সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমি নির্মাণের লক্ষ্যে সংরক্ষিত বনভূমির ৭০০ একর জায়গা বরাদ্দের আদেশ স্থগিত করেছে হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে ওই বরাদ্দের আদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত।
এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিঞা ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, পরিবেশ ও বন সচিব, ভূমি সচিব ও জনপ্রশাসন সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদেশের বিষয়টি নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন রিটকারী আইনজীবী শেখ মো. একেএম মনিরুজ্জামান কবির।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমারও বিষয়টি জানিয়েছেন।
গত ৫ সেপ্টেম্বর একটি জাতীয় পত্রিকায় ‘৭০০ একর বনভূমি প্রশাসন একাডেমির জন্য বরাদ্দ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য আরেকটি প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণ করতে ‘রক্ষিত বনভূমির’ ৭০০ একর জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভসংলগ্ন ঝিলংজা বনভূমির ওই এলাকা প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন। বন বিভাগ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির আপত্তি উপেক্ষা করে ভূমি মন্ত্রণালয় এই জমি বরাদ্দ দিয়েছে।
বন বিভাগের দাবি, এই জমি তাদের। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এই জমি বরাদ্দ নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এ বনভূমিতে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা নিষেধ।
এ কারণে বন বিভাগ থেকে ‘এই ভূমি বন্দোবস্তযোগ্য নয়’ উল্লেখ করে বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেয়া হয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দপত্রে দেশের অন্যতম জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ বনভূমিকে অকৃষি খাসজমি হিসেবে দেখানো হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয় বলেছে, বরাদ্দ দেয়া জমির ৪০০ একর পাহাড় ও ৩০০ একর ছড়া বা ঝরনা।
তারা জমির মূল্য ধরেছে ৪ হাজার ৮০৩ কোটি ৬৪ লাখ ২৩ হাজার ৬০০ টাকা। কিন্তু একাডেমির জন্য প্রতীকী মূল্য ধরা হয়েছে মাত্র ১ লাখ টাকা।
১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ সরকার একে রক্ষিত বন ঘোষণা করে। বন বিভাগ এত বছর ধরে এটি রক্ষণাবেক্