তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘কেউ অভিযুক্ত হলেই ঘটনা সত্য, তা বলা যায় না। আমি নিজেও হত্যা, ডাকাতিসহ বহু মামলার আসামি ছিলাম। সব মামলায় খালাস পেয়েছি।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত তিনজনকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়ার পর যে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে, তার জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগ এনে দেশের বেশ কয়েক জায়গায় সাম্প্রদায়িক হামলার বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানান তিনি।
নাসিরনগরের মনোনয়ন প্রসঙ্গে দলের অবস্থান জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমি নিজে হত্যা মামলার আসামি ছিলাম। ভাঙচুর মামলা, ডাকাতি মামলাসহ বহু মামলা ছিল আমার বিরুদ্ধে। আসামি ছিলাম মানে আমি অভিযুক্ত ছিলাম। ইসলামী ছাত্রশিবির ও এরশাদ সরকারের পুলিশ আমার বিরুদ্ধে এসব মামলা করেছিল।
‘আমি অভিযুক্ত ছিলাম, মানেই সে ঘটনা সত্য এমন তো নয়। আমি সব মামলায় খালাস পেয়েছি। আমরা ক্ষমতায় আসার আগেই খালাস পেয়েছি। যদি আমি ক্ষমতায় আসার পর খালাস পেতাম, তাহলে বলার সুযোগ থাকত ক্ষমতাকে ব্যবহার করা হয়েছে। বিচারিক আদালতের মাধ্যমে আমি খালাস পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘সুতরাং অভিযুক্ত হলেই যে ঘটনা সত্য, তা বলা যায় না।’
আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় ইউপি নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ যে মনোনয়ন দিয়েছে, তাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন নাসিরনগর হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত তিনজন। চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টি নিয়ে উপজেলাজুড়ে সমালোচনা চলছে। এ ছাড়া মন্দির ভাঙচুর মামলার আসামি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতারাও।
মনোনয়ন পাওয়া যে তিন প্রার্থীকে নিয়ে আলোচনা চলছে, তারা হলেন আবুল হাসেম, আক্তার মিয়া ও দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখি। এর মধ্যে সদরে হাসেম, পূর্বভাগে আক্তার এবং হরিপুর ইউনিয়ন থেকে আতিকুর প্রার্থী হয়েছেন।
গত ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবরে ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর ছবি পোস্ট করার অভিযোগকে কেন্দ্র করে নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর, লুটপাট-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে দুই শতাধিক হিন্দু বাড়িঘর ও ১৫টি মন্দিরে হামলা চালানো হয়। পিটিয়ে আহত করা হয় অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষকে।
এ ঘটনায় আদালতে পুলিশের দেয়া অভিযোগপত্রে ২২৮ আসামির মধ্যে আওয়ামী লীগের ৩০-৩৫ জন এবং বিএনপির ৬০-৭০ জন নেতা-কর্মীর নাম আসে। সেখানে আসামিদের মধ্যে হাসেম, আক্তার এবং আতিকুরের নাম রয়েছে।
এ ঘটনায় হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখিকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তখন জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ১৩ কিলোমিটার দূরের হরিপুর ইউনিয়ন থেকে ১৪ থেকে ১৫টি ট্রাক ভরে মানুষ আসার পর হামলা হয় নাসিরনগরের হিন্দুপল্লিতে। যেসব ট্রাকে চড়ে হামলাকারীরা এসেছিল, সেগুলোর ব্যবস্থা ও অর্থের জোগান দেন আঁখি। তিনি বাধ্য হয়ে টাকা দিয়েছিলেন বলে দাবি করেন।
স্থানীয়রা তখন জানান, হামলার আগের দিন রসরাজের নামে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ছড়ালে এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়। এ সময় চেয়ারম্যান আঁখি হিন্দুপ্রধান ওই গ্রামের বাসিন্দাদের এলাকা ছেড়ে যেতে বলেন। তার কথা শুনে অনেক পুরুষ আশপাশের এলাকায় গিয়ে হামলা থেকে রক্ষা পেলেও তাদের বাড়িঘর ছাড় পায়নি।
ঘটনার পর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাসেম ও মো. আক্তার মিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।