বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিতে আওয়ামী সংশ্লিষ্টরা

  •    
  • ১৩ অক্টোবর, ২০২১ ০৯:৫২

পদবঞ্চিতদের অভিযোগ, দলের দুঃসময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে যারা রাজপথে নেতৃত্ব দিয়েছেন, মিথ্যা মামলা ও কারাগারে থেকেছেন তাদেরকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান ও সরকারদলের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্তদের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে।

গাজীপুর মহানগরের আটটি থানা ও একটি সাংগঠনিক থানায় স্বেচ্ছাসেবকদলের নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটিতে দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান ও কর্মীদের পদ পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

৩ অক্টোবর গাজীপুর মহানগরের এসব কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর গত এক সপ্তাহ ধরে মহানগরীর টঙ্গী, কোনাবাড়ি, বাসন, সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ ও ঝাড়ু মিছিল করেছেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা।

মহানগর স্বেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি আরিফ হোসেন হাওলাদার ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শাহীনের বহিষ্কারের দাবিও জানিয়েছেন তারা।

পদবঞ্চিতদের অভিযোগ, দলের দুঃসময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে যারা রাজপথে নেতৃত্ব দিয়েছেন, মিথ্যা মামলা ও কারাগারে থেকেছেন তাদেরকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান ও সরকারদলের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্তদের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে।

তাদের দাবি, আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে বিতর্কিতদের কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবকদলের নেতা-কর্মীরা জানান, নতুন এসব কমিটির ঘোষণার চারটিতে মহানগরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর রয়েছে। বাকি পাঁচটি কমিটি কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকদলের দপ্তর সম্পাদক রফিকুল ইসলামের স্বাক্ষরে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

তারা আরও জানান, এসব কমিটিতে অন্তত এক ডজনের বেশি বিতর্কিত ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন। এমনকি কেউ কেউ আছেন তারা জানেনই না তাদেরকে কমিটিতে রাখা হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে সংগঠনের অনেক নেতা-কর্মী বিষোদগার করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতারা। মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে বিষয়টি সমাধানে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকদলের কাছে একটি চিঠিও পাঠানো হয়েছে।

সংগঠনের নেতা-কর্মীরা জানান, টঙ্গী পূর্ব থানা স্বেচ্ছাসেবকদলের আহ্বায়ক করা হয়েছে আরিফুল হক প্রধান সুবেলকে। তার বাবা অবিভক্ত টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা বজলুল হক মন্টু প্রধান।

এ ছাড়া সুবেলের চাচাতো ভাই লিটন প্রধান টঙ্গী থানা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সহসভাপতি। তার আপন ছোট ভাই প্রিন্স প্রধান টঙ্গী থানা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী।

ত্রাণ দিচ্ছেন টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা বজলুল হক মন্টু প্রধান। পেছনে নীল টি-শার্ট পরা সুবেল

বিভিন্ন সময় টঙ্গী থানা যুবলীগ নেতা বিল্লাল হোসেন মোল্লা ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মামুন মোল্লার সঙ্গে মিছিল-মিটিংয়ে অংশ নেওয়ার ছবিও পাওয়া যায় সুবেলের। করোনার সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে দেয়া ত্রাণ বিতরণেও দেখা গেছে তাকে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে সুবেলের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্টু প্রধান আমার বাবা নয়। আমি অনেক অসুস্থ। পরে কথা বলব।

এ কথার পরই ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন সুবেল। পরে আর কল ধরেননি তিনি।

টঙ্গী পশ্চিম থানা স্বেচ্ছাসেবকদলের কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে মনির হোসেনকে। তার বড় ভাই হারুন অর রশিদ ৫৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য। এর আগে টঙ্গী থানা ছাত্রলীগের স্কুল ও ছাত্রবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন হারুন। তৎকালীন সময়ে টঙ্গী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনের হাতের কব্জি কেটে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে হারুনের বিরুদ্ধে।

