বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাবরের বিরুদ্ধে রায়ের পর্যবেক্ষণে যা বললেন বিচারক

  •    
  • ১২ অক্টোবর, ২০২১ ১৬:২৪

বিচারক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আসামির অস্ত্র মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড এবং অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে আসামিকে তথ্য গোপনের জন্য দুদক আইন ২০০৪-এর ২৬ (২) ধারায় তিন বছরের কারাদণ্ড এবং জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণভাবে সম্পদ অর্জনের জন্য একই আইনের ২৭ (১) ধারায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের সিদ্ধান্ত নিলাম।’

অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং তথ্য গোপনের মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের আট বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

দুদক আইন ২০০৪-এর ২৬ (২) ধারায় তিন বছর এবং ২৭ (১) ধারায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

দুটি সাজা একসঙ্গে চলবে বলেও জানানো হয়েছে আদালতের আদেশে।

মঙ্গলবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭-এর বিচারক মো. শহিদুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন।

আদালতের বিচারক তার পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘সাক্ষীদের জেরায় আসামিপক্ষের দেয়া সাজেশন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারা অনুসারে আসামিকে পরীক্ষার সময় তার দেয়া লিখিত বক্তব্য ও যুক্তিতর্ক শুনানির সময় আসামিপক্ষ দাবি করেছে যে, ২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বহুল আলোচিত ও কথিত মাইনাস-২ ফর্মুলা বাস্তবায়নে আসামিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতার নামে মিথ্যা কাগজপত্র তৈরি করে মামলা দেয়া হয়।

‘এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের ২ নম্বর সাক্ষী জেরার উত্তরে বলেছেন যে, তিনি শুনেছেন তখনকার সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তখনকার বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাসহ তার দলের অনেক এমপি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর আসামিপক্ষে ওই দাবির বিরোধিতা করে বলেন যে, আসামি রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে জ্ঞাত আয়বহির্ভূতভাবে অঢেল সম্পদ অর্জন করায় নিয়মতান্ত্রিকভাবে তার নামে মামলা হয়।’

বিচারক বলেন, ‘আসামিপক্ষের ওই দাবি প্রসঙ্গে বলা যায়, রাষ্ট্র অপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি করে তার অপরাধের কারণে; তার ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়। সেটি হওয়াও উচিত নয়। আমাদের সংবিধানে ২৮-এর (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, কেবল ধর্মগোষ্ঠী, বর্ণ, নারী, পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য করবে না।’

তিনি বলেন, ‘২৭ অনুচ্ছেদে সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান। আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। ৩১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইনের আশ্রয় লাভ এবং আইন অনুযায়ী ও কেবল আইন অনুযায়ী ব্যবহার লাভ, যেকোনো স্থানে থাকা প্রত্যেক নাগরিকের এবং সাময়িকভাবে বাংলাদেশে থাকা অপরাপর ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য অধিকার।

‘৩২ অনুচ্ছেদে কোনো ব্যক্তিকে তার স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। ২১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইন মানা সকল নাগরিকের কর্তব্য। সংবিধান অমান্যকারী যত বড়ই হোক না কেন তার দায় রাষ্ট্র নেবে না। রাষ্ট্রের দায়িত্ব সংবিধান ও আইন লঙ্ঘনকারী সকল ব্যক্তির বিচার সমানভাবে করা।’

বিচারক বলেন, ‘এ কারণে লুৎফুজ্জামান বাবর বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের একজন সাবেক আইনপ্রণেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হয়েও তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণভাবে সম্পদ অর্জ্ন করায় তাকে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় শাস্তি প্রদান যুক্তিযুক্ত মনে করি।

‘তবে আসামির অস্ত্র মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড এবং অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে আসামিকে তথ্য গোপনের জন্য দুদক আইন ২০০৪-এর ২৬ (২) ধারায় তিন বছরের কারাদণ্ড এবং জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণভাবে সম্পদ অর্জনের জন্য একই আইনের ২৭ (১) ধারায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের সিদ্ধান্ত নিলাম।’

রায়ের আদেশে বলা হয়, ‘আসামির জ্ঞাত আয়বহির্ভূতভাবে অর্জিত ২৬ লাখ ৪২ হাজার ৬৭৮ টাকাসহ আসামির প্রাইম ব্যাংক গুলশান শাখার হিসাব নম্বর ২১০৫৭৯৯১-এ জমা করা মালিকানাবিহীন ১০ লাখ ডলার বা ৬ কোটি ৭৯ লাখ ৪৯ হাজার ২১৮ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হলো। আসামিকে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রের অনুকূলে আদায় দেয়ার নির্দেশ দেয়া গেল। ব্যর্থতায় জরিমানার টাকা আদায়ের জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৮৬ (১) ধারা অনুযায়ী জেলা কালেক্টর, ঢাকা বরাবর মালামাল ক্রোক করে সেটি পরিশোধের নির্দেশ দেয়া বলবৎ করা হবে।

দুদকের কর্মকর্তাকে ভর্ৎসনা

আদালতের রায়ে ২০০৮ সালের দুদক টাস্কফোর্স প্রধান মো. জসীম প্রসঙ্গে দুদকের উপপরিচালক রুপক সাহাকে ভর্ৎসনা করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের ৭ নম্বর সাক্ষী জেরায় স্বীকার করেন, টাস্কফোর্স তত্ত্বাবধানকারী দলের প্রদান মেজর জসীম নিজ স্বাক্ষরে নিজের নামে দুটি ফরেন ডিমান্ড ড্রাফটের (এফডিডি) মাধ্যমে ১০ লাখ ডলার আসামির হিসাবে জমা করেন। প্রাইম ব্যাংক গুলশান শাখা তাকে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বরে সেটি জানায়।

বিচারক এ বিষয় নিয়ে মন্তব্যে বলেন, ‘এই ইউএস ডলার কার? কার কাছ থেকে এল? কে পাঠাল? মেজর জসীম এর উত্তর দিতে পারতেন যে, তিনি কেন আসামির ব্যাংক হিসাবে ১০ লাখ ডলার জমা দিলেন। কিন্তু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রুপক কুমার সাহা তাকে রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষী করেননি।

‘রুপক যথাযথ তদন্ত না করে এ বিষয়ে আসামির বিরুদ্ধে মনগড়া অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। তদন্ত কর্মকর্তার অবহেলা রীতিমত দৃষ্টিকটু।’

এ বিভাগের আরো খবর