গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাশিমপুর এলাকায় প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় ৬০০ জনকে আসামি করে তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ২০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ১৮ জনকে পাঠানো হয়েছে রিমান্ডে।
গাজীপুর মহানগর হাকিম আদালত শুক্রবার দুপুরে আসামিদেরকে দুই দিনের রিমান্ড আদেশ দেন বলে নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবে খোদা।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালের দিকে কাশিমপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন স্থানীয় সুবল চন্দ্র দাসের বাড়িতে স্থাপিত দুর্গাপূজার মণ্ডপ, শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দির ও পালপাড়া নামাবাজার এলাকার একটি মন্দিরে ভাঙচুর হয়।
কাশিমপুর থানার ওসি মাহবুবে খোদা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে কাশিমপুর বাজারের শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কাশিমপুর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বাবুল রুদ্র, কাশিমপুর পশ্চিমপাড়া এলাকার পারিবারিক মন্দির পরিচালনাকারী সুবল চন্দ্র দাস ও পালপাড়া নামাবাজার এলাকার সার্বজনীন পুজা উদযাপন কমিটির সভাপতি পরিমল পাল বাদী হয়ে তিনটি মামলা করেন। প্রতিটি মামলায় অজ্ঞাত ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়।
দুটি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাশিমপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তানভীর আহমদ বলেন, ‘শুক্রবার সকালে আদালতে গ্রেপ্তার ২০ জনের মধ্যে ১৮ জনের সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করলে বিচারক দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অন্য দুইজনকে ঘটনার দিন আহত অবস্থায় আটক করা হয়েছিল। তারা সুস্থ হলে পরে তাদেরও রিমান্ড চাওয়া হবে।’
কাশিমপুর বাজারের পালপাড়া শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কাশিমপুর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বাবুল রুদ্র জানান, বৃহস্পতিবার সকালে পূজারীরা মন্দিরে পূজা-অর্চনা করছিলেন। সকাল ৭টার দিকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই কয়েক শ লোক লাঠিসোটা নিয়ে শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দিরে ঢুকে হামলা চালায়। তারা লক্ষী ও অসুরের প্রতিমা ভাঙচুর করে চলে যায়।
একই দিন সকাল সাড়ে ৬টার দিকে দেড় থেকে দুইশ লোক কাশিমপুর পশ্চিমপাড়া এলাকার সুবল চন্দ্র দাসের পারিবারিক মন্দিরে এবং স্থানীয় পালপাড়া নামাবাজার সার্বজনীন মন্দিরে হামলা চালায়। এসময় হামলাকারীরা প্রতিমাসহ মন্দিরে থাকা শব্দযন্ত্র ভেঙে চলে যায়।
এতে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হামলার সময় ২০ জনকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন স্থানীয়রা।
মন্দিরে হামলার ঘটনায় বৃহস্পতিবার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম ও গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার জাকির হাসান (অপরাধ) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে একটি চক্র মন্দিরে ভাঙচুর চালিয়েছে। তারা কোনোভাবেই ধার্মিক মানুষ হতে পারেন না।’
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মো. জাকির হাসান (অপরাধ) জানান, আটক হামলাকারীদের মধ্যে ১৬ জনই স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং সার্ভিস লিমিটেড ও স্ট্যান্ডার্ড স্টিচেস লিমিটেডে কর্মরত। তাদেরকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের পর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।
এ ঘটনায় জড়িত বাকিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে বলেও জানান তিনি।