বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

১৮৩ বছরের বাগান কবরস্থান

  • সাবিহা ইশরাত জাহান স্টেলা, মেরিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র   
  • ১৩ অক্টোবর, ২০২১ ২১:১৫

গ্রিনমাউন্ট সিমেটারিতে শায়িত প্রথম কবর দু’বছর বয়সী ওলিভিয়া কাশিং উইটরিজের। এখানে বিখ্যাত সব ব্যক্তি, কুখ্যাত কিছু ব্যক্তির কবরও রয়েছে। আর এ মুহূর্তে শায়িত আছেন ৬৫ হাজার জন।

সুরম্য এক বাগান। যেরকম বাগান বা পার্কের দেখা হরহামেশাই মেলে যুক্তরাষ্ট্রের সাজানো-গোছানো শহরগুলোয়। তবে বাগানটির কিছু বিশেষত্ব তো আছেই। নইলে আর দেখতে আসা কেন?

পাহাড়ি এলাকার পার্কটিতে ঢোকার একটু পরই অভ্যর্থনা জানাবে সুবজ রঙা এক পরী। কিছুদূর হাঁটতেই বুঝতে পারা যায়, অন্যান্য পার্কের সঙ্গে এর পার্থক্য।

গাছের ফাঁকে ফাঁকে নজরে পড়বে সারি সারি গ্রেভস্টোন বা সমাধিস্তম্ভ। তবু, যেন ঠাহর করতে পারা যায় না, আসলেই এটি কোনো গোরস্থান না বাগান? এর নান্দনিক রূপ দেখে এটিকে দর্শকের সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গিতে বারবারই বাগান বলে ভুল হয়।

এমনই এক গোরস্থান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম রুরাল গার্ডেন সিমেটারির মধ্যে অন্যতম, মেরিল্যান্ড রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত গ্রিনমাউন্ট সিমেটারি। খুব বেশি নয়। এই গার্ডেন সিমেটারি বা বাগান গোরস্থানের বয়স মোটে ১৮৩ বছর। তবু তো একটি গোরস্থানই। কী এমন বিশেষত্ব এর যার জন্য এটির কথা বহু বছর ধরেই উঠে আসে সংবাদ আকারে?

ধরা যাক আপনি একজন ‘বিজার ট্রাভেলার’। অর্থ্যাৎ বেড়াতে বেরিয়ে গতানুগতিক পর্যটকেঠাসা জায়গাগুলো আপনাকে কখনোই আকর্ষণ করে না। পছন্দের তালিকায় থাকে অদ্ভুত কিছু জায়গা। যার ঐতিহাসিক গুরুত্ব, ঝাঁ চকচকে টু্রিস্ট স্পট থেকে অনেক বেশি। এমনকি, এমনসব জায়গা যা স্থানীয়দের সম্পর্কে জানতে খুব বেশি সাহায্য করে। সেক্ষেত্রে এই গ্রিন মাউন্ট সিমেটারি বা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এ ধরণের বাগান সদৃশ গোরস্থান আদর্শ জায়গা। ম্যাসাচুসেটসের মাউন্ট অবার্ন সিমেটারি দেখে এসে মেরিল্যান্ডে একই ধরণের গোরস্থান প্রতিষ্ঠা করতে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৬০ একর জায়গা কিনে ফেলেন, তামাক বণিক স্যামুয়েল ওয়াকার। সময়টা ১৮৩৮ সাল।

পরে, কিছু ধনকুবের বন্ধুর সঙ্গে আলাপ করে ১৮৩৯ সালে গ্রিন মাউন্ট নাম দিয়ে রাজ্য সংসদে অনুমোদনের মাধ্যমে দান করেন সাধারণের জন্য। শর্ত একটাই, প্রোপাইটার বা রক্ষক যেই হোক না কেন, তাদের দায়িত্ব হবে এর সৌন্দর্য বর্ধন করে যাওয়া। যা বছরের পর বছর ধরে একে আউটডোর গ্যালারি অফ আর্টস অ্যান্ড আর্কিটেকচার বা সহজ ভাষায় শিল্প ও স্থাপত্যের এক অনিন্দ্য সুন্দর দর্শনীয় স্থানে পরিণত করেছে। বিশাল এই কবরস্থানে গিয়ে ঢোকার মুখেই মিলে যায় রুট ম্যাপ বা নির্দেশিকা।

