ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন সিস্টেম বা ডিবিএস ব্যবহার করে এবার আয়করের পাশাপাশি মূল্য সংযোজন করের (ভ্যাট) তথ্যও যাচাই করতে পারবেন ভ্যাট কর্মকর্তারা।
এর ফলে যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভুয়া অডিট রিপোর্ট বা নিরীক্ষা প্রতিবেদন দাখিল করে ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে, তা বন্ধ হবে।
সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদদের সংগঠন দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) এরই মধ্যে ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন সিস্টেম (ডিভিএস) নামে একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছে।
ওই সফটওয়্যারের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) জমা দেয়া অডিট রিপোর্ট সঠিক কি না, তা যাচাই করতে পারবেন ভ্যাট কর্মকর্তারা। এতে ভুয়া রিপোর্ট জমার সুযোগ শেষ হয়ে যাবে। অডিট প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা হবে; বাড়বে রাজস্ব আদায়।
এ বিষয়ে সম্প্রতি এনবিআরের ভ্যাট বিভাগ ও আইসিএবির মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে।
এর আগে গত বছরের শেষের দিকে আয়কর বিভাগ ও আইসিএবি একই ধরনের এমওইউ সই করেছিল। এখন ভ্যাট বিভাগের সঙ্গে চুক্তি সই হলো।
এনবিআরের সদস্য ভ্যাট (নীতি) মাসুদ সাদিক বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী লিমিটেড কোম্পানির বার্ষিক নিরীক্ষিত অডিট রিপোর্ট দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দেখা গেছে, অনেক প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ভ্যাট বিভাগের কাছে ভুয়া, জাল এমনকি ডুপ্লিকেট রিপোর্ট জমা দিয়ে থাকে।
‘প্রচলিত প্রথায় এসব রিপোর্ট যাচাই করার সুযোগ না থাকায় সরকারের রাজস্ব ফাঁকি হচ্ছে। ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন সিস্টেম চালু হওয়ায় এ ধরনের জালিয়াতি রোধ হবে এবং সরকারের রাজস্ব আদায় নিশ্চিত হবে।’
অভিযোগ আছে, সহজে ব্যাংক ঋণ পেতে অনেক প্রতিষ্ঠান ভুয়া অডিট রিপোর্ট তৈরি করে মুনাফা বেশি দেখায়।
চুক্তির ফলে এ ধরনের জালিয়াতির পথ বন্ধ হবে বলে জানান এনবিআরের কর্মকর্তারা।
আইসিএবি বলেছে, সংগঠনের সদস্যরা বিভিন্ন কোম্পানির যত অডিট করবেন, সেগুলোর প্রায় সব তথ্য, অর্থাৎ কোম্পানির কেনাকাটা থেকে শুরু করে পণ্য বিক্রি, উৎপাদন ও সরবরাহ এবং তারল্য পরিস্থিতির মতো বিষয়গুলো ওই সফটওয়্যারে আপলোড করতে হবে।
এসব তথ্য দেয়ার পর সফটওয়্যারটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন কোড দেবে। ভ্যাট কর্মকর্তারা ওই কোডের সঙ্গে এনবিআরে জমা করা রিপোর্টের ভেরিফিকেশন কোডটি যাচাই করে দেখতে পারবেন। এভাবে ভুয়া রিপোর্ট শনাক্ত করা যাবে।
আইসিএবির সভাপতি মাহমুদুল হাসান খসরু বলেন, ‘বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভ্যাট কর্তৃপক্ষের কাছে যেসব আর্থিক হিসাব বিবরণী দেয়, তা অনেক ক্ষেত্রে ভুয়া হয়। এতে একদিকে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়, অন্যদিকে চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি পেশারও সুনাম ক্ষুণ্ন হয়। ডিভিএস চালুর ফলে ভুয়া হিসাব বিবরণী দাখিল বন্ধ হবে।’
তিনি বলেন, ‘অনেক সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ ভুয়া প্রতিবেদন তৈরি করে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এটি ভুল প্রমাণ হবে। ডিভিএস ব্যবস্থা চালুর ফলে রিপোর্টের মান নিয়ে প্রশ্ন থাকবে না।’
আইসিএবির কর্মকর্তারা বলেছেন, এরই মধ্যে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও নেপালে ডিভিএস ব্যবস্থা চালু হয়েছে এবং সেসব দেশে ভালো ফল পাওয়া গেছে।
এনবিআরের কর্মকর্তারা বলেন, প্রতি বছর ভ্যাট বিভাগে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার অডিট রিপোর্ট জমা পড়ে। সনাতন উপায়ে সব রিপোর্ট যাচাই করার সুযোগ নেই।
ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন সিস্টেম চালু হওয়ায় অডিট প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আসবে; বাড়বে রাজস্ব আদায়।