কুমিল্লা শহরের একটি পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ পাওয়ার ঘটনার পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভাংচুর ও সহিংসতার অভিযোগে ৪৩ জনকে আটকের সমালোচনা করেছে জামায়াত।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ধর্মভিত্তিক দলটি দাবি করেছে, কুমিল্লার ঘটনায় ৪৩ জন ‘নিরপরাধ’ লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘১৩ অক্টোবর কুমিল্লা মহানগরীর নানুয়া দিঘীর পাড় এলাকায় একটি পূজামণ্ডপে পবিত্র কুরআন মাজীদ অবমাননার মাধ্যমে মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার পর উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। কারা এই ঘটনা ঘটাল তা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনাক্তের মাধ্যমে পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেত।
‘তা না করে পরিস্থিতি উসকে দেয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উল্টো প্রতিবাদী জনতার উপর নির্বিচারে লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ ও গুলি চালিয়েছে। পুলিশের রাবার বুলেটে কুমিল্লায় অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছেন। কুরআন অবমাননাকারীকে গ্রেপ্তার না করে উল্টো ৪৩ জন নিরপরাধ লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম রেঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় উসকানি দিয়ে মন্দিরে হামলা এবং ভাঙচুরের অভিযোগে ৪৩ জনকে আটকের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার কুমিল্লার নানুয়া দিঘীর পাড় পূজা মণ্ডপ পরিদর্শনের সময় এ তথ্য জানান পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, ‘উসকানি দেয়ার জন্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। গতকাল সকালে নানুয়া দিঘীর পাড়ের ঘটনায় প্রথম যে ভিডিওটি ফেইসবুকে প্রকাশ পেয়েছে, তাতে খুবই উসকানিমূলকভাবে ধারা-বর্ণনা দেয়া হচ্ছিল।‘
কুমিল্লার নানুয়ার দিঘীর উত্তরপাড়ের একটি পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ পাওয়ার অভিযোগ তোলার পর বুধবার সকাল থেকে শহরে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির বিপুল সংখ্যক সদস্য। তবে আলোচিত মণ্ডপের পূজার আয়োজকেরা বলছেন, সেখানে পবিত্র কোরআন শরিফ কী করে এল সে বিষয়ে তাদের কোনো ধারণা নেই।
বুধবার সকালে বিষয়টি পূজারিদের নজরে আসে। এর আগে গভীর রাত পর্যন্ত পূজা উদযাপন শেষে মণ্ডপটি জনশূন্য ছিল।
পূজার আয়োজক দর্পনসংঘের সভাপতি সুবোধ রায় জানান, কম বাজেটের মণ্ডপ বলে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়নি। এ ঘটনায় কারা জড়িত সেটি বের করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এ ঘটনার জের ধরে কুমিল্লা, চাঁদপুর, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বুধবার রাত থেকেই কুমিল্লা, নরসিংদী ও মুন্সিগঞ্জসহ ২২ জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি আয়োজিত শারদীয় দুর্গাপূজার মহানবমীর অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা।
কুমিল্লার ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যেই এটার তদন্ত হচ্ছে। খুব ব্যাপকভাবেই তদন্ত হচ্ছে। অনেক তথ্যও আমরা পাচ্ছি। এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটাবে তাদের আমরা খুঁজে বের করবই। আমরা করতে পারব, এটা প্রযুক্তির যুগ। সে যে-ই হোক, যে ধর্মের হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা অবশ্যই নেয়া হবে। আমরা তা করেছি এবং করব।’
ইতোমধ্যে পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ পাওয়ার অভিযোগ তুলে ফেসবুকে লাইভ করা ফয়েজ আহমেদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় আসামি করা হয়েছে তাকে।