দর্শনার্থী হিসেবে চলা যাবে নির্দেশিকা মেনে। এলোমেলো ঘুরলেও কোনো সমস্যা নেই। দুর্দান্ত সুন্দর সব ভাস্কর্য, কবরের নকশা বা সমাধলিপি অথবা এপিটাফ, দেখতে দেখতে আর পড়তে পড়তে অবাক, আবেগআপ্লুত আর মুগ্ধ হতেই হয়।

বারবার মনে প্রশ্ন জাগে, তবে সমাধিক্ষেত্রও এমন হওয়া সম্ভব? কোনটা রেখে কোনটা দেখা যায়! এই হয়তো স্বর্গদ্বাররক্ষীর ভাস্কর্যের সৌন্দর্যে বিমোহিত হওয়া শুরু হলো তখনই অচেনা এক পাখির ডাকে চোখ ফেরাতেই দেখা মিলল অদ্ভুত এক দেবশিশুর। যে বসে আছে কোনো এক শিশুর কবরের ওপরে।

গ্রিনমাউন্টের মূল নকশাকার তিনজন স্থপতি। যাদের মধ্যে দুজন আবার নিজেদের শেষ ঠিকানা হিসেবে এই কবরস্থানকেই বেছে রেখেছিলেন কাজের শুরুতে। এখানে শায়িত প্রথম কবরটি দু’বছর বয়সী ওলিভিয়া কাশিং উইটরিজের। এ মুহূর্তে শায়িত আছেন ৬৫ হাজার জন।

ভেতরে আছে অপূর্ব স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত একটি চ্যাপেল বা খ্রীস্টিয় ভজনালয়। আকৃতি বিশাল হওয়ায়, ফুলের নাম বা বিশেষ শব্দ দিয়ে চিহ্নিত করা আছে জায়গাগুলো। যেমন, ডেইজি বা ওয়ালনাট এরিয়া। অসংখ্য বিখ্যাত মানুষ চিরনিদ্রায় আছেন গ্রিন মাউন্টে। যুক্তরাষ্ট্রে ফিলানথ্রপিস্ট বা পরোপকারীরা বরাবরই সমাজে বিশেষ অবদান রাখেন। যাদের মধ্যে এই অঞ্চলের অনেকেরই কবর আছে এখানে। যার মধ্যে আবার অন্যতম হলো, চিকিৎসা বিজ্ঞানে গবেষণার জন্য বিশ্বখ্যাত জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা জনস হপকিন্সের কবর।

আছেন রাজনীতিক, ব্যবসায়ী নেতা, মিলিটারি সদস্য, লেখক, গবেষক, গভর্নর ও মেয়রসহ অসংখ্যা মানুষের কবর। কুখ্যাত ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন এক মার্কিন প্রেসিডেন্টকে হত্যার ষড়যন্ত্রকারী ও তার সহকারীর কবরও। পাহাড়ি এই কবরস্থানটির সর্বোচ্চ স্থানের উচ্চতা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১৯০ ফুট ওপরে।

গ্রিনমাউন্ট পক্ষী বিশারদ ও গবেষকদের জন্যও একটি প্রিয় জায়গা। লোকালয়ে দেখা মেলে না এমন কিছু পাখির অভয়ারণ্য এই বাগান সদৃশ গোরস্থানটি। সুসজ্জিত ওক, মেপল, ওয়ালনাট, লিন্ডেন, চেস্টনাট বা বিচ গাছের ছায়াতলে শতবর্ষ ধরে শায়িতরা যে একটুও একঘেঁয়ে বোধ করেন না তা ওখানেই গেলেই বোঝা যায়।

১৯৮০ সালে গ্রিনমাউন্টকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার ফর হিস্টোরিক প্লেসেসে’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একই রকম জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হলে এই গার্ডেন সিমেটারিটিই হতে পারে একদম ভিন্নস্বাদের একটি পর্যটকস্থল।

এ বিভাগের আরো খবর