সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটি নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে। টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের নিয়ে কমিটি করার অভিযোগ করেছে সংগঠনের একাংশ।
মঙ্গলবার দুপুরে কমিটি ঘোষণার পর বিকেলে নগরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ছাত্রলীগের একটি অংশ। এ ছাড়া নতুন করে কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া একাধিক ছাত্রলীগ নেতা পদত্যাগ করেছেন।
স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা জানান, প্রায় চার বছর পর মঙ্গলবার সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। দুপুরে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত চিঠিতে জেলা ও মহানগর কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়।
এতে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের নতুন সভাপতি হয়েছেন মো. নাজমুল ইসলাম আর সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন রাহেল সিরাজ। মহানগর ছাত্রলীগে কিশোয়ার জাহান সৌরভকে সভাপতি ও নাঈম হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।
কমিটি দেয়ার পর সভাপতির পদ পাওয়া দুই বলয়ে উচ্ছ্বাস দেখা দিলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন সিলেট ছাত্রলীগের অন্য বলয়গুলোর নেতা-কর্মীরা।
তাদের অভিযোগ, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এ কমিটি দেয়া হয়েছে।
জেলা ছাত্রলীগের সবশেষ কমিটির সভাপতি শাহারিয়ার আলম সামাদ অভিযোগ করে বলেন, ‘জেলা ও মহানগর কমিটির শীর্ষ চারটি পদ ৩০ লাখ করে ১ কোটি ২০ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যাদের পদ দেয়া হয়েছে তারা কোনো ছোট গাড়িস্ট্যান্ডের কমিটি পরিচালনারও যোগ্যতা রাখেন না। এ ছাড়া তারা অছাত্র।’
কমিটিতে যোগ্যদের মূল্যায়ন করা হয়নি এবং জেষ্ঠ্যতা লঙ্ঘন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ তার।
এরপর বিকেল ৪টার দিকে নগরীর তেলিহাওর থেকে কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শতাধিক নেতা-কর্মী। মিছিলটি নগরীর জিন্দাবাজার আল-হামরা মার্কেটের সামনে পৌঁছানোর পর পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। পরে তারা চৌহাট্টা পয়েন্টে গিয়ে গাড়ির টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। কিছু সময় সড়ক অবরোধ শেষে ফিরে যান তারা।
‘অন্তর্দ্বন্দ্ব’ থেকে বিক্ষোভ
নতুন কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভকারীরা স্থানীয় ছাত্রলীগের একটি নির্দিষ্ট বলয়ের বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা-কর্মী। তারা সিলেটে ‘তেলিহাওর গ্রুপ’ নামে পরিচিত। এই বলয়ের নেতা সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।
তারা জানান, কমিটিতে তেলিহাওর গ্রুপের রাহেল সিরাজকে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ দেয়ায় গ্রুপের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তেলিহাওর গ্রুপের বড় অংশের নেতা-কর্মীরা রাহেল সিরাজের পরিবর্তে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে চেয়েছিলেন জাওয়াদ ইবনে জাহিদ খানকে।
তবে জাওয়াদকে সাধারণ সম্পাদক না করে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করায় তার অনুসারীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া একাধিক নেতার পদত্যাগ
জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার পাশাপাশি সিলেটের ৬ ছাত্রলীগ নেতাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যও করা হয়েছে। তারা সবাই জেলা ও মহানগর কমিটির সভাপতি-সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন।
তাদের মধ্যে দুজন কমিটি প্রত্যাখান করে বিকেলেই পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। তার হলেন জাওয়াদ ইবনে জাহিদ খান ও মুহিবুর রহমান মুহিব।
কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যপদ পাওয়া অন্য চারজন হলেন বিপ্লব কান্তি দাস, কনক পাল অরূপ, হোসাইন মোহাম্মদ সাগর ও সঞ্জয় পাশী জয়।
কেন্দ্রীয় কমিটির পদ প্রত্যাখ্যানের বিষয়ে জাওয়াদ ইবনে জাহিদ খান বলেন, ‘ছাত্রলীগের যে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, এর মধ্যে পদ পেয়েছেন অনেক চাঞ্চল্যকর মামলার আসামি, ব্যবসায়ী, ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন এমন মানুষ। তাই আমার কাছে মনে হয়েছে সিলেটে রাজনীতি থেকে এখন অপরাজনীতি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।’
‘আমার মতো কর্মীদের মূল্যায়ন থাকে না। সঠিক মূল্যায়ন না পেলে প্রত্যাখ্যান করা ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় থাকে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানতে পারি, আমাকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মনোনীত করা হয়েছে, কিন্তু আমি জেলার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
‘কেন্দ্রীয় রাজনীতির কিছুতে আমার অংশগ্রহণ নেই। তাই আমি সে কমিটির সদস্যপদ প্রত্যাখ্যান করি। পদ প্রত্যাখ্যান করলেও সুষ্ঠু রাজনীতি যেহেতু করব, সহযোদ্ধাদের সঙ্গে দেখা হবে রাজপথে।’