নড়াইলের নাকসী মাদ্রাসাহাট ও পশুহাটটি দীর্ঘদিন ধরে চলছে ধুঁকে ধুঁকে। হাটটিতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সুবিধার জন্য দোচালা টিনশেড নির্মাণের কাজ শেষ হয়নি তিন বছরেও।
এ ছাড়া হাটের ড্রেনেজ-ব্যবস্থা, জলাবদ্ধতা, পুরাতন ভাঙাচুরা শেডসহ সীমানা প্রাচীর না থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সবাইকে। এতে প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা সমাগম।
হাট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নড়াইল শহরসংলগ্ন নাকসী মাদ্রাসাহাট ও পশুহাটটি প্রায় ৩০ বছরের। শহরের কাছাকাছি এবং নড়াইল-যশোর সড়কের কোলঘেঁষে হাটটির যোগাযোগব্যবস্থা ভালো থাকায় এখানে প্রচুর ক্রেতা-বিক্রেতা সমাগম ছিল।
নড়াইল জেলার বিভিন্ন অঞ্চল ছাড়াও আশপাশের জেলা যশোর, খুলনা, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ফরিদপুরসহ অন্যান্য এলাকা থেকে কাঁচামাল ও গরু-ছাগল ব্যবসায়ীরা এখানে আসেন।
প্রায় ৬০ শতক জমির ওপর পশুহাট এবং ৪০ শতকের কাঁচাবাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা দোকান রয়েছে। প্রতি মঙ্গলবারে এখানে গরু, ছাগলসহ বিক্রির জন্য অন্যান্য পশুর হাট বসে।
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর ব্যবসায়ী আজম মোল্যা বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী এই হাটটিতে প্রায় ১৫ বছর ধরে গরু বেচাকেনা করছি। নড়াইল-যশোর-কালনাঘাট সড়কের পাশে হাটটির অবস্থান হওয়ায় যেকোনো যানবাহন নিয়ে আমরা এখানে আসতে পারি। কিন্তু গত পাঁচ বছর ধরে হাটটি অল্প বৃষ্টিতেই কাঁদা পানিতে একাকার হয়ে যায়। আর কাঁদা পানির কারণেই হাটের বেশির ভাগ জায়গা খালি পড়ে আছে।’
নড়াইল সদরের ফারুক শেখ জানান, কাঁদার কারণে হাটে ঠিকমতো চলাফেরা করা যায় না। এতে হাটে লোকসমাগম কমে গেছে। গরু-ছাগলও বিক্রি হয় না।’
নাকসী এলাকার সুলতান খান বলেন, ‘তিন বছর আগে পশুহাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য টিনশেডের দোচালা ঘরটির নির্মাণকাজ শুরু হলেও এখনো শেষ হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কত দিনে নির্মাণকাজ শেষ করতে পারবে, এটি বড় প্রশ্ন। আর কাঁচাবাজারের ঘরগুলোর অবস্থাও করুণ।’
তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ক্রেতা-বিক্রেতারা হাটে না ঢুকে সড়কের পাশে অবস্থান করেন। আর পশুবাহী ট্রাকসহ অন্য যানবাহনগুলোও সড়কের পাশে পার্কিং করে রাখা হচ্ছে। এতে জীবনের ঝুঁকিসহ সড়কে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।’
হাট ব্যবসায়ী মফিজ সিকদার বলেন, ‘৩০ বছরের ঐতিহ্যবাহী নাকসী মাদ্রাসা হাটটিকে বাঁচিয়ে রাখতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’
চলতি অর্থবছরে ৩৫ লাখ টাকা দিয়ে উপজেলা প্রশাসন থেকে হাটটি ইজারা নিয়েছেন হাদিউজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘পশুহাটটি প্রায় ৬০ শতক জমির ওপর অবস্থিত হলেও কাদামাটি ও জলাবদ্ধতার কারণে বর্তমানে এক-তৃতীয়াংশ ব্যবহার উপযোগী রয়েছে। এতে গরু-ছাগলসহ অন্যান্য পশু বেচাকেনায় সমস্যা হচ্ছে।’
হাদিউজ্জামান আরও বলেন, ‘এ ছাড়া চালা দিয়ে পানি পড়ায় কাঁচাবাজারের জন্য দুটি টিনশেডের ঘরই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দুর্বল হয়ে গেছে কংক্রিটের পিলারগুলো। টিনের চালার নিচে পলিথিন দিয়ে কোনো রকমে বেচাকেনা চলছে। এ অবস্থায় যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। এ ছাড়া পশুহাটের সীমানা প্রাচীরও জরুরি হয়ে পড়েছে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান জানান, নড়াইলের ঐতিহ্যবাহী এই হাটটিতে বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন। কোরবানির সময় পশুহাটে অনেক লোকসমাগম হয়। এই হাটের ঐতিহ্য রক্ষায় যেসব সমস্যা রয়েছে, তা সমাধানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
মাস খানেকের মধ্যে হাটের বেহাল অবস্থা দূর হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।