সাম্প্রদায়িকতা রুখতে ভারতকে সচেতন হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, সে দেশে সাম্প্রদায়িক কোনো ঘটনা ঘটলে তার রেশ প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশেও পড়ে।
কুমিল্লার ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেছেন, কেউ যেন এ ধরনের কাজ আর করতে সাহস না পায়, তার ব্যবস্থাই করবে সরকার।
বৃহস্পতিবার মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি আয়োজিত ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে শারদীয় দুর্গাপূজার মহানবমীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘প্রতিবেশী ভারত মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের সহযোগিতা করেছে। তাদের কথা আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি। তবে সেখানেও এমন কিছু না করা হয়, যার প্রভাব আমাদের দেশে এসে পড়ে আর আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আঘাত আসে। এ ব্যাপারে তাদেরও একটু সচেতন থাকতে হবে। এটা আমার অনুরোধ থাকল।
‘আমাদের দেশে ৭৫-এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াতের হাতেই ধর্মের নামে বিভেদ-দ্বন্দ্ব সৃষ্টির শুরু। এ ছাড়া সারা বিশ্বেই জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়াতে তার একটা প্রভাব এসে পড়ছে দেশে। এটা শুধু আমাদের দেশ না, আমাদের প্রতিবেশী দেশকেও এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে, সচেতন থাকতে হবে।’
বাংলাদেশ সব ধর্মের মানুষের উল্লেখ করে মুসলমান ছাড়া অন্য ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যালঘু না ভাবার পরামর্শও দেন আওয়ামী লীগপ্রধান। বলেন, ‘আপনাদের আমরা আপনজন হিসেবে মানি। এ দেশের নাগরিক হিসেবে মানি। সম-অধিকার নিয়ে আপনারা বসবাস করেন। সম-অধিকার ভোগ করবেন, ধর্ম পালন করবেন। সেটাই আমরা চাই। এটাই আমাদের বাংলাদেশের আসল নীতি, আসল সৌন্দর্য।
‘আমি চাই আমাদের দেশের মানুষ সুন্দরভাবে বসবাস করবেন এবং সব ধর্মের মানুষ তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করবেন। এটাই আমাদের লক্ষ্য।’
ইসলাম ধর্ম সব সময় পরমত ও ধর্মের সহিষ্ণুতায় বিশ্বাসী উল্লেখ করে পবিত্র কোরআনের একটি আয়াতও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। বলেন, “আমাদের সুরা কাফিরুনে স্পষ্ট করে বলা আছে, ‘লাকুম দ্বীনিকুম ওয়ালিয়াদ্বীন’, অর্থ যার যার ধর্ম তার তার কাছে।”
‘সেখানে কিন্তু বিভেদের কথা বলে নেই, অন্য ধর্মের স্বাধীনতার কথাই বলা হয়েছে।’
ধর্মান্ধ কিছু লোক সব সময় একটা সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করতে চায় উল্লেখ করে কুমিল্লার ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার অঙ্গীকারও করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘যেখানে যেখানে এমন ঘটনা হবে, সঙ্গে সঙ্গে তাদের খুঁজে বের করা হবে। আমরা অতীতেও করেছি। সেটা আমরা করতে পারব। এমন শাস্তি দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ করতে সাহস না পায়।’
নিজেদেরকে সংখ্যালঘু ভাববেন না
হিন্দু ধর্মালম্বীদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নিজেদেরকে কখনও সংখ্যালঘু ভাববেন না। নিজেদের কেন ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ের অমুক সমুক মনে করবেন। এই মাটিতে আপনার জন্ম। এই মাটিতে যাদের জন্ম, তারা এই মাটির সন্তান। কাজেই এখানে সবাই নিজের অধিকার নিয়ে বসবাস করবেন।
শারদীয় দুর্গাপূজার মহানবমীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে একথা বলেন।
নিজেদের কখনও সংখ্যালঘু, সংখ্যাগুরু এই সংখ্যা দিয়ে বিচার না করাই ভালো উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি স্বাধীন বাংলার স্বাধীন নাগরিক হিসেবে বসবাস করবেন। কাজেই সেই আত্মবিশ্বাসটা আপনাদের মাঝে থাকতে হবে এটাই আমি চাই।’
প্রধানমন্ত্রী এসময় হিন্দু ধর্মালম্বীদের কিছু অধিকারের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের মুসলমানদের ভেতরে বাবা-মা তার ছেলেমেয়েকে কোন সম্পত্তি যদি দিয়ে দেয় বা উত্তরাধিকার সূত্রে সে তা পায় তাহলে কিন্তু সেখানে কোন ট্যাক্স দিতে হয় না। একই রকমভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষরাও যেন একই সুবিধা ও অধিকার পায় সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছে সরকার।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মসজিদভিত্তিক শিক্ষা যেমন আমরা চালু করেছি তেমনি মন্দিরভিত্তিক শিক্ষাও চালু করেছি। সারা দেশে ৬ হাজার ৪৫০টা মন্দিরভিত্তিক শিক্ষাকেন্দ্রের মাধ্যমে ১ লাখ ৯১ হাজার ২৫০ জনকে প্রাক প্রাথমিক, বয়স্ক ও ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হচ্ছে।’