পাহাড়ে এখন ধান তোলার সময়। পাকা ধান কাটার ধুম পড়েছে রাঙ্গামাটির পাহাড়ি জনপদে। জুমঘরের চারদিকে যেন ধান নয়, সোনা ছড়িয়ে আছে।
রাঙ্গামাটির মগবান ইউনিয়নের বড়াদাম, মগবান, বন্দুক ভাঙ্গা ইউনিয়ন ও কুতুকছড়ির কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দীর্ঘ নয় মাসের পরিশ্রমের ফসল কেটে ঘরে তুলছেন চাষিরা। কর্মব্যস্ততায় মুখর পাহাড়। দেখে মনে হয় যেন পাহাড় খুঁড়ে ঘরে তোলা হচ্ছে মূল্যবান সোনা।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, পার্বত্য তিন জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে জুম চাষ করা হয়।
পৌষ ও মাঘ মাস এলেই পাহাড়ের ঢালে জঙ্গল সাফ করতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন জুম চাষিরা। শুরু হয় জুম চাষের প্রস্তুতি। ফাল্গুন ও চৈত্র মাসের তীব্র রোদে শুকিয়ে আগুনে পুড়িয়ে তৈরি করা হয় জুমক্ষেত।
বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠে জুম চাষিদের ব্যস্ততা আরও বেড়ে যায়। হিড়িক পড়ে আগুনে পোড়ানো জুমের মাটিতে বিভিন্ন বীজ বপনের। দা ও কোদাল দিয়ে গর্ত খুঁড়ে একসঙ্গে বপন করা হয় ধান, হলুদ, তুলা, শিম, মারফা, আঁখ, তিল, ভুট্টা ইত্যাদি।
জুমচাষ পাহাড়িদের আদি পেশা। পাহাড়ের অধিকাংশ মানুষের জীবিকার অন্যতম উৎস জুমচাষ।
প্রতি বছরের তুলনায় করোনার কারণে এ বছর চাষ হয়েছে কম। তবে ফলন হয়েছে অনেক বেশি।
রাঙ্গামাটি সদরের বন্দুকভাঙ্গার জুম চাষি ত্রিদেবী চাকমা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মোটামুটি এ বছর জুম থেকে অনেকগুলো ধান তুলতে পেরেছি। যদি সঠিক সময়ে বৃষ্টি হতো তাহলে আরও বেশি ধান পাওয়া যেত।’
কুতুকছড়ি এলাকার জুম চাষি সুখময় চাকমা বলেন, ‘ফলন আরও বেশি পেতাম যদি কৃষি বিভাগ থেকে সাহায্য করা হতো। তবে এ বছরে ছোট জুমে অনেক ফলন পেয়েছি। বিশেষ করে মারফা ও ভুট্টা ভালো হয়েছে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বছর ধানের পাশাপাশি সবজির ভালো ফলন হয়েছে। ফলন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। রাঙ্গামাটির ১০ উপজেলার ৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। যার লক্ষ্যমাত্রা ১ দশমিক ৩০ টন।’