ষষ্ঠী, সপ্তমী, মহাষ্টমী পেরিয়ে দুর্গাপূজার আজ মহানবমী। অর্থাৎ দুর্গাপূজার চর্তুথ দিন। রাজধানীর মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে মহানবমীর উৎসব। একদিন পরই ভক্তদের কাঁদিয়ে কৈলাশে ফিরে যাবেন দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা।
রাজধানীর প্রধান মন্দির ঢাকেশ্বরীতে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা বাজতেই শুরু দেবীর নবমী কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা। নানা আচারের মধ্য দিয়ে মহানবমীর পূজা শেষে ভক্তরা দেবীর চরণে পুষ্পাঞ্জলি দিচ্ছেন। একই চিত্র দেখা যায় বনানী ও খামারবাড়ীসহ অন্যান্য মণ্ডপেও।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত ধর্মদাশ চট্টোপাধ্যায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মহানবমীর দিনে অগ্নিকে প্রতীক করে দেবীকে আহুতি দেয়া হয়। অগ্নি সব দেবতার যজ্ঞভাগ বহন করে যথা স্থানে পৌঁছে দিয়ে থাকে। শাস্ত্র অনুযায়ী মহানবমী তিথি অন্যান্য তিথির তুলনায় শুভ। এদিন দুর্গাপূজার অন্তিম দিন। পরের দিন কেবল বিজয়া ও বিসর্জনের দিন। এ কারণে নবমীর রাতে মণ্ডপে মণ্ডপে বাজে বিদায়ের ঘণ্টা।’
এর আগে বুধবার ছিল দুর্গাপূজার মহাষ্টমী। এদিনে রাজধানীর মন্দিরগুলোতে দেখা যায় পুণ্যার্থীদের উপস্থিতি। বেশি ভিড় দেখা যায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে।
মঙ্গলবার হয় দুর্গাপূজার মহাসপ্তমীর আনুষ্ঠানিকতা। এদিনও মণ্ডপে মণ্ডপে অঞ্জলি নিতে ভিড় জমান পুণ্যার্থীরা।
আগের দিন উলুধ্বনি, শঙ্খ, ঘণ্টা আর ঢাক-ঢোলের বাজনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় ষষ্ঠীপূজা। এর মাধ্যমে শুরু হয় বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। ঢাক-ঢোলের বাজনা, কাঁসা, শঙ্খের আওয়াজ এবং ভক্তদের উলুধ্বনিতে দেবী দুর্গাকে পৃথিবীতে স্বাগত জানানো হয়।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, এবার দেবী মর্ত্যে এসেছেন ঘোড়ায় চেপে। পুরাণ অনুযায়ী, দুর্গা ঘোড়ার পিঠে চড়ে এলে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ, ঝড়, রাজনৈতিক অস্থিরতা ইত্যাদি পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। আর ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে দেবী মর্ত্য ছাড়বেন দোলায় চড়ে। দোলায় গমনেও বাড়বে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্বিপাক।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্যানুযায়ী, এ বছর সারা দেশে ৩২ হাজার ১১৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর সারা দেশে দুর্গাপূজার মণ্ডপের সংখ্যা ছিল ৩০ হাজার ২১৩টি।
ঢাকা মহানগরে এবার পূজা হবে ২৩৭টি মণ্ডপে। এর মধ্যে সূত্রাপুর থানায় সবচেয়ে বেশি ২৫টি মণ্ডপ, কোতোয়ালি থানায় ২১টি, ওয়ারীতে ১৬টি, গেন্ডারিয়ায় ১৪টি, হাজারীবাগে ১৩টি, তুরাগে ১২টি, বাড্ডায় ১০টি, বনানীতে ৯টি, মোহাম্মদপুরে ৯টি, দারুসসালাম ও গাবতলীতে ৮টি, ডেমরায় ৮টি এবং তেজগাঁও থানায় ৬টি মণ্ডপ রয়েছে।
পুরাণ অনুযায়ী, ব্রহ্মার বর পেয়ে মানুষ ও দেবতাদের অজেয় হয়ে উঠেছিলেন মহিষাসুর। ফলে তাকে পরাজিত করার জন্য ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর যে মহামায়ারূপী নারী শক্তি তৈরি করেন তিনিই দেবী দুর্গা। দশভূজা দুর্গা টানা ৯ দিন যুদ্ধ করে মহিষাসুরকে বধ করেন।