ব্রাহ্ম স্কুল থেকে যাত্রা শুরু করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সুদীর্ঘ ইতিহাস নিয়ে কোনো বই নিয়ে জবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারেই। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে গ্রন্থাগারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক কোনো বই গ্রন্থাগারে রাখা হয়নি। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলোর চাহিদা অনুযায়ী অ্যাকাডেমিক বই থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস নিয়ে কোনো বই নেই। প্রতি বছর বই কেনার যে বাজেট দেয়া হয়, তাতে একডেমিক বই কিনতেই সব টাকা শেষ হয়ে যায়।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস সম্পর্কিত বই খুঁজতে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী।
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান আপন জানান, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির ক্যাটালগ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্ণার, মুক্তিযুদ্ধ কর্ণারসহ সব জায়গায় খুঁজেও তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক কোনো বই খুঁজে পাননি।
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে সেই সম্পর্কিত বইয়ের খোঁজে গিয়েছিলাম কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে। কিন্তু অনেক খুঁজেও পেলাম না। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস সম্পর্কিত কোনো বই তার কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে নেই, এটা মানা যায় না। এতে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস সম্পর্কে জানার আগ্রহে ভাটা পড়ে।’
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আম্মান সিদ্দিকী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জানার আগ্রহ থেকে বইয়ের খোঁজে গিয়েছিলাম কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে। কিন্তু অনেক খুঁজেও পাইনি। শুনেছিলাম, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েরই কয়েকজন শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত অনেকগুলো বই প্রকাশ করেছেন। সেগুলোও খুঁজে পেলাম না।’
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ফারজানা জীবন বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে কি শুধুই অ্যাকাডেমিক বই পড়ব? আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস সম্পর্কে জানার আগ্রহ আছে। সেটা জানাও আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। একটা ইতিহাস সমৃদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্কিত কোনো বই কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে নেই, এটা মেনে নেয়া যায়না। শিগগির এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. চৌধুরী শহীদ কাদেরের সম্পাদনায় ‘ব্রাহ্ম স্কুল থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ ও তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের অধ্যাপক মির্জা হারুণ-অর-রশিদ রচিত ‘স্মৃতি-বিস্মৃতির জগন্নাথ কলেজ’ নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস নিয়ে রচিত দুইটি বই থাকলেও সেগুলোও নেই কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চললেও বন্ধ রয়েছে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। পরীক্ষার সময়ে প্রয়োজন অনুযায়ী গ্রন্থাগার থেকে বই সংগ্রহ করে পড়ার সুযোগ না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রূপা খানম বলেন, ‘আমাদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে, অথচ কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি বন্ধ। আমরা বই সংকটে নানা সমস্যায় পড়ছি। সব বই তো বাইরে থেকে সংগ্রহ করা সম্ভবও না। পরীক্ষা চলার সময়ে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি বন্ধ রাখার এমন সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক।’
কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক ক্লাস ও শিক্ষা-কার্যক্রম বন্ধ থাকায় গ্রন্থাগার বন্ধ রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিলে গ্রন্থাগারও খুলে দেয়া হবে।
গ্রন্থাগারে বই না থাকার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক মো. এনামুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাজেট থেকে প্রতিটি বিভাগ আমাদের বই কিনে দেয়। আমাদের নিজেদের কোনো বই কেনার সুযোগ নেই। সাধারণত বিভাগগুলো আমাদের অ্যাকাডেমিক বইগুলোই দিয়ে থাকে। এজন্য হয়তো এ ধরনের বইগুলো আমাদের সংগ্রহে নেই। তবে জগন্নাথ কলেজের ইতিহাস সম্পর্কিত একটা বই থাকার কথা। ভালোভাবে খুঁজে দেখতে হবে।’
১৮৫৮ সালে মানিকগঞ্জের বালিয়াটির জমিদার জগন্নাথ রায় চৌধুরী পুরান ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জগন্নাথ পাঠাশালা। পাঠশালা থেকে দুই বছরের মাথায় ‘জগন্নাথ স্কুল’ শুরু হয়।
মাঝে কিছুদিনের জন্য নাম রাখা হয়েছিল ব্রাহ্ম স্কুল। পরে ১৮৭৮ সালে জগন্নাথ স্কুল, ১৮৮৪ সালে জগন্নাথ কলেজ, ১৯২১ সালে জগন্নাথ ইন্টারমিডিয়েট কলেজ, ১৯৬৮ সালে সরকারি জগন্নাথ কলেজ এবং ২০০৫ সালে জগন্নাথ কলেজকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হয়।
১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর জগন্নাথ কলেজ গ্রন্থাগারের প্রায় ৫০ শতাংশ দুর্লভ ও মূল্যবান বই দিয়ে দেয়া হয় ঢাবি গ্রন্থাগারে।