বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

উত্তরবঙ্গ যাত্রার বাসস্টপ অজ্ঞান পার্টির ‘হটস্পট’

  •    
  • ১৬ অক্টোবর, ২০২১ ২৩:৪৩

দুপুরে বাসটি সিরাজগঞ্জের ফুড ভিলেজে যাত্রাবিরতি দেয়। তিনজন একসঙ্গে দুপুরের খাবার খান। খাওয়া শেষে দুই যুবকের একজন শরীফকে ডাব খাওয়ার প্রস্তাব দেন। যুবক নিজেও ডাব খেয়ে বলেন, বেশ ভালো খেতে পারেন। পরে ডাব খেয়ে বাসে ওঠেন ওমর শরীফ। এরপর আর কিছু জানেন না, কী হয়েছে। একদিন পর নিজেকে আবিষ্কার করেন হাসপাতালের বিছানায়। দুই যুবকসহ তার মালামাল গায়েব।

নাটোরের ওমর শরীফ লন্ডন থেকে ঢাকায় আসেন ৫ অক্টোবর ভোরে। গ্রামে যেতে উত্তরার আজমপুর এলাকায় দেশ ট্রাভেলসের বাস কাউন্টারে যান। সেখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসে সিট না পেয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে সেখানে আগে থেকে অবস্থান করা দুই যুবক শরীফকে পরিচয় দেন তারা মিশর থেকে এসেছেন, যাবেন নাটোরে।

মিশর থেকে আসা দুজন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের টিকিট না পেয়ে কল্যাণপুর যাবেন। শরীফকেও প্রস্তাব দেন একসঙ্গে কল্যাণপুর যাওয়ার।

পরে রাজি হলে একটি সিএনজিঅটোরিকশায় কল্যাণপুর যান। সেখানে দুই যুবকের একজন নিজের নামে কাউন্টার থেকে শরীফসহ তিনজনের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের টিকিট কেটে রওনা হন।

দুপুরে বাসটি সিরাজগঞ্জের ফুড ভিলেজে যাত্রাবিরতি দেয়। তিনজন একসঙ্গে দুপুরের খাবার খান। খাওয়া শেষে দুই যুবকের একজন শরীফকে ডাব খাওয়ার প্রস্তাব দেন। যুবক নিজেও ডাব খেয়ে বলেন, ‘বেশ ভালো খেতে পারেন।’

পরে ডাব খেয়ে বাসে ওঠেন ওমর শরীফ। এরপর আর কিছু জানেন না, কী হয়েছে। একদিন পর নিজেকে আবিষ্কার করেন হাসপাতালের বিছানায়। দুই যুবকসহ তার মালামাল গায়েব।

শরীফের সঙ্গে থাকা ব্যাগগুলো বাসের বক্সে রাখা হয়েছিল ওই টিকিটের অধীনে। যা দুই যুবকের একজনের নামে করা। এ ঘটনায় নাটোরের বড়াইগ্রামে মামলা করেন ওমর শরীফ।

শুধু ওমর শরীফ নন, এ ধরনের শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে একই কৌশলে অজ্ঞানের পর লুট করা হয়েছে মালামাল।

রাজধানীর উত্তরা ও বিমানবন্দর কেন্দ্রিক এমন অজ্ঞানপার্টির সক্রিয় চক্রের সদস্যদের সন্ধানে দীঘদিন ধরেই কাজ করছিল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

গত ৭ অক্টোবর মিশরফেরত লিটন সরকার নামে এক যুবকের মালামাল লুটের ঘটনায় চক্রের হোতা আমির, আপেল ও শামীমকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশের উত্তরা বিভাগ। শনিবার তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার শামীমের বাড়ি বরিশালের গৌরনদীতে এবং আপেল ও আমিরের বাড়ি জামালপুরে। তাদের চক্রে আরও সদস্য রয়েছে। তাদেরকেও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের ডিবি জানায়, তারা উত্তরবঙ্গগামী যাত্রীদের টার্গেট করে ফুড ভিলেজে নিয়ে কৌশলে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুটে নিত।

ডিবি জানায়, গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের বাসিন্দা লিটন সরকার ৭ অক্টোবর সকালে টার্কিস বিমানে ঢাকায় আসেন। এরপর সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বিমানবন্দরের সামনে ফুটওভার ব্রিজের পাশে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এসময় কয়েকজন ব্যক্তি তার কাছে এসে গন্তব্য সম্পর্কে জানতে চায়। মাইক্রোবাসে পৌঁছে দেয়ার অফার দেন।

লিটন এ সময় প্রয়োজন নেই জানালে তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে প্রায় আড়াই লাখ টাকার মালামাল লুটে নেয় অজ্ঞাতপরিচয় ৪-৫ জন। ওই ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় মামলা করেন লিটন।

মামলার তদন্তের এক পর্যায়ে ডিবির বিমানবন্দর জোনাল টিম এই চক্রের সদস্যকে চিহ্নিত করে। শনিবার তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা মূলত অজ্ঞানপার্টির সদস্য বলে স্বীকার করেন।

লিটন তাদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় লুটের পথে পা বাড়ান বলে জানায় চক্রের সদস্যরা।

সে দিন নেশা করার জন্য তাদের টাকার বেশি প্রয়োজন ছিল বলেও স্বীকার করেন।

অজ্ঞানপার্টির বিষয়ে জানতে চাইলে তারা চলতি মাসের ৫ তারিখ ওমর শরীফের ঘটনা জানান। এরপর গোয়েন্দা পুলিশ নাটোরের বড়াইগ্রাম থানায় মামলার খুঁজে পান।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়, নাটোরের বড়াইগ্রাম পৌঁছানোর আগের একটি বাস স্টপে নেমে যায় ওই চক্রের সদস্যরা। নেমে যাওয়ার সময় ওমর শরীফকে বড়াইগ্রাম নামিয়ে দেয়ার জন্য বাসের সুপারভাইজারকে অনুরোধ করেন। বড়াইগ্রাম আসার পর ওমর শরীফকে নামার জন্য ডাক দেয়া হলে তাকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। এরপর পুলিশের সহায়তায় তাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করায় বাসের লোকজন।

ওই ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ। একপর্যায়ে সিরাজগঞ্জের এক এসআইয়ের সঙ্গে অজ্ঞানপার্টির দুই সদস্যদের কথা বলার প্রমাণ পাওয়া যায়। এরপর ওই এসআইকে অজ্ঞাসপার্টির সদস্য মনে করে তুলে আনে বড়াইগ্রাম পুলিশ। নিজেকে পুলিশ পরিচয় দেয়ার পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। এরপর দেখা যায় আরও একটি অজ্ঞানের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওই এসআই।

তিনি তাদের গ্রেপ্তারের জন্য ছদ্মবেসে কথা বলছিলেন। বিষয়টি প্রমাণের পর এসআইয়ের কাছে ক্ষমা চান বড়াইগ্রাম থানার ওসি।

সিরাজগঞ্জের ওই মামলাতেও এই তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানোর কথা জানায় ডিবি।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার এই তিনজনের নামে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ডজন খানেক মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। যার বেশিরভাগই অজ্ঞানপার্টি সংশ্লিষ্ট।

গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘‘তারা এ পর্যন্ত শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে মালামাল লুট করেছেন। বিমানবন্দর থেকে টার্গেট করে ব্যক্তির পিছু নিয়ে তারা গাড়িতে ওঠেন। উত্তরবঙ্গের কোনো এক স্থানে গিয়ে অজ্ঞান করে মালামাল লুটে নেন। মূলত ঢাকায় উত্তরবঙ্গগামী বাসস্টপেজগুলো অজ্ঞান পার্টির ‘হটস্পট’।’’

অজ্ঞানপার্টির সদস্যদের ধরতে জেলা পুলিশের পাশাপাশি ঢাকার দক্ষ পুলিশ সদস্যরাও ঢাকার বাইরে অভিযান শুরু করেছে। যার বেশিরভাগই উত্তরবঙ্গকেন্দ্রীক বলে জানান ডিবির কর্মকর্তা।

এ বিভাগের আরো খবর