দেশে অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি এর সঙ্গে বসবাস করা শিখতে দেশবাসীকে পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বন্যার কিছু উপকারী দিকও তুলে ধরেছেন তিনি।
আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে বুধবার ঢাকায় উসমানী মিলনায়তনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণায়ের অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যান হাতে নিয়েছি। তার ৮০টা প্রকল্পের বাস্তবায়নের কাজ আমরা শুরু করেছি। তবে এখানে নদী ভাঙনের জন্য… তবে মনে রাখতে হবে বন্যা আমাদের পলি দেয়। আমাদেরকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং বন্যার সঙ্গে বসবাস করা শিখতে হবে। আমাদেরকে জলাধার তৈরি করতে হবে, যাতে জলাধারে পানি থাকে।
‘আমাদের দুর্যোগপ্রবণ এলাকা আর এজন্য আমরা অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি। বাংলাদেশ একটা বদ্বীপ। পলি মাটি দ্বারা গঠিত। এই অঞ্চলের মানুষ ভবিষ্যতে যাতে কোনো কষ্ট না পায় তাই ২১০০ সালের বদ্বীপের উন্নয়নের কাজ হাতে নিয়েছি।’
নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে সব নদীতে ড্রেজিং করা হচ্ছে এবং মানুষের বসতবাড়ি যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ২০২২ সালের মধ্যে ৫১০ কিলোমিটার নদী ড্রেজিংয়ের পরিকল্পনা নিয়েছি। ৪ হাজার ৮৮৩ কিলোমিটার খাল খনন, বন্যা নিয়ন্ত্রণে বাধ নির্মাণের প্রকল্পের কাজ করে যাচ্ছি।
‘আমরা চাই বাংলাদেশ এগিয়ে যাক। বাংলাদেশ আজকে সারা বিশ্বে ঝুঁকি মোকাবিলায় আদর্শ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। আমাদের এই সম্মানটা যেন বজায় থাকে ভবিষ্যতে সেই বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে বন্যা, নদী ভাঙন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় ত্রাণ সহায়তা হিসেবে ৬১ হাজার ৫১৩ মেট্রিকটন চাল, ১৩০ কোটি ৫৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা নগদ সহায়তা, ৩৭ হাজার ৫০০ পাউরুটি ও অন্যান্য খাবার, ১ হাজার ৩০০ বান্ডেল ঢেউ টিন, ২ কোটি ২০ লাখ ৩৪ হাজার শিশুখাদ্য, ৬ কোটি ৫৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘মানুষের খাদ্য চাহিদার যাতে কোনোরকম অভাব না হয় তার জন্য ব্যাপক হারে খাদ্য উৎপাদনের ওপর আমরা গুরুত্ব দিয়েছি এবং কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা দিয়েছি।’
মানবসৃষ্ট দুর্যোগ নিয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা। বলেন, খুব দুর্ভাগ্যের বিষয় যে মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগও হয়। যেমন অগ্নি সন্ত্রাস, যে ব্যাপকভাবে অগ্নি সন্ত্রাস শুরু হয়েছিল বিএনপি ও জামায়াত মিলে। জীবন্ত মানুষগুলোকে আগুনে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মারত তাদেরকে সাহায্য করা, চিকিৎসা দেয়া, নিয়ে আসা। কোন বিল্ডিং ভেঙে পড়লে সেখান থেকে উদ্ধার করা এই সমস্তা কাজ, ট্রেনিং এর ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি যেটা জাতির পিতা আমাদের শিখিয়েছেন।’
আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বুধবার সকাল ১১টায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন।
এসময় প্রধানমন্ত্রী ঘূর্নিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৫০ বছর পদার্পণ উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানান।
অনুষ্ঠানে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ৫০ বছর: বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা’ শীর্ষক প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হয়। সিপিপির ৫০ বছর উপলক্ষে স্বেচ্ছাসেবক সংগঠক ও স্বেচ্ছাসেবককে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয়।
সিপিপির আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন তিনজন-সাইদুর রহমান, এ কে এম হারুন আর রশিদ ও এ কে এম গোলাম রাব্বানী। আর আজীবন সেচ্ছাসেবক সম্মাননা পেয়েছেন ছয়জন- শোভা রানী দাস, রত্না রানী দে, হায়া বেগম, ফজলুল করিম, আব্দুল হাশেম সিরাজ কাজী ও হানিফ মিয়া।
এসময় সিপিপি স্বেচ্ছাসেবকদের মহড়াও দেখানো হয়। প্রধানমন্ত্রী সিপিপির দ্রুত সাড়াদান ইউনিট, পানি থেকে উদ্ধার ইউনিট, অতি জোয়ার মনিটরিং ও সাড়াদান ইউনিট ও খেলায় খেলায় দুর্যোগ প্রস্তুতির উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৯১ সালে যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল তখন যে ব্যাপক ঘূর্ণিঝড় হয়ে গিয়েছিল সে ব্যাপারে কোনোরকম ধারনা বা প্রস্তুতি ছিল না। এমনকি আমাদের বিমানবাহিনী তারাও সতর্কতা ছিল না।’
‘আমাদের একটা সুবিধা ছিল যে সারা বাংলাদেশে আমাদের একটা সংগঠন আছে। ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে সঙ্গে আমি ভোর রাত থেকে খবর পেতে শুরু করি ও উদ্যোগ নেই। সেসময় বিএনপি জানেই না এমন একটা ঘটনা হয়ে গেছে।’