বাবা পেশায় কাঠমিস্ত্রি। পরিবারে অভাবের সঙ্গে লড়াই প্রতিদিন। এ কারণে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই বাবার সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন মোস্তাকিম। সব বাধা পেরিয়ে এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় একটি ইউনিটে প্রথম হয়েছেন তিনি।
মোস্তাকিম আলীর বাড়ি রাজশাহীর তানোর উপজেলার বাঁধাইড় মিশনপাড়া গ্রামে। রাবির এবারের ভর্তি পরীক্ষায় ‘বি’ ইউনিটের তৃতীয় শিফটে ৮০ দশমিক ৩০ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পরেও মোস্তাকিম কাঠমিস্ত্রির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির জন্য ভর্তি পরীক্ষার ১৫ দিন আগে কাজে বিরতি দেন।
১১ অক্টোবর মধ্যরাতে ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়। এরপর থেকেই আনন্দের বন্যা বইছে তার পরিবারে। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সবাই অভিনন্দন জানাচ্ছেন তাকে।
মোস্তাকিমের বাবা শামায়ুন আলী পেশায় কাঠমিস্ত্রি। মা জোসনা বেগম গৃহিণী। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। অভাবের সংসারে মেজ ভাই আজিজুল হককে পড়াতে পারেননি বাবা। বাল্যকাল থেকেই তিনি বাবার সঙ্গে কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন। ছোট বোন ফাহিমা খাতুন মুণ্ডুমালা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তবু অনেক কষ্টে দুই ছেলে-মেয়েকে পড়াচ্ছেন শামায়ুন আলী।২০১৭ সালে মুণ্ডুমালা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৪ দশমিক ৫৫ পেয়ে পাস করেন মোস্তাকিম।
২০২০ সালে তানোরের ফজর আলী মোল্লা ডিগ্রি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৪ দশমিক ৮৩ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন তিনি।
পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আদিনা ফজলুল হক ডিগ্রি কলেজে ইংরেজিতে অনার্সে ভর্তি হন মোস্তাকিম। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আশা ছাড়েননি তিনি। এইচএসসিতে মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিয়ে বসেন রাবির ভর্তি পরীক্ষায়।মোস্তাকিম বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোনো প্রকার কোচিং বা স্পেশাল প্রাইভেট পড়িনি। তবে স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। অনলাইনে কিছু ভর্তি প্রস্তুতির লেকচার পেয়েছি। সেগুলো অনুশীলন করে নিজেকে তৈরি করেছি।’তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই বাবার সঙ্গে কাঠমিস্ত্রির কাজ করে আসছি। দিনে কাজ করলেও রাতে পড়াশোনা করেছি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার ১৫ দিন আগে কাজে বিরতি দিয়েছি। যেমনটা চেয়েছিলাম তার চেয়ে বেশি ভালো ফল পেয়েছি।’
মোস্তাকিম বলেন, ‘এখন নিজেকে করপোরেট চাকরির উপযোগী করে গড়ে তুলতে চাই। পরিবার, সমাজ এমনকি রাষ্ট্রের উন্নয়নে অবদান রাখতে চাই।’ছেলের সফলতায় উচ্ছ্বসিত শামায়ুন আলী।
তিনি বলেন, ‘পড়ালেখার প্রতি ছোটবেলা থেকেই মোস্তাকিমের প্রখর আগ্রহ ছিল। কষ্ট হলেও সে পড়ালেখা বন্ধ করেনি। সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে নিজেকে এগিয়ে নিতে। স্কুল ও কলেজের শিক্ষকরাও তার প্রতি বেশ আন্তরিক ছিল। তাদের সঠিক নির্দেশনায় লেখাপড়া করায় এমন সাফল্য পেয়েছে মোস্তাকিম। তার সাফল্যে আমি গর্বিত।’