বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দখল-দূষণে মৃত উত্তাল খিরু নদী

  •    
  • ১৩ অক্টোবর, ২০২১ ০৯:০৮

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘ভালুকা উপজেলায় তিন শতাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সবটাতেই বর্জ্য শোধনাগার রয়েছে। তবে বেশির ভাগের মান ভালো না। ভালোভাবে বর্জ্য শোধন করা হচ্ছে না। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান খিরু নদীর পানিতে বর্জ্য ফেলে দূষিত করছে।’

দেড় দশক আগেও খিরু নদীর বুকচিরে চলত লঞ্চ ও পালতোলা নৌকা। স্বচ্ছ টলমলে পানিতে পাওয়া যেত বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এলাকার কৃষিকাজে ব্যবহৃত হতো ওই পানি। নদীর জলেই গোসল সারতেন দুই পারের বাসিন্দারা।

শিল্প-কারখানার দূষণে সেসব শুধুই স্মৃতি। স্বচ্ছ পানি আলকাতরার রং ধারণ করে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। দখল আর দূষণে ময়মনসিংহের ভালুকায় খিরু নদী পরিণত হয়েছে সংকীর্ণ খালে।

সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে দ্রুত নদীটি খননের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।

উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের পাড়াগাঁও গ্রামের কৃষক জমির উদ্দিন বলেন, ‘আগে এই নদীর পানি দিয়ে জমি চাষ করেছি। সাঁতার কেটে গোসল করেছি। সময়ের ব্যবধানে নদীর দৃশ্য পাল্টে পানি কালো কুচকুচে রং ধারণ করেছে।’

তিনি বলেন, ‘এখন এই পানি কোনো ফসলেই ব্যবহার করা যায় না। স্পর্শ করলে চুলকানি হয়।’

একই গ্রামের বাসিন্দা আফাজ উদ্দিন বলেন, ‘প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় শিল্প-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য অবাধে নদীর পানিতে ফেলা হচ্ছে। ফলে কোনো ধরনের মাছ নদীতে নেই।’

পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন আন্দোলনের ময়মনসিংহ শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শিব্বির আহমেদ লিটন বলেন, ‘প্রশাসনের নাকের ডগায় বছরের পর বছর ধরে ভালুকায় গড়ে ওঠা শিল্প-কারখানাগুলোর বর্জ্যে দূষিত হয়েছে খিরু নদী। নদীটিকে দখল ও দূষণের কবল থেকে রক্ষা করতে প্রশাসনকে বারবার বলেছি। অথচ অজানা কারণে প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জেসমিন জাহান বলেন, ‘কারখানার বর্জ্যমিশ্রিত পানিতে অ্যালুমিনিয়াম বেশি থাকে। এ ছাড়া কেমিক্যাল ও ধাতব পদার্থ থাকে। ফলে এ পানি কৃষিজমিতে ব্যবহার করা যাবে না। যদি ব্যবহার করা হয় তাহলে পাতা মরে ফলন নষ্ট হবে।’

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল বাকিউল বারী বলেন, ‘খিরু নদীর দৈর্ঘ্য ৪৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে গাজীপুরের শ্রীপুর সীমান্ত থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটারজুড়ে ভালুকার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে এ নদী। অনেক বছর ধরে দখল ও দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদীটি।’

তিনি বলেন, ‘দখল হওয়া জায়গাগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। খুব দ্রুত দখলকারীদের তালিকা করে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। বর্জ্য ফেলে পরিবেশ নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

ভালুকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালমা আক্তার বলেন, ‘এ বছরের ১২ জুন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম খিরু নদী পরিদর্শন করেছেন। নদীটি খনন করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আশা করছি, দ্রুত খননকাজ শুরু হবে।’

পরিবেশ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘ভালুকা উপজেলায় তিন শতাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সবটাতেই বর্জ্য শোধনাগার রয়েছে। তবে বেশির ভাগের মান ভালো না। ভালোভাবে বর্জ্য শোধন করা হচ্ছে না। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান খিরু নদীর পানিতে বর্জ্য ফেলে দূষিত করছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায়ই এসব প্রতিষ্ঠানকে মোটা অঙ্কের জরিমানা করছি। সম্প্রতি টাইটেল বাংলা, মাহদী ও আকিজ গ্রুপসহ সাতটি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে এক কোটি টাকার বেশি জরিমানা করা হয়েছে। নদীটিকে রক্ষার স্বার্থে সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে তদারকি বাড়ানো হয়েছে। কোথাও বর্জ্য শোধনাগার না থাকলে কিংবা সঠিকভাবে বর্জ্য শোধন না করলে জরিমানার পাশাপাশি অধিদপ্তরে লিখিতভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর