমকে গেছে এই ধারা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার ‘বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে যে তকমা লাগিয়েছিলেন, কয়েক দশকের মধ্যে সেই অপবাদ দূর করে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ এখন পরিচিতি লাভ করেছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে।

তবে এটা ঠিক, তখন এ দেশে দারিদ্র্য ভয়াবহ মাত্রায় ছিল। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৯০ শতাংশ। সেই বাংলাদেশে ২০১৯ সালে দারিদ্র্য কমে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে। আর চরম দারিদ্র্যের হার নেমেছে সাড়ে ১০ শতাংশে।

খোদ বিশ্বব্যাংক বলছে, দারিদ্র্য বিমোচনে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এই দেশের দারিদ্র্য জয়ের গল্প এখন অনেক দেশেই শোনানো হয়।

বর্তমান সরকারের অধীনে দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়নও হচ্ছে অনেক। উন্নত হয়েছে যোগাযোগব্যবস্থা। পুরোদমে এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল।

যোগাযোগব্যবস্থা অনেক সহজ হয়েছে। যোগাযোগব্যবস্থার কল্যাণে আয়-উপার্জনের নানা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানী ঢাকা থেকে জেলা শহর কুমিল্লা যাওয়াটা ঘণ্টা দুয়েকের ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। অথচ একসময় কুমিল্লা থেকে ঢাকা আসতে প্রায় সারা দিন লেগে যেত।

একসময় শুধু শহর এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল। গ্রামে বিদ্যুতের কথা চিন্তাই করা যেত না। এখন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। গ্রামে কাঁচা সড়ক পাকা হয়েছে। বিদ্যুতের কল্যাণে ঘরে ঘরে এসেছে টিভি-ফ্রিজ। গ্রামেগঞ্জে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়েছে। বেড়েছে শিক্ষার হার ও নারীর ক্ষমতায়ন।

গ্রামে অকৃষি খাতের বিকাশ ঘটেছে। গড়ে উঠেছে সেবা খাত। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক রেমিট্যান্সের প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। সব মিলিয়ে বদলে গেছে মানুষের জীবনধারা। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে।

মাথাপিছু আয়সহ অর্থনীতির অনেক সূচকে বাংলাদেশ এখন পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতকে টপকে গেছে। আর এসব সম্ভব হয়েছে দারিদ্র্যকে জয় করার কারণে।

চাদঁপুরের হাজীগঞ্জ থানার জেলে পরিবারের মেয়ে মাধবী একসময় গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন। শারীরিক অক্ষমতার কারণে তেমন কাজকর্ম করতে পারতেন না তার বাবা।

জীবিকার তাগিদে মাধবীদের তিন বোনই চাঁদপুর শহরে বিভিন্ন বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করেছিলেন। তবে ২০ বছর পর এখন তারা সেই অবস্থানে নেই। দিন বদলেছে, ভাগ্য ফিরেছে। তিন বোনই এখন পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। স্বামী-সন্তান নিয়ে তারা ভালোই আছেন।

তৈরি পোশাক খাতে বিপুলসংখ্যক কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে, যার বড় অংশ হচ্ছে নারী। পোশাক কারখানায় কাজ করে অনেকে দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছেন।

এ ছাড়া ধান, সবজি, ফল, মাছ উৎপাদনে অভাবনীয় উন্নতির কারণেও দারিদ্র্য বিমোচনে সফলতা এসেছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। মোবাইল সেবা এবং মোবাইল ব্যাংকিংও নতুন নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।

তবে বর্তমানে প্রেক্ষাপট ভিন্ন। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বাংলাদেশের দারিদ্র্য জয় করার গতি অনেকটা ধীর হয়ে পড়েছে। করোনার সময়ে বেকারত্ব বেড়েছে। কর্মহীন হয়েছেন প্রান্তিক মানুষ।

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তথ্যই বলেছে, করোনার কারণে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৪০ কোটি লোক নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে এসেছে।

সিপিডি, সানেমসহ বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা বলেছে, করোনার প্রাদুর্ভাবে নতুন করে প্রায় ৫ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমায় চলে এসেছে এবং এই হার ৪০ শতাংশের ওপরে।

যদিও এই পরিসংখ্যান নিয়ে বিতর্ক আছে। সরকারি পক্ষ থেকে এই তথ্য গ্রহণ করা হয়নি। সম্প্রতি এক সেমিনারে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) বলেছে, করোনায় নতুন দারিদ্র্য বেড়েছিল সত্য, তবে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ফলে দারিদ্র্যের হার কমে দাঁড়িয়েছে ২৫ শতাংশে।

দারিদ্র্য দূরীকরণে দেড় দশকে যা কিছু অর্জন, করোনার কারণে তা কিছুটা ম্লান হয়ে যেতে বসেছে। এমন বাস্তবতায় আজ রোববার পালিত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবস’।

জাতিসংঘের উদ্যোগে ১৯৯৩ সাল থেকে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালন করা হয়। দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও অসমতা দূর করাই দিবসটির মূল লক্ষ্য।

১৯৯৫ সালকে আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য দূরীকরণ বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করে জাতিসংঘ। এরপর থেকেই দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা দেশগুলোতে দারিদ্র্য ও বঞ্চনা দূরীকরণ বিষয়টি গুরুত্ব পেতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় গত কয়েক দশক ধরেই দারিদ্র্য মোকাবিলা করছে বাংলাদেশ।

এর মধ্যে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। এই বিবেচনায় বাংলাদেশের জন্য দিবসটি আলাদা তাৎপর্য বহন করে।

দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের সাফল্য সারা বিশ্বের জন্যই উদাহরণ দাবি করে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচনে সাফল্যের মূল কারণ প্রধানত প্রবৃদ্ধি। উচ্চ প্রবৃদ্ধির কারণে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কাজের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় দ্রুত দারিদ্র্য কমেছে।’

তিনি জানান, গ্রামে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হয়েছে। বিদ্যুৎব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। ফলে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছে। এ ছাড়া কৃষি উৎপাদন বেড়েছে যে কারণে ক্ষুধার্থ মানুষের সংখ্যা কমেছে।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কেবল আমরাই এই সাফল্যের কথা বলছি না। বিশ্বব্যাংকও এরই মধ্যে বাংলাদেশকে দারিদ্র্য হ্রাসের ক্ষেত্রে রোল মডেল হিসেবে ঘোষণা করেছে।’

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭২ সাল থেকে দেশে দারিদ্র্যের হার ক্রমে কমছে। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৭৮ শতাংশ। সবশেষ ২০১৯ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। দারিদ্র্য জয়ে বাংলাদেশ মাইলফলক স্থাপন করেছে বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়।

বাংলাদেশের এই অর্জন টেকসই ও পরিকল্পিত উন্নয়নের ফল বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়।

শুধু দারিদ্র্য নয়, অতি দারিদ্র্যের হার কমার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। ১৯৭২ সালে দেশে অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠী ছিল মোট জনসংখ্যার ৪৪ শতাংশ। সবশেষ ২০১৯ সালে অতিদরিদ্র বা চরম দারিদ্র্যের হার কমে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১০ শতাংশে।

গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশে ভালো করেছে। তবে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে: কোভিডের কারণে সারা বিশ্বে নতুন দারিদ্র্য সৃষ্টি হয়েছে। এদের কীভাবে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনা যায়, সে বিষয়ে কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, স্যানিটেশন-ব্যবস্থায় নজর দিতে হবে। নতুন নতুন কাজের সযোগ সৃষ্টি করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুধু জিডিপির প্রবৃদ্ধি হলে চলবে না। প্রবৃদ্ধির সুফল সবাই যাতে সমানভাবে পায়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। নজর দিতে হবে টেকসই উন্নয়নে।’

এমডিজি বা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ যথেষ্টই সফল। তবে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, কোভিড-১৯-এর আগে বাংলাদেশ যে গতিতে এগোচ্ছিল, তাতে এসডিজি অনুযায়ী ২০৩০ সালে দারিদ্র্যমুক্ত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা অনায়াসে অর্জন করে ফেলত। কিন্তু এখন সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর