বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘ঐক্যবদ্ধ বাঙালিকে বিভাজিত করেছে রাষ্ট্রধর্ম’

  •    
  • ১৬ অক্টোবর, ২০২১ ২০:০২

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘সংখ্যালঘুরা কেমন আছে আপনারা খবর নেন। আমি সংখ্যালঘু বলছি কারণ তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সংখ্যালঘু করা হয়েছে। সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম সংযোজন ঐক্যবদ্ধ বাঙালির মধ্যে বিভাজন তৈরি করেছে।’

দেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানদের ‘রাষ্ট্রীয়ভাবে সংখ্যালঘু’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত।

তিনি বলেছেন, ‘সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম সংযোজন ঐক্যবদ্ধ বাঙালির মধ্যে বিভাজন তৈরি করেছে।’

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে শনিবার দুপুরে লিখিত বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন।

রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে আজ আর উড়িয়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা মনে করি ও বিশ্বাস করি, এর সবটাই পরিকল্পিত যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে একদিকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক পরিসরে নষ্ট করা, অন্যদিকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারায় অগ্রসরমান উন্নতিকে ব্যাহত করা।

‘সেই সঙ্গে বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দেশ থেকে বিতাড়িত করে গোটা দেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করা।’

তিনি আরও বলেন, ‘সংখ্যালঘুরা কেমন আছে আপনারা খবর নেন। আমি সংখ্যালঘু বলছি কারণ তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সংখ্যালঘু করা হয়েছে।’

আগামী শনিবার ভোর ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত সারা দেশে গণঅনশন ও গণঅবস্থান এবং সাম্প্রদায়িক হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দেন রানা দাশগুপ্ত। ঢাকায় এ কর্মসূচি পালন করা হবে শাহবাগ চত্বরে আর চট্টগ্রামে আন্দরকিল্লা চত্বরে।

তিনি বলেন, ‘আমরা এ ধরনের পরিস্থিতিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স ঘোষণার যথাযথ বাস্তবায়ন এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চক্রান্ত প্রতিরোধে সর্বস্তরের জনগণের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাই।’

রানা বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারিতে গত বছর সারা দেশে দুর্গোৎসব উদযাপিত হয়নি। আমরা আশা করেছিলাম, এবার সংক্রমণ যখন সহনীয় পর্যায়ে তখন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দুর্গাপূজার আয়োজন করলে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার সম্মিলনে উৎসবে পরিণত হবে।

‘সব আনন্দ ম্লান হয়ে গেল মহাষ্টমীর দিন ১৩ অক্টোবর সকাল ১১টায় কুমিল্লা নগরীর নানুয়ার দিঘির উত্তর পাড়ে দর্পণ সংঘের অস্থায়ী পূজামণ্ডপ, চানমনি কালীবাড়ির বিগ্রহ ও ফটকে অগ্নিসংযোগ এবং ১৭টি পূজামণ্ডপের তোরণ ভেঙে দেয়ার মধ্যে দিয়ে। ধর্ম অবমাননার মিথ্যা জিকির তুলে সেই যে পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক হামলা শুরু হলো তা একনাগাড়ে চলে ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমী পর্যন্ত।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ১৩ অক্টোবর কুমিল্লার ঘটনা ছাড়াও হাজীগঞ্জে ত্রিনয়নী সংঘের পূজামণ্ডপ, লক্ষ্মী-নারায়ণজী আখড়ার গেট ভেঙে ফেলা হয়েছে। রামকৃষ্ণ মিশন, জমিদারবাড়ি দুর্গামন্দির, শ্মশান কালী মন্দির, নবদূর্গা সংঘ পূজামন্ডপ, দশভূজা সংঘ পূজামণ্ডপ, সোনাইমুড়ী গ্রামের পূজামণ্ডপ, হাজীগঞ্জ শহর পূজামন্ডপ, রামপুর লোকনাথ মন্দির, ভদ্রকালী মন্দির, ত্রিশুল সংঘ পূজামণ্ডপ, রামপুর বলক্ষার বাজার দূর্গামণ্ডপ, হাজীগঞ্জ নোআবদা রাধাগোবিন্দ মন্দির, বাজারগাও মুকুন্দ সাহার বাড়ির দুর্গামন্দির, হাটিলা গঙ্গানগর দুর্গামন্দিরে আক্রমণ চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। লক্ষ্মী-নারায়ণজী আখড়ায় আক্রমণ চলাকালে মানিক সাহা নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। একই দিন হাতিয়ার সাতটি মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে।’

রানা জানান, ভাঙচুর করা মন্দিরগুলো হলো শংকর মার্কেটের আশুতোষ ডাক্তার বাড়ির পূজামণ্ডপ, জগন্নাথ মহাপ্রভুর সেবাশ্রম পূজামণ্ডপ, রাধাগোবিন্দ সেবাশ্রম পূজামণ্ডপ, শ্রী লোকনাথ মন্দির পূজামণ্ডপ, তপোবন আশ্রম পূজামণ্ডপ, গুরুচাঁদ সত্যবামা পূজামণ্ডপ, হাতিয়া পৌরসভা কালী মন্দির ও এর সঙ্গে ৪ থেকে ৫টি ঘরও ভাঙচুর করা হয়েছে। মহা অষ্টমীর দিন লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি সীতারাম ঠাকুর সেবাশ্রম, গাজীপুরের কাশিমপুরে সুবল দাসের সেবাশ্রম, মন্দির ও কাশিমপুর বাজার কালী মন্দির দুর্বৃত্তরা ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে।

একই দিন কুড়িগ্রামের উলিপুর, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, হবিগঞ্জের বাহুবল, সিলেটের জকিগঞ্জের কালিগঞ্জ বাজার, ভোলার নবীপুরে বেশ কয়েকটি মন্দির, পূজামণ্ডপে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।

