ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগ আগামী ১৮ অক্টোবর থেকে সশরীরে ক্লাস শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টি শিক্ষার্থীদের জানাতে বিভাগ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। সাত লাইনের এই বিজ্ঞপ্তিতে ভুল হয়েছে ২২টি বানান।
গত ১৩ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশিত হওয়ার পর এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শায়লা শারমিন স্বাক্ষর করেন। বানান না দেখেই কেন তিনি সই করেছেন, সেটি নিয়েই মূলত সমালোচনা হচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে সশরীরে, কোনো, অংশগ্রহণ, গ্রহণ, প্রমাণপত্র, পারবে না, ক্লাস ইত্যাদি বানান একাধিকবার ভুল করা হয়।
এসব বানান ভুলের বিষয়ে বৃহস্পতিবার কানাডার অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং অধ্যাপক ড. মো. আমিন ফেসবুকের একটি গ্রুপে পোস্ট দিলে এটি ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের এ বিজ্ঞপ্তিটি সংযুক্ত করে ড. আমিন লেখেন, ‘বাংলা বাঙালিদের হাতে নিগৃহীত হচ্ছে হরদম। মাতৃভাষার প্রতি এমন অবহেলা বিশ্বের আর কোনো জাতিতে দেখা যায় না। মাতৃভাষায় যার ভালো জ্ঞান নেই সে যত বড় প্রতিষ্ঠানের যত বড় অধ্যাপকই হোক না, তাকে আদর্শ মানুষ বলা যায় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শায়লা শারমিন স্বাক্ষরিত নিচের বিজ্ঞপ্তিটি দেখুন। বাংলায় লেখা এই বিজ্ঞপ্তির সাত লাইনে বাইশটি ভুল। এমন অবস্থা কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। এটি আমাদের চরম লজ্জা আর জাতিগত দীনতার নিকৃষ্টতম প্রয়াস। শুদ্ধতা হার্দিক বিষয়। এটি অন্তর্নিহিত ধারণার ব্যাকুল প্রকাশ, যা ভাষার মাধ্যমে প্রকাশ পায়।’
এরপর বিষয়টি নিয়ে ড. আমিন ফেসবুকের ‘শুদ্ধ বানান চর্চা’ নামে একটি গ্রুপে পোস্ট করেন। এর পরই মূলত বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে। এই গ্রুপে পোস্টের মন্তব্যের ঘরে অনেকেই বিভাগীয় চেয়ারম্যানের সমালোচনা করেন, আবার অনেকে তার পক্ষেও লেখেন।
আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের বাংলা সাহিত্যের শিক্ষক আমিনুল লেখেন, ‘তিনি যে বানান জানেন না তা নয়, ব্যাপারটা হচ্ছে যিনি স্বাক্ষর করেছেন তিনি সচেতন ছিলেন না।’
মিজানুর রহমান সাকিব নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লেখেন, ‘একজন অফিস সহকারীর টাইপিং মিস্টেকের দ্বারা যারা পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও উক্ত ম্যাডামকে বিচার করতে শুরু করেছেন, তা ঠিক নয়।’
তবে এ বিষয়ে দুঃখপ্রকাশ করে অধ্যাপক ড. শায়লা শারমিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটি ভুলবশত হয়ে গেছে। স্বাক্ষর করার আগে বানানগুলো দেখে নেয়া উচিত ছিল। পরবর্তী সময়ে আমি এ বিষয়টি খেয়াল রাখব। আর এটি নিয়ে আমি ড. আমিনের সেই পোস্টে মন্তব্য করে দুঃখপ্রকাশও করেছি।’
তিনি বলেন, ‘এই বিজ্ঞপ্তিটা বাইরে পাঠানোর কিছু ছিল না। ক্লাস শুরুর বিষয়টি জরুরিভাবে শিক্ষার্থীদের জানাতে চেয়েছি। আর আমরা বানান আগে লিখতাম একরকম আর এখন বিভিন্ন নতুন নিয়ম চলে আসছে। যেমন ক্লাসের বানানটা আমি ‘তালব্য শ’ দিয়েই জানি। কিন্তু এখন ‘দন্ত্য স’ হয়ে গেছে। নতুন নতুন বানান আসায় এ ভুলটা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিভাগের কোনো সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের জানানো প্রয়োজন হলে অফিসই মূলত এটি টাইপ করে। তারা টাইপ করে দিলে আমার দায়িত্ব হলো যে মেসেজটা আমরা দিতে চাচ্ছি, সেটি ঠিক আছে কি না দেখে তারপর সাইন করা। তবে এ ক্ষেত্রে অসাবধানতাবশত আমি সব বানান না দেখে সাইন করেছি। এ জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’
এর আগে ‘শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ)’ ফেসবুক গ্রুপে ড. আমিনের করা সেই পোস্টে দুঃখপ্রকাশ করে ড. শায়লা শারমিন মন্তব্য করেছেন, ড. মোহাম্মদ আমিন আপনাকে অনেক ধন্যবাদ বিজ্ঞপ্তির ভুল বানানসমূহ উল্লেখ করার জন্য। অবশ্যই স্বাক্ষর করার আগে ভালো করে দেখে বানান শুদ্ধ করে নেয়া উচিত ছিল। আমি ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই সতর্ক থাকব যেন এমন ভুল না হয়। বানান ভুলের জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আপনার মঙ্গল কামনা করছি।’