প্রেমিকের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে নিজেই প্রেমিক সেজে এক নারীর কাছ থেকে সাড়ে সাত লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এক যুবক। আর প্রতারণার সেই টাকা দিয়ে গড়ে তুলেছেন গরুর খামার।
এমন প্রতারণায় জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
গ্রেপ্তার ওয়াদুদ জিয়া জুয়েলের বাড়ি দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ থানার বাঘাডুবি ভবানীপুর গ্রামে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনা বিভাগে বিবিএ এবং এমবিএ করেছেন।
আরএমপি কার্যালয়ে বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেন কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, ২০১৯ সালে রাজশাহীর কাটাখালী এলাকার এক নারীর সঙ্গে ফেসবুকে আমিনুল ইসলামের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মেসেঞ্জারে যোগাযোগ হলেও তাদের মধ্যে সাক্ষাৎ হয়নি।
এরই মধ্যে জুয়েল ওই আমিনুলের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে নিজেই প্রেমিক সেজে মেয়েটির সঙ্গে প্রেমের অভিনয় শুরু করেন। এর কিছুদিন পর জুয়েল আরও একটি ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে নিজেকে আমিনুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু পরিচয় দিয়ে আমিনুলের সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে মেয়েটির বাসায় যান।
সেখানে নিজের ল্যাপটপ হারানোর অজুহাত দেখিয়ে মেয়ের মায়ের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকার চেক হাতিয়ে নেন। জুয়েল আরেকটি আইডি খুলে আমিনুলের বন্ধু সেজে মেসেঞ্জারে ওই মেয়েকে বলেন, ‘তোমার প্রেমিক ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছে। তার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা ব্যয় হচ্ছে।’ এসব বলে তার কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা আদায় করেন।
ওই মেয়ে ও তার পরিবার আমিনুলের সঙ্গে দেখা করার জন্য ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলে আসামি জুয়েল জানান, আমিনুল মারা গেছেন, আসার প্রয়োজন নেই।
এর কিছুদিন পরে জুয়েল আরও একটি ভুয়া আইডি খুলে আমিনুলের বোন পরিচয় দিয়ে ওই মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য ৩ লাখ টাকা ব্যয় করায় মেয়েটিকে ধন্যবাদ জানান এবং টাকা ফিরিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
পরে জুয়েল আমিনুলের বোন পরিচয়ে মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন এবং একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য ৭ লাখ টাকার প্রয়োজন বলে জানান। ৩ লাখ টাকা আমিনুলের পরিবারের পক্ষ থেকে দেবে, অবশিষ্ট ৪ লাখ টাকা দিতে বলা হয়। তার কথামতো ৪ লাখ টাকা দেয়া হয়। এসব টাকা তাকে নগদ, বিকাশ ও ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে দেয়া হয়।
মেয়ের পরিবার জানায়, ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে এসব টাকা লেনদেন হয়। টাকা নেয়ার পরে জুয়েল তার ব্যবহৃত ভুয়া তিনটি আইডি বন্ধ করে মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
মেয়ে ও তার পরিবার সম্প্রতি বিষয়টি রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিককে মৌখিকভাবে জানায়। কমিশনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার আরেফিন জুয়েলকে নির্দেশ দেন। পুলিশের একটি টিম ভুয়া ফেসবুক আইডিগুলো পর্যালোচনা করে আসামি শনাক্তে কাজ শুরু করে।
বুধবার সকালে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বোয়ালিয়া মডেল থানার মকবুল হালদার মোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে জুয়েলকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
আরএমপি কমিশনার বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জুয়েল ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। আসামির ব্যবহৃত তিনটি আইডি আলাদা নামে হলেও তিনি নিজেই তিনটি চরিত্রে অভিনয় করে মেয়েটির সঙ্গে বিভিন্নভাবে প্রতারণা করে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।
জুয়েল আরও জানান, তার ৯টি ভুয়া ফেসবুক আইডি আছে। ওই মেয়ের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া টাকা দিয়ে নিজ গ্রামে একটি গরুর খামার দিয়েছেন এবং জমি কিনেছেন।
এ ঘটনায় আরএমপির কাটাখালী থানায় প্রতারণার মামলা হয়েছে।