রানার অভিযোগ, ওইদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার শেখেরখীল, নাপোড়া গ্রামে হামলার নেতৃত্ব দেয় সাবের আহমেদ, মো. বিদোয়ান, শামসুল ইসলাম। এদের বাড়ি শেখেরখীল, গণ্ডামারা, নাপোড়ায়। তাদের হামলায় শেখেরখীল সর্বজনীন মন্দির ধ্বংস হয়েছে। হরি মন্দিরের সামনের সড়কের ২০টি হিন্দু সম্প্রদায়ের দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘হামলায় গুরুতর আহত হয়ে সুকুমার দাস চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ছাড়া হামলায় আরও আহত হয়েছেন সমীর দেব, দুলাল দেব, জুয়েল শীল ও লিটন দেব।

‘শেখেরখীল সর্বজনীন মহাশ্মশানের সীমানা প্রাচীর ও মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে। নাপোড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সর্বজনীন কালীবাড়ি। নাপোড়া বাজার থেকে কালীমন্দির পর্যন্ত সড়কে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় ৩০টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। হামলায় গুরুতর আহত হয়ে জহুলাল দেব নামে একজন ডুলাহাজরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ছাড়া রতন শিকদার, আশুতোষ দেব, অনুপম দেব, জগদীশ পাল, বোটন দেব আহত হয়ে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।’

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘পশ্চিম চাম্বল বাংলাবাজার করুণাময়ী কালীবাড়ি সর্বজনীন পূজা কমিটির দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুরসহ মন্দিরের যাবতীয় তৈজসপত্র লুটপাট করেছে দুর্বৃত্তরা। এতে প্রদীপ দাস, রঞ্জিত দাস, সবিতা বালা আহত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। শীলকূপে দুর্বৃত্তরা দাস পাড়া সর্বজনীন দুর্গা পূজামণ্ডপ, কৈবল্য যুব সংঘ পূজামণ্ডপ ও শীলপাড়া পূজামণ্ডপে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে।

‘স্থানীয় সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার রশিদুল হক ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইয়াসিন তালুকদার দুর্বৃত্তদের হামলা প্রতিরোধে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছেন।’

রানার অভিযোগ, ‘১৩ অক্টোবর রাতে কক্সবাজার পেকুয়া উপজেলার শীলখালীর দুটো পূজামণ্ডপের প্রতিমা ও স্থানীয় হরি মন্দিরে লুটপাট ও ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া তারা ১৬টি ঘরে লুটপাট ও ভাঙচুর চালায়। মগনামা ইউনিয়নের ১২টি ঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট এবং ১টি ঘরে আগুন দেয়া হয়েছে। স্থানীয় সরস্বতী মন্দিরের দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া পেকুয়া সদর ইউনিয়ন, বারবাকিয়া ইউনিয়ন ও চকরিয়ার ৫টি পূজামণ্ডপ এবং স্থানীয় লোকনাথ মন্দির লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়েছে।

‘মহা নবমীর দিন ১৪ অক্টোবর বান্দরবানের লামা উপজেলার লামাবাজারের কেন্দ্রীয় হরিমন্দির দূর্গা পূজামন্ডপে হামলা চালিয়ে মূর্তি ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। এই হামলায় আনুমানিক ৫০ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত ১০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ৮ জনকে ভর্তি করা হয়েছে জেলা হাসপাতালে।’

অভিযোগে রানা আরও বলেন, ‘এই দিন সন্ধ্যার পর চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্দর থানার কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাশে জুলদা জেলেপাড়া পূজামণ্ডপে স্থানীয় জয়বাংলা ক্লাবের একদল সশস্ত্র লোক ইলিয়াস মেম্বার, জয়নাল ও মনিরের নেতৃত্বে হামলা চালায়। জয়নাল ও মনির সম্প্রতি বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে। স্থানীয় থানার ওসি দুলাল মাহমুদ হামলার পরিকল্পনা আগে থেকে জানলেও তা প্রতিরোধে তাদের কোনো ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। এই একই দিনে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলা সর্বজনীন দুর্গামন্দির ও হরিমন্দিরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় দুর্বৃত্তরা।’

খুলনার রূপসা মহাশ্মশান ও শ্মশান কালীমন্দির থেকে ১৪ অক্টোবর ১৮টি বোমা উদ্ধার করে র‍্যাব। পরে এগুলো যশোর সেনানিবাসে নিষ্ক্রিয় করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওইদিন এক ভাষণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মনোবল বৃদ্ধি পায়।

রানা বলেন, ‘এরপরও ১৫ অক্টোবর নোয়াখালীর চৌমুহনীতে ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে আবারও হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। চৌমুহনীতে হামলায় রাধামাধব মন্দির, ইসকন মন্দির, রাম ঠাকুর মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মঙ্গলা পূজামণ্ডপ, রাম ঠাকুর পূজামণ্ডপেও তারা হামলা চালায়। বিজয় পূজামণ্ডপের সদস্য যতন সাহাকে তারা পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। ইসকন মন্দিরের প্রভু মলয় কৃষ্ণ দাসের মাথায় আঘাত করে তাকে নির্মমভাবে খুন করেছে। আজ সকালে মন্দিরের সামনের পুকুরে এক ভক্তের লাশ ভেসে উঠতে দেখা গেছে।

‘চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় তারা বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির জে এম সেন হলের পূজামন্ডপে হামলা চালায় ও এর তোরণ ভেঙে ফেলে। এ ছাড়া হাজারী গলি, দেওয়ানজী পুকুর পাড়, রাজাপুকুর লেনেও হামলা চালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।’

এ বিভাগের আরো খবর