বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ-আইডিআরএর সঙ্গে এক বৈঠকে গাড়ির তৃতীয় পক্ষের বিমা দ্রুত ফিরিয়ে আনার তাগিদ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এই বিষয়টি বাতিল হওয়ার পর বিমা কোম্পানির আয় কমে গেছে।
গত বছর বাতিল করা বিমা নতুন করে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নিয়েছে আইডিআরএ। এ ক্ষেত্রে বিমার প্রিমিয়াম ও বিমা দাবি দুটিই অনেক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
সোমবার বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ), বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম (বিআইএফ) ও ইন্স্যুরেন্স রিপোর্টার্স ফোরাম (আইআরএফ) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক সেমিনারে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদ মামুন।
তিনি বলেন, `নানা কারণে থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্স বন্ধ হয়ে গেছে। আগে যেখানে এ খাতের পাঁচশ থেকে ছয়শ কোটি টাকার থার্ড পার্টি বিমা হতো। এখন সেটি একশ কোটি হয় কিনা সন্দেহ আছে।
‘আইডিআরএ থার্ড পার্টি বিমা আবারও চালু করার জন্য কাজ করছে। তবে এটি যত দ্রুত করা যায় ততই বিমা সেক্টরের জন্য মঙ্গল হবে।‘
সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে যে পাঁচ থেকে ছয় হাজার মানুষের প্রাণহানি ও এর চেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে, তাতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর আর্থিক অবস্থার ব্যাপক অবনতি হয়। এ ক্ষেত্রে বিমা হতে পারত আর্থিক রক্ষাকবচ।
গাড়ির মালিকের তৃতীয় পক্ষের বিমা সুবিধার আওতায় থাকতে পারত এ মানুষগুলো। কিন্তু সেই সুবিধা দেশে ছিল নামকাওয়াস্তে। এর প্রিমিয়ামও যেমন ছিল ন্যূনতম, তেমনি বিমা দাবির পরিমাণও এতটাই অনুল্লেখযোগ্য যে, ক্ষতিগ্রস্তরা তা দাবিও করত না।
অকার্যকর বিধায় সেই বিমা ব্যবস্থা বাতিলও করা হয়েছে। তবে তা আবার নতুন করে ফিরিয়ে এনে যুগোপযোগী করার যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তাতে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আর্থিক নিরাপত্তা দিতে পারে।
এবার আগের চেয়েও বেশি প্রিমিয়াম, বেশি ক্ষতিপূরণ ও শক্ত আইনি কাঠামোর সঙ্গে সঙ্গে তা কার্যকরও করতে চাইছে সরকার। এরই মধ্যে নতুন থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্সের প্রাথমিক রূপরেখাও তৈরি করেছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
সেমিনারে আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেন গুরুত্ব দেন রি ইন্স্যুরেন্সের ওপর
পুরোনো মোটরযান বিমায় মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে বছরে ৩০০ টাকা প্রিমিয়াম থাকলেও তা বাড়িয়ে ৫০০ টাকা বা তার বেশি করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
গাড়ির ক্ষেত্রে তা প্রায় ৪ গুণ করার কথা বলা হচ্ছে। আগের প্রিমিয়াম ৫০০ টাকার মতো ছিল, যা বাড়িয়ে দুই হাজার টাকা করার কথা ভাবা হচ্ছে।
নতুন প্রস্তাবে ক্ষতিপূরণ কয়েক গুণ বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বিদ্যমান অঙ্কের চেয়ে প্রায় ২৫ গুণ করার বা ৫ লাখ টাকা করার কথা ভাবছে আইডিআরএ। যদিও বিমা কোম্পানিগুলো তা কিছুটা কমাতে চাচ্ছে। তা হতে পারে ৩ থেকে ৪ লাখ।
সেমিনারটি হয় আইডিআরএ সম্মেলন কক্ষে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘বিমা খাতের উন্নয়নের বর্তমান কর্তৃপক্ষ নিরলসভাবে কাজ করছে। বিশেষ করে রি-ইন্স্যুরেন্স করার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা আমাদের নজরে এসেছে, সেগুলো সময় উপযোগী করার জন্য ও কাজ করছে আইডিআরএ।’
বেসরকারি রি-ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি করার কথাও কথা বলেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান। আগামী ৬ থেকে ৮ মাসের মধ্যে প্রায় ১২ টি আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সেমিনারে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম (বিআইএফ) এর সভাপতি বি এম ইউসুফ আলী বলেন, ‘সাংবাদিকদের সঙ্গে আমরা একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে চাই। আমাদের ভুলগুলো সঠিকভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে এ সেক্টরের উন্নয়নে সাংবাদিকদের যেমন অবদান রাখার সুযোগ আছে।’
বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্য দলিল উদ্দিন, নির্বাহী পরিচালক এস এম শাকিল আখতার, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল মতিন সরকার, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কাজিম উদ্দিন, ডায়মন্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পিপলু বিশ্বাস, জেনিথ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম নুরুজ্জামানসহ আরও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
আইআরএফ সভাপতি গোলাম মওলা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী ইব্রাহিম, মনির হোসেন, আবু সাঈদ শিপনসহ সংগঠনের সদস্যরাও বক্তব্য রাখেন।