চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে একাধিক মন্দিরে হামলা এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর হাজীগঞ্জ পৌর এলাকায় বুধবার রাত থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে দুই প্লাটুন বিজিবি সদস্য।
সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে তিন যুবক ও এক কিশোর নিহত হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন বুধবার রাতে এবং একজন বৃহস্পতিবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়।
জাতীয় সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগের চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেনসহ জেলা প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা হাজীগঞ্জ পৌর এলাকায় হামলার শিকার কয়েকটি পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখেন।
আবু সাঈদ আল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, মৌলবাদী ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করার হীন চেষ্টা করছে। কোনো ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি কখনোই অন্য ধর্মের প্রতি আঘাত করতে পারে না। সব সময় উচ্ছৃঙ্খল ও ধর্মান্ধ ব্যক্তিরাই অন্য ধর্মের প্রতি আঘাত করে।’
তিনি বলেন, ‘যেসব উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি হাজীগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করছে, তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। সবাইকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আইনের আওতায় আনা হবে।’
ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুলিশ দুষ্কৃতকারীদের ধরতে তৎপর রয়েছে। ইতোমধ্যে সাতজন আটক হয়েছে। হামলার সময় পুলিশ জনগণের জানমাল ও আত্মরক্ষায় গুলি করেছে।’
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, ‘হাজীগঞ্জে মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে।’
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছিরউদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম দুলাল পাটওয়ারী, হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আ স ম মাহবুব-উল আলম লিপন, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল, কচুয়া পৌরসভার মেয়র নাজমুল আলম স্বপন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী মো. মাইনুদ্দীন, হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিন মিয়াজী প্রমুখ।
হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার লক্ষ্মী নারায়ণ জিউর আখড়া (ত্রিনয়নী), দি বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠ মন্দির, পৌর মহাশ্মশান, জমিদার বাড়িসহ কয়েকটি পূজামণ্ডপে বুধবার রাতে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে একপর্যায়ে গুলি চালায় পুলিশ।