বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মুদি দোকানদার থেকে রাতারাতি ওভারসিজ প্রতিষ্ঠানের মালিক

  •    
  • ১৩ অক্টোবর, ২০২১ ১৬:৩৮

এইচএসসি পাস টুটুল মেহেরপুরের গাংনী থানার কামন্দী গ্রামে মুদি দোকানদার হিসেবে কাজ করতেন। মাঝে মাঝে তিনি ঢাকায় আসতেন। অল্প সময়ে বেশি টাকার মালিক হওয়ার লোভে ধীরে ধীরে মানব পাচারকারী একটি চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি।

মানব পাচার করে অল্প সময়ে ওভারসিজ প্রতিষ্ঠানের মালিক বনে যাওয়া একটি চক্রের আটজনকে আটক করেছে র‌্যাব।

রাজধানীর বাড্ডা এলাকার তিনটি অফিসে অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার মধ্যরাতে তাদের আটক করা হয়।

ওই আটজন হলেন সাইফুল ইসলাম ওরফে টুটুল, তৈয়ব আলী, শাহ্ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন লিমন, মারুফ হাসান, জাহাঙ্গীর আলম, লাল্টু ইসলাম, আলামিন হোসাইন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর বাড্ডা এলাকার টুটুল ওভারসিজ, লিমন ওভারসিজ ও লয়্যাল ওভারসিজে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে র‌্যাব। সে সময় তাদের জিম্মায় থাকা চারজনকে উদ্ধার করা হয়।

অভিযানে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে পাসপোর্ট, মোবাইল, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক, কম্পিউটার ও টাকা জব্দ করা হয়।

র‌্যাব জানায়, ওই চক্রের হোতা টুটুল। তিনি তার সহযোগী তৈয়বের মাধ্যমে অন্য সদস্যদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যে প্রতারণার মাধ্যমে মানব পাচার করে আসছিলেন।

কারওয়ান বাজারে বুধবার দুপুরে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সম্প্রতি কয়েকজন নারী ভুক্তভোগীর অভিভাবক মধ্যপ্রাচ্যে মানব পাচারে জড়িত এই চক্র সম্পর্কে র‌্যাব-৪-এ অভিযোগ করেন। এর পর থেকেই চক্রটিকে ধরতে গোয়েন্দা নজরদারি চালাচ্ছিল র‌্যাব।

কোন কৌশলে প্রতারণা

চক্রটির প্রতারণার কৌশল জানাতে গিয়ে র‌্যাব-৪-এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘প্রতারক টুটুল ও তৈয়বের নির্দেশে এই চক্রের অন্য সদস্যরা টার্গেট সংগ্রহের কাজ করত। দেশের বেকার ও অসচ্ছল তরুণ-তরুণীদের টার্গেট করত তারা। এরপর তাদের সৌদি আরব, জর্ডান, লেবাননসহ বিভিন্ন দেশের বাসাবাড়িতে লোভনীয় বেতনে কাজ দেয়ার নাম করে চক্রের হোতা টুটুল ও সহযোগী তৈয়বের কাছে নিয়ে আসত।

‘টুটুল ও তৈয়ব বিদেশ পাঠানোর নাম করে প্রত্যেকের কাছ থেকে ২ থেকে ৫ লাখ টাকা করে নিত। এরপর ভিকটিমদের আস্থা অর্জন করতে ভুয়া প্রশিক্ষকের মাধ্যমে তারা ভিকটিমদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করত। এ ছাড়া ভিকটিমদের পাসপোর্ট তৈরির সঙ্গে সঙ্গে ভুয়া মেডিক্যাল টেস্টও করত চক্রটি। এভাবে একসময় তাদের বিদেশ পাঠাত চক্রটি। কিন্তু বিদেশে যাওয়ার পর ভিকটিমরা বুঝতে পারতেন অনৈতিক কাজ করানোর জন্য তাদের বিক্রি করে দেয়া হয়েছে।’

দেশে চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণা

বিদেশে মানব পাচার ছাড়াও চক্রের হোতা টুটুলের সহযোগী তৈয়ব দেশে চাকরির নামে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন বলে জানান র‌্যাব-৪-এর অধিনায়ক।

তিনি বলেন, তৈয়ব নিজেকে স্বনামধন্য এয়ারলাইনসের ম্যানেজার হিসেবে পরিচয় দিতেন। তার সঙ্গে জড়িত চক্রের কিছু সদস্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণীদের উচ্চ বেতনে লোভনীয় চাকরির কথা বলে কার্যালয়ে নিয়ে আসতেন। তৈয়ব দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠানে ভুয়া চাকরির নিয়োগপত্র দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিলেন।

টুটুল-তৈয়বের উত্থান

টুটুল ও তৈয়বের উত্থান নিয়ে মোজাম্মেল হক জানান, এইচএসসি পাস টুটুল মেহেরপুরের গাংনী থানার কামন্দী গ্রামে মুদি দোকানদার হিসেবে কাজ করতেন। মাঝে মাঝে তিনি ঢাকায় আসতেন। অল্প সময়ে বেশি টাকার মালিক হওয়ার লোভে ধীরে ধীরে মানব পাচারকারী একটি চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। পরে দালাল হিসেবে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশে লোক পাঠানোর কাজ করতে থাকেন।

পরবর্তী সময়ে নিজেই রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় প্রতারণামূলকভাবে টুটুল ওভারসিজ, লিমন ওভারসিজ ও লয়্যাল ওভারসিজ নামে তিনটি ওভারসিজ এজেন্সির অফিস খোলেন টুটুল। সেই অফিসে বসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বেকার এবং শিক্ষিত নারী ও পুরুষকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে লাখ লাখ টাকা প্রতারণামূলকভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।

র‌্যাব জানায়, টুটুলের এ প্রতারণার কাজে অন্যতম দালাল বা সহযোগী আবু তৈয়ব। তিনি পড়ালেখা জানেন না। তার একটি চায়ের দোকান ছিল। টুটুলের প্ররোচনায় তৈয়ব মানব পাচারকারী চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।

এই প্রতারক চক্রের ৮ সদস্যের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান মোজাম্মেল হক।

এ বিভাগের আরো খবর