ইয়াবার পর বাংলাদেশে অবৈধ দামি মাদক ক্রিস্টাল মেথের (আইস) বাজার ধরতে নতুন কৌশল নিয়েছে মিয়ানমারের মাদক কারবারিরা। বাংলাদেশের মাদক কারবারিদের উৎসাহিত করতে অগ্রিম টাকা ছাড়াই আইসের চালান পাঠিয়ে দিচ্ছে তারা।
চালান নিরাপদে বাংলাদেশের মাদক কারবারির হাতে পৌঁছানোর পরই তারা টাকা নিচ্ছে। আইসের চালান যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধরে ফেলে, তাহলে এর দামও নেয় না মিয়ানমারের কারবারিরা।
এই কৌশলের কারণে সম্প্রতি আইসের চাহিদা ও সরবরাহ বেড়েছে বাংলাদেশে। প্রায়ই ধরা পড়ছে মাদকটির ছোট ছোট চালান৷
তবে র্যাবের অভিযানে আইসের সবচেয়ে বড় চালানটি ধরা পড়েছে শনিবার। এদিন ভোরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে প্রায় পাঁচ কেজি ওজনের আইস জব্দ করেছে বাহিনীটি। বিদেশি অস্ত্র ও গুলিসহ টেকনাফ আইস সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা হোছেন খোকন ও তার সহযোগী মোহাম্মদ রফিককে গ্রেপ্তারের কথাও জানিয়েছে র্যাব।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে বাহিনীটি। সেখানে আইসের ব্যবসা ও এর সিন্ডিকেট সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে মাদক কারবারের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা অবৈধভাবে নৌপথ ব্যবহার করে মিয়ানমারে গিয়ে সেখানকার মাদক কারবারিদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলছে। মিয়ানমারের কারবারিরাও বাংলাদেশের কারবারিদের যুক্ত করতে বিভিন্ন ধরনের কৌশল নিয়েছে।
‘আইসের চালান যদি বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে, তাহলে মিয়ানমারের কারবারিরা তার দাম নেয় না। নিরাপদ গন্তব্যে পৌঁছানোর পর হুন্ডির মাধ্যমে আইসের চালানের দাম পাঠানো হতো মিয়ানমারে। কখনও চায়ের প্যাকেটে, কখনও আচারের প্যাকেটে করে নানা কৌশল ব্যবহার করে আনা হয় আইস।’
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া পাঁচ কেজি আইস। ছবি: নিউজবাংলা
র্যাবের এই মুখপাত্র জানান, গ্রেপ্তার খোকন নৌপথে নিয়মিত মিয়ানমার যেতেন। তিনি ও তার সহযোগী পাঁচ বছর ধরে ইয়াবা কারবারে সঙ্গে জড়িত। তবে বেশি লাভের কারণে কয়েক মাস ধরে আইসের কারবারে জড়িয়ে পড়েন তারা। খোকন টেকনাফকেন্দ্রিক মাদক কারবারে জড়িত সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘এই সিন্ডিকেটে ২০ থেকে ২৫ জন রয়েছে। প্রথমে সেন্ট মার্টিনের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকার সমুদ্রপথ দিয়ে মাদকের চালান মিয়ানমার থেকে টেকনাফ নিয়ে আসে খোকন। সেখান থেকে অটোরিকশার চালকের ছদ্মবেশে থাকা রফিক মাদকটি এনে তার বাসায় প্রাথমিকভাবে রাখত। পরে ছোট ছোট ভাগে সেগুলো চট্টগ্রামে পাঠানো হতো। সুযোগমতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হতো মাদকের চালান।’
তিনি বলেন, ‘রাজধানীর গুলশান, বনানী, মিরপুর, মোহাম্মদপুরকেন্দ্রিক আইসের চাহিদা তৈরি হয়েছে। এর পেছনে একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে। ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সারা শহরে সরবরাহের জন্যই আইসের এই বড় চালানটি নিয়ে আসা হয়। চালানটি দেয়ার পর তারা টাকা সংগ্রহ করত। তবে এর আগেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে জড়িতরা।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আমরা এই সিন্ডিকেটের অনেকের নাম পেয়েছি। এদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালানো হবে।’
গ্রেপ্তার খোকনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা চলছে বলেও র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন।