কাঁচা তেঁতুলের ভেতরটা হবে সবুজ আর পাকা তেঁতুলের গাঢ় খয়েরি। এভাবে দেখেই অভ্যস্ত এ এলাকার মানুষ।
তবে কুষ্টিয়ার খোকসায় হিজলাবট গ্রামে তিনটি প্রাচীন গাছ আছে যেগুলোর তেঁতুল দেখে বিস্মিত হতে হয়। বাইরে থেকে কিছু বোঝা যায় না। তবে ভেঙে দেখা যায় এই তেঁতুলের ভেতরটা একদম লাল।
সারা বছরই গাছ তিনটিতে দেখা যায়, থোকায় থোকায় তেঁতুল ধরে আছে। শিশু-কিশোররা সময়-অসময় নেই, উঠে পড়ে তেঁতুল পাড়তে। কেউ কেউ কুড়িয়ে নেয় গোড়ায় পড়ে থাকা তেঁতুল।
তেঁতুল হাতে নিয়েই আগে দেখা চাই, ভেতরে কতটা লাল। বার বার দেখেও যেন বিস্ময়ের ঘোর কাটে না।
এই তিন তেঁতুলগাছ নিয়ে নানান গল্পও ছড়িয়ে আছে গ্রামবাসীর মুখে মুখে।
এলাকার প্রবীণ মুন্সী মোকাররম হোসেন ঝান্টু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই হিজলাবট এলাকা একসময় জনশূন্য ছিল। বসতি ছিল গড়াই নদীর ধারে। নদী ভাঙতে ভাঙতে বসতি এদিকে সরে আসে। ব্রিটিশরা শুরু করে নীল চাষ। সেই সময়ের গাছ এগুলো।’
ঝান্টু জানান, এই তিন তেঁতুল গাছের মালিকানা কোনো ব্যক্তির নয়। যে যার মতো পেড়ে নেয়।
এমন ব্যতিক্রমী তেঁতুলের কথা শুনে আশপাশের এলাকা থেকেও অনেকে আসেন নিজে একবার দেখতে।
স্থানীয়দের দাবি, তেঁতুল গাছগুলো যেন সংরক্ষণ করা হয়।
ওসমানপুর ইউনিয়নের সাবেক সদস্য জাহানারা বেগম বলেন, ‘উদ্যোগ সরকারি হোক আর বেসরকারি, তেঁতুল গাছ সংরক্ষণ করতে হবে।’
স্থানীয় সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর জানান, দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি এর ঔষধি গুনও আছে। এই গাছগুলো টিকিয়ে রাখা দরকার। গাছ ঘিরে পর্যটন সম্ভাবনাও আছে।
স্থানীয় জাহিদ জামান বলেন, ‘রঙ লাল হলেও এই তেঁতুলের আলাদা গন্ধ নেই। স্বাদও অন্য তেঁতুলের মতোই। তবে কোনো কোনো সময় টকের সঙ্গে মিষ্টি স্বাদও পাওয়া যায়। আর পাকলে এই তেঁতুল গুড়ের মতো রঙ ধারণ করে, মিষ্টতাও বাড়ে।’
কুষ্টিয়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আহসান কবীর রানা বলেন, ‘প্রজননের সময় ক্রোমজমের বিন্যাসে ক্রসিং ওভার হওয়ায় নতুন বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি হয়ে থাকে। এই তেঁতুলের ক্ষেত্রেও এটা হতে পারে। অনেক সময় নতুন বৈশিষ্ট্য টেকসই হয় আবার বিলুপ্তও হয়ে যায়।
‘এসব প্রকৃতির খেলা। তবে এই লাল তেঁতুলের ক্ষেত্রে কী ঘটেছে তা জিনগত বিন্যাস পরীক্ষা করলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে। গবেষণা এবং সংরক্ষণের জন্য এই পরীক্ষা করা উচিত।’