মনির হোসেন বলেন, ‘আমার ভাই হারুন অর রশিদ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এক সময় ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন, কিন্তু আমি কখনও ছাত্রলীগ করিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রলীগ করার সময় আমার ভাইকে ছাত্রদল নেতা ও চাঁদাবাজ দেলোয়ার কুপিয়ে আহত করে। পরবর্তীতে সুস্থ হয়ে আমার ভাই দেলোয়ারের হাতের কব্জি কেটে নেয়। আর আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে যেসব ছবি ফেসবুকে ছড়িয়েছে সেগুলো কোনো রাজনৈতিক মিছিলের ছবি না।’

টঙ্গী পূর্ব থানা স্বেচ্ছাসেবকদলের সদস্য রেজাউল ইসলাম রাসেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে তিনি বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের কেক কেটে উদযাপন করেছেন। এ নিয়ে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মহানগরীর ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের আহ্বায়ক মনির হোসেন সাগরের সঙ্গে কেক কাটছেন তিনি।

স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মামুন মোল্লার সঙ্গে মিছিলে টঙ্গী পূর্ব থানা স্বেচ্ছাসেবকদলের আহ্বায়ক আরিফুল হক প্রধান সুবেল। ছবি: সংগৃহীত

টঙ্গী পূর্ব থানা স্বেচ্ছাসেবকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মুকলেছুর রহমানের বিরুদ্ধে রয়েছে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ। গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সিটি করপোরেশনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের সঙ্গে নানা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে দেখা গেছে মুকলেছুরকে।

টঙ্গী পশ্চিম থানা স্বেচ্ছাসেবকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল হান্নানকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী হাসান উদ্দিনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রয়াত সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টারের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেখা গেছে।

গাজীপুর মহানগর বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের সহসভাপতি হাফিজুর রহমানও পদ পেয়েছেন বাসন থানা স্বেচ্ছাসেবকদলের কমিটিতে।

মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক আশিককে কাশিমপুর থানা স্বেচ্ছাসেবকদলের কমিটিতে ৪ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। অথচ আশিক জানেন না তাকে কমিটিতে রাখা হয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবকদলের কমিটিতে পদ দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুকে পোস্টও দিয়েছেন আশিক। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের একাধিক ব্যক্তিকে কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার অভিযোগ পদবঞ্চিতদের।

অভিযোগের বিষয়ে গাজীপুর মহানগর স্বেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি আরিফ হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘যারা বিক্ষোভ করছে তারা স্বেচ্ছাসেবকদল করে না। কেউ কেউ থাকতে পারে। হয়তো তারা কাঙ্ক্ষিত পদ পায়নি। এরা আওয়ামী লীগের এজেন্টও হতে পারে।’

আওয়ামী পরিবারের ছেলে সুবেল প্রধানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দলে এমন কোনো গঠনতন্ত্র নাই যে কারও বাবা-দাদা অন্য দল করলে সে স্বেচ্ছাসেবকদল করতে পারবে না৷ প্রত্যেকটি থানায় ৩১ সদস্য বিশিষ্ট সীমিত কমিটি করা হয়েছে৷ অনেককেই কমিটিতে রাখা সম্ভব হয়নি। আর যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, সেসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকদলের সহসভাপতি ও ঢাকা বিভাগীয় দলের প্রধান আবুল কালাম আজাদের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

গাজীপুর মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব সোহরাব উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অঙ্গসহযোগী সংগঠনের কমিটির ব্যাপারে আমাদের মতামত নেওয়া হয় না। এ ক্ষেত্রেও আমাদের কোনো সুপারিশ নেওয়া হয়নি। স্বেচ্ছাসেবকদলের বিভাগীয় ও কেন্দ্রীয় কমিটি যাচাই-বাছাই করে কমিটি দিয়েছে।

‘এখানে মহানগর বিএনপির ভূমিকা নেই। আমরা কমিটিকে কেন্দ্র করে নেতা-কর্মীদের রাগ-অভিমান নিরসনের চেষ্টা করছি। সঠিক নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার জন্য আমরা কেন্দ্রকে জানিয়েছি। আশা করছি খুব শিগগিরই বিষয়টা সমাধান হয়ে যাবে।’

এ বিভাগের আরো খবর