বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা-পাথরঘাটা আঞ্চলিক সড়কের এক কিলোমিটার সড়কের অবস্থা বেহাল। নির্মাণের পর ১১ বছর সংস্কার না করায় যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, হেঁটে চলারও অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সড়কটি। এতে বছরের পর বছর চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এ এলাকার বাসিন্দাদের।
উপজেলার সঙ্গে কালমেঘা ইউনিয়নে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম পাথরঘাটা-কালমেঘা আঞ্চলিক সড়কটি ২০০৮ সালে পাকা করা হয়। চার কিলোমিটার সড়কের মধ্যে পাথরঘাটা সেতুর উত্তর পার থেকে দক্ষিণ ঘুটাবাছা পর্যন্ত দুই কিলোমিটার বরগুনা সড়ক জনপথ বিভাগের আওতাধীন। সওজ ওই বছরই সড়কের ওই দুই কিলোমিটার পিচঢালাই করে।
তবে এলজিইডির আওতায় থাকা ঘুটাবাছা থেকে কাঞ্চুরবাজার পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়ক পাকা করার কাজ অর্ধেকটা করার পর থেমে যায়। ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংসদ সদস্য গোলাম সবুর টুলু সড়কের বাকি আধা কিলোমিটার অংশ পাকা করে নির্মাণকাজ শেষ করেন।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, নির্মাণের পাঁচ বছর পরই সড়কটির দুই পাশের ইট দেবে মাঝখানটা উঁচু হয়ে যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে ইট উঠে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়। এতে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়লে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এখন তাদের তিন কিলোমিটার বিকল্প পথ ঘুরে উপজেলায় যাতায়াত করতে হচ্ছে।
এলাকার বাসিন্দা মিল্টন চন্দ্র বলেন, ‘আমরা কপাল পোড়া। এই রাস্তাটি পার হয়ে গোলাম সরওয়ার হিরু, প্রয়াত এমপি গোলাম সবুর টুলু ও বর্তমান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি নাদিরা সবুরের বাড়ি যেতে হয়।
‘অথচ এই এক কিলোমিটার সড়কের কাজ কেউ করছেন না। গ্রামগঞ্জের আনাচকানাচের রাস্তায় পিচ হয়ে গেছে, আর এই মেইন রাস্তার ইট ভাঙা।’
কাঞ্চুরবাজারের ব্যবসায়ী এমাদুল হোসেন বলেন, ‘সড়কটি সংস্কার না হওয়ায় কাঞ্চুরবাজার ও কালমেঘার দুটি বাজারের ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছে। বছরের পর বছর সড়কটি অচল থাকলেও আমাদের এলাকার জনপ্রতিনিধিরা মাত্র এক কিলোমিটার রাস্তার কাজ করতে পারছেন না। কেন তারা ব্যর্থ হচ্ছেন আমরা বুঝি না।’
কালমেঘা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম নাসির বলেন, ‘উপজেলার কালমেঘায় বিষখালী নদীর তীরে বেড়িবাঁধে ব্লক স্থাপনের পর এলাকাটি পর্যটন জোনে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া কালমেঘা বাজার, কাঞ্চুরবাজার, কালমেঘা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও হাসপাতাল এই এলাকায় হওয়ায় যাতায়াতের জন্য সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করেছি, যাতে সড়কটি সংস্কার করা হয়।’
কালমেঘা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যালয়টি ছাড়া আরও চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের জন্য একমাত্র নির্ভরযোগ্য সড়ক এটি। আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এই সড়কে চলাচল করতে না পেরে বাধ্য হয়ে তিন কিলোমিটার বিকল্প পথ ঘুরে যাতায়াত করছে।’
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর পাথরঘাটা উপজেলা প্রকৌশলী চন্দন চক্রবর্তী জানান, বরগুনা জেলা গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কার প্রকল্পের আওতায় ওই এক কিলোমিটার সড়ক পিচ ঢালাইয়ের কাজের জন্য প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। প্রকল্পের কাজ শুরু হলে সড়কটি সংস্কার করা হবে।
বরগুনা সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নাদিরা সবুর জানান, ‘সড়কটি সংস্কারের জন্য এরই মধ্যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ বছরের মধ্যেই সড়কটিতে পিচ ঢালাইয়ের কাজ শেষ করা হবে।’