বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কুমিল্লায় হিন্দু-মুসলমান সবাই ব্যথিত

  •    
  • ১৫ অক্টোবর, ২০২১ ২১:৩৬

মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অচিন্ত্য দাশ টিটু বলেন, ‘আজ আমরা হিন্দু-মুসলমান সবাই ব্যথিত। কারা এমন করল? কেন এমন করল? আমাদের বিশ্বাস, আসল অপরাধী ধরা পড়বে।’

প্রতিবছর উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা উদযাপন করেন কুমিল্লার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। তবে এ বছরের চিত্র ভিন্ন।

ম্লান হয়ে গেছে পূজার আনন্দ। অন্য ধর্মের মানুষের মনেও বিষাদের ছায়া। সবার মনে কাজ করছে আতঙ্ক।

কুমিল্লা নগরীর চকবাজার এলাকায় থাকেন অশোক রায়। পূজার সময় ঢাক বাজিয়ে বাড়তি আয় করেন।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভাই, কী কমু? মনডা ভালো নাই। হেদিনের পর থাইক্কা আর ঢোল বাজাই না। আমার ৪৬ বছর বয়সে আমি এমন কাণ্ড কোনো সময় দেহি নাই। আমার ঢাকের পর্দা কুপিয়ে ছিঁড়ে ফেলেছে।’

গত বুধবার কুমিল্লা নগরীর নানুয়ার দিঘির উত্তর পাড়ের একটি পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ পাওয়ার অভিযোগ তোলার পর শহরে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন করা হয় পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির বিপুলসংখ্যক সদস্য।

আলোচিত ওই মণ্ডপের পূজার আয়োজকরা জানান, সেখানে পবিত্র কোরআন শরিফ কী করে এলো, সে বিষয়ে তাদের কোনো ধারণা নেই। বুধবার সকালে বিষয়টি পূজারিদের নজরে আসে। এর আগে গভীর রাত পর্যন্ত পূজা উদযাপন শেষে মণ্ডপটি জনশূন্য ছিল।

এ ঘটনার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বেশ কয়েক জেলায় মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি। চাঁদপুরের একটি উপজেলায় ১৪৪ ধারাও জারি করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ জানান, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪০ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৯ জনকে পাঠানো হয়েছে কারাগারে।

মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অচিন্ত্য দাশ টিটু বলেন, ‘আজ আমরা হিন্দু-মুসলমান সবাই ব্যথিত। কারা এমন করল? কেন এমন করল? আমাদের বিশ্বাস, আসল অপরাধী ধরা পড়বে।’

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক নির্বাহী সদস্য ও ক্রীড়া সংগঠক বদরুল হুদা জেনু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সম্প্রীতির কুমিল্লায় এমন দাঙ্গা এক অশনিসংকেত। কুমিল্লার যারা সাবেক জেলা প্রশাসক, তারাও ফোন করে খবর নিয়েছেন। আমরা চাই যারা এ ঘটনার পেছনে আছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।’

কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল হাসানাত বাবুল বলেন, ‘এ ঘটনা আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর কলঙ্ক লেপে দিল। আমরা শোকাহত। যে কুমিল্লাকে নিয়ে আমরা গর্ব করতাম, সেখানে এমন ঘটনা নজিরবিহীন।’

নগরের দেয়ালে ছবি এঁকে রাঙিয়ে তুলেছিলেন তরুণ শিল্পী জুনায়েদ মোস্তফা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সাবেক ছাত্র জুনায়েদ বলেন, ‘শহরটাকে ক্যানভাস বানিয়ে আমি স্বপ্ন এঁকে যাই। আজ এই নগর সাম্প্রদায়িকতার বিষে নীল হয়ে উঠছে। যেকোনো উৎসব আমরা কুমিল্লাবাসী এক হয়ে উদযাপন করতাম। এবার কী হলো বুঝতে পারছি না।’

মন ভালো নেই রিকশাচালকদেরও। বুধবার থেকে শহরে মানুষের যাতায়াত কমে গেছে।

রিকশাচালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঝামেলার লাইগ্যা এ বছর আর পূজাডা জমল না। আমার জন্মের ৪০ বছরেও কোনো সময় দেখছি না কেউ মূর্তির পায়ের কাছে কোরআন শরিফ রাহে। আবার এইডাও দেখছি না কুমিল্লায় পূজার সময় মূর্তি ভাঙা হয়।’

কুমিল্লা ইমাম সমিতির সভাপতি ও মুন্সেফবাড়ী জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মিজানুর রহমান বলেন, ‘পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনায় আমাদের মনে কষ্ট হয়েছে। আবার এ ঘটনার জেরে যারা প্রতিমা ভাঙচুর করেছে, এটাও আমাদের কষ্ট দিয়েছে। আমরা এমন কুমিল্লা চাই না।’

এ বিভাগের আরো খবর