বর্তমান সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বৃহস্পতিবার জাতীয়তাবাদী সমবায় দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা হচ্ছে দেশের আইনশৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখতে এ সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। হিন্দু ভাইদের যে দুর্গাপূজা হচ্ছে, সেখানে কতগুলো অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে।… এই যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার যে চক্রান্ত, সেটা এই সরকারের চক্রান্ত।
‘তারা এই দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়। আমরা এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। একই সঙ্গে প্রকৃত অপরাধীকে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’
এ সময় কুমিল্লার ঘটনা নিয়েও কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
কুমিল্লা নগরীর নানুয়ার দিঘীর উত্তরপাড়ের একটি পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ পাওয়ার অভিযোগ তোলার পর বুধবার সকাল থেকে শহরে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির বিপুলসংখ্যক সদস্য। তবে আলোচিত মণ্ডপের পূজার আয়োজকরা বলছেন, সেখানে পবিত্র কোরআন শরিফ কী করে এলো সে বিষয়ে তাদের কোনো ধারণা নেই।
বুধবার সকালে বিষয়টি পূজারিদের নজরে আসে। এর আগে গভীর রাত পর্যন্ত পূজা উদযাপন শেষে মণ্ডপটি জনশূন্য ছিল।
পূজার আয়োজক দর্পণ সংঘের সভাপতি সুবোধ রায় জানান, কম বাজেটের মণ্ডপ বলে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়নি। এ ঘটনায় কারা জড়িত সেটি বের করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
বিজিবির কুমিল্লা ১০ ব্যাটালিয়নের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম ফজলে রাব্বি নিউজবাংলাকে জানান, শহরে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, কোরআন শরিফ নিয়ে রেখেছে পূজামণ্ডপে। যারা এ কাজ করেছে তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্যই করেছে। দেশে স্থিতিশীলতা নষ্ট করার জন্যই করেছে।…সরকার বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে দেশে অশান্তি সৃষ্টি করার জন্য, আসল জায়গা থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে নেয়ার জন্য এসব ঘটনা ঘটায়।’
আগামী সংসদীয় নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। বলেন, ‘বর্তমানে দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব না। সরকার নিরপেক্ষ না হলে যত ভালো লোককেই নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব দেয়া হোক নির্বাচন নিরপেক্ষ করা সম্ভব না। সরকার যদি নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনা না করে, তাহলে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না।
‘এ জন্য আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি, আগে পদত্যাগ করো, নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দাও। তারা নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। তারা (সরকার) তা করবে না। আমাদের কথা পরিষ্কার, নির্বাচন নির্বাচন খেলা আর হবে না৷’
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ কথাটা আওয়ামী লীগ স্বীকার করতে চায় না। আমরা যারা যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত ছিলাম, আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলাম, সংগ্রামের সঙ্গে জড়িত ছিলাম তারা সবাই তার ঘোষণা শুনেছিলাম। তিনি কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে ঘোষণা দিলেন, তারপরই সবাই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
‘বিএনপি পালায়, আওয়ামী লীগ পালায় না’ আওয়ামী লীগ নেতার এমন মন্তব্যের জবাবে ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আওয়ামী লীগ তো ১৯৭১ সালেই পালিয়েছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানে পালিয়েছে, বাকিরা ভারতে পালিয়েছে। আমাদের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশে থেকে যুদ্ধ করেছেন। আমরা কখনও পালিয়ে যাওয়ার দল না, তার প্রতিষ্ঠিত দল পালিয়ে যাওয়ার দল নয়। এখানেই লড়াই করেছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “জিয়াউর রহমান অল্প দিন বেঁচে ছিলেন, তিনি রাজনৈতিকভাবে ৪ থেকে ৫ বছর সময় পেয়েছিলেন, এই সময়ে তিনি পুরো দেশের চেহারা পাল্টে দিয়েছিলেন। অন্যদিকে স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত এ দেশকে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের নাম পাল্টে দিতে হবে, এটাকে বলতে হবে ‘নিখিল বাংলাদেশ লুটপাট সমিতি’। এগুলো আমার কথা না, এগুলো ইতিহাস।”
বিএনপি গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কোন গণতন্ত্র? তাদের গণতন্ত্র হচ্ছে আমরা সারাজীবন ক্ষমতায় থাকব, আর তোমরা সারাজীবন প্রজা হয়ে থাকবা। এটাই হচ্ছে তাদের গণতন্ত্রের মূল লক্ষ্য।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে সব জায়গা সংকুচিত করে ফেলেছে। আগে ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে আমরা সভা-সমাবেশ করতাম, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সেটাকে স্টেডিয়াম করে দিল। এরপর মুক্তাঙ্গনও বন্ধ করে দিল। তার আগে মানিক মিয়া এভিনিউতে সভা-সমাবেশ করা হতো। সেখানেও ডিভাইডার দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। প্রেস ক্লাবের সামনে ছোট একটা জায়গা, সেটাও বন্ধ করে দেয়া হলো। এভাবে গণতন্ত্র চলতে পারে না।’
জাতীয়বাদী সমবায় দলের সভাপতি মীর আফরোজ খানম যুথির সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়াপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা শাহ মোহাম্মদ নেছারুল হোক, কৃষক দলের কে এম রকিবুল ইসলাম রিপনসহ আরও অনেকে।