২২ বছর আগে বাবার বাড়ি থেকে অভিমানে বেরিয়ে যান সালেহা আক্তার। এরপর তার আর কোনো খোঁজ পায়নি পরিবার।
সেই সালেহাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন এক আইনজীবী যিনি নিজেও বেশ কয় বছর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন।
সালেহা বেগমের বাড়ি জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ভাটারা ইউনিয়নের চর বাঙ্গালিপাড়া গ্রামে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, ছোটবেলা থেকেই তার মানসিক সমস্যা ছিল। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানসিক স্থিতি নষ্ট হতে থাকে। ২৬ বছর আগে সালেহার বিয়ে হয় সরিষাবাড়ী পৌরসভার মাইজবাড়ি গ্রামের রসুল মিয়ার সঙ্গে।
দাম্পত্য কলহের জেরে ১৯৯৯ সালের শুরুর দিকে তিনি বাবার বাড়ি চলে আসেন। পরিবারের সদস্যরা স্বামীর বাড়ি ফিরতে বললে তিনি অভিমানে বাড়ি ছাড়েন। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোথাও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি।
কিছুদিন আগে মুন্সিগঞ্জ শহরের কাটাখালি এলাকার আইনজীবী দেলোয়ার হোসেন যোগাযোগ করেন সরিষাবাড়ি থানায়। সালেহার বর্ণনা, বাবার নাম ও আংশিক ঠিকানা জানালে পরিবারের লোকজন তাকে শনাক্ত করেন।
থানার মাধ্যমে সোমবার বিকেলে সালেহাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
মুন্সিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী দেলোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সালেহা খালা ১০ বছর ধরে কাটাখালি এলাকায় একটি ঘরে থাকতেন। কীভাবে তিনি এখানে এলেন কেউ বলতে পারে না। আমরা মাঝে মাঝে তাকে খাবার দিতাম। সেই খাবার তিনি অন্য অসহায়দের দিয়ে দিতেন। রমজানের দিনে ইফতারি দিলে সেটিও গরিবদের দিয়ে দিতেন। তাকে দেখলে মায়া হতো।
‘একদিন খালার মুখে তার বাবার আর গ্রামের নাম শুনি। নেটে সার্চ করে সরিষাবাড়ি থানায় যোগাযোগ করলে তারা সব খোঁজ নিয়ে সালেহা খালাকে নিয়ে যায়।’
দেলোয়ার বলেন, ‘আমি অভিমান করে ক্লাস সেভেন থেকে অনার্স পর্যন্ত বাবা-মা থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম। এ সময় মানুষের সহায়তায় লেখাপড়া করে আইনজীবী হয়েছি। পরিবার থেকে দূরে থাকার কষ্টটা আমি বুঝি। সেই কষ্ট থেকেই বিবেকের তাড়নায় সালেহা খালাকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছি।’
এতদিন পর সালেহাকে ফিরে পেয়ে ভীষণ আনন্দিত তার পরিবার।
বড় ভাই সামছুল রাজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার একটাই বোন। হারানোর পর অনেক তালাশ করছি। না পায়ে তালাশ করা ছাড়ান দিছিলাম। এহন সালেহারে পায়ে আমরা অনেক খুশি। ওরে আর কোনোখানে যাবার দিমু না। আমার বোন আমার কাছে থাকব।’
ছোট ভাইয়ের ছেলে মো. মিলন বলেন, ‘২২ বছর আগে আমার ফুপু হারানো গেছিল। মুন্সিগঞ্জের উকিল আর পুলিশের সহায়তায় আমার ফুপুরে খুঁজে পেয়েছি। এডেই আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া।’
প্রতিবেশী নুরুন্নাহার বলেন, ‘আমরা তো হের আশা ছাইড়েই দিছিলাম। মনে করছি যে মারা গেছে। হের বয়স এহন ৬৫। তারে এহন আমরা আঙ্গর সন্তানের মতোই লালনপালন করমু, দেখমু।
২২ বছর পর সালেহার ফিরে আসার কথা শুনে অনেকেই তাকে দেখতে আসছেন। এভাবে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ায় ধন্যবাদ জানিয়েছেন ওই আইনজীবীকে।
সরিষাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর রকিবুল হক বলেন, ‘অ্যাডভোকেট সাহেবের মাধ্যমে আমরা ওই নারীকে থানায় নিয়ে আসি। তার পরিবারের লোকজনকে সংবাদ দেই। যাচাইবাছাই করে জিডির পর সালেহাকে তার ভাইয়ের জিম্মায় বুঝিয়ে দিয়েছি।’
সালেহার এখন দিন কাটছে বাবা-মায়ের কবরের পাশে ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কথা বলে।