শরীয়তপুর-চাঁদপুর নৌপথে ফেরি সংকটে নরসিংহপুর ঘাটে দেখা দিয়েছে দীর্ঘ যানজট।
নরসিংহপুর ঘাটে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সাড়ে ৪০০ যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ পণ্যবাহী গাড়ি, যেগুলো চার থেকে পাঁচ দিন ধরে ঘাটে অপেক্ষা করছে।
ঘাট কর্তৃপক্ষ বলছে, এই রুটে যানবাহন পারাপার করত সাতটি ফেরি। কিন্তু এখন পাঁচটি ফেরি সচল আছে। এ অবস্থায় চাপ সামাল দিতে বেগ পেতে হচ্ছে। জটিলতা বেড়েছে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে রাতে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায়। ওই রুটের অনেক গাড়ি এ পথে এসে পড়ায় যানজট তৈরি হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর-চাঁদপুর নৌপথের সাতটি ফেরির মধ্যে সম্প্রতি কেতকী ফেরি মাঝনদীতে বিকল হয়ে যায়। সেটি মেরামতের জন্য ডকইয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে।
এ ছাড়া কঞ্জুলতা ফেরি এই ঘাট থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া রুটে। এক সপ্তাহে আগে ওই নৌপথে যুক্ত হয়েছে ফেরিটি। ফলে নৌযান সংকট তৈরি হয়েছে। নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে গন্তব্যে পৌঁছাতে বাড়তি দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগছে।
পদ্মা সেতুতে ফেরির ধাক্কা দেয়ার ঘটনার পর থেকে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এরপর থেকে শরীয়তপুরের নরসিংহপুর ঘাটে যানবাহনের চাপ বেড়েছে কয়েক গুণ। দীর্ঘ সময় ঘাটে আটকে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ট্রাকচালকরা।
সোমবার থেকে পেঁয়াজ নিয়ে ঘাটে অপেক্ষা করছেন ট্রাকচালক বিল্লাল হোসেন। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ঘাট পারাপারের সিরিয়াল পাননি তিনি। বিল্লাহ হোসেন বলেন, ‘পেঁয়াজ হইল পইচা যাওয়া কাঁচামাল। ঘাটে বইসা থাকতে থাকতে গরমে মালে পচন দেখা দিছে। ফোটাইয়া ফোটাইয়া পানি পরতাছে। আজ রাইতের মধ্যে পার না হইতে পারলে নষ্ট পেঁয়াজ লইয়া যাইতে হইবো। তখন মালিকরে কী জবাব দিমু?’
গ্যাসের সিলিন্ডার বোঝাই ট্রাকচালক মাইনুল বলেন, ‘এই রুটে কম পথ। তাই এইখান দিয়াই যাই। কয়েক বছর ধইরা ভিড় থাকে। তবে এর আগে এত ভিড় দেখি নাই। পাঁচ দিন ধইরা ঘাটে বইয়া রইছি। সঙ্গে যে টাকা পয়সা ছিল হেইয়াও শেষ। এখন মালিকের থিকা বিকাশে টাকা আনছি। এতে মালিকেরও লস, আমরা শ্রমিক আমাদেরও লস।’
নরসিংহপুর ফেরিঘাটের ইজারাদার জিতু বেপারী বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ এ নৌরুটটিতে বছরের পর বছর পুরাতন ফেরি দিয়ে পারাপার চলছে। লক্কর-ঝক্কর মার্কা ফেরির কারণে এই দুর্ভোগ। কুঞ্জলতা নামের একটি নতুন ফেরি দিলেও সেটি আবার নিয়ে গেছে। এই ঘাটের প্রতি কর্তৃপক্ষের নজর কম। বারবার বলেও নতুন ফেরি পাচ্ছি না। বড় আকারের দুটি নতুন ফেরি দিলে এই সমস্যা হতো না।’
নরসিংহপুর ফেরিঘাটের ঘাট ব্যবস্থাপক আব্দুল মোমেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বহরে দুইটি ফেরি কম থাকায় যানবাহন পারাপারের সংখ্যা কমে গেছে। বিকল ফেরিটি মেরামত কাজ চলছে। এ ছাড়া শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে রাতে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় এই ঘাটে যানবাহনের চাপ বেড়েছে।’
ঘাটের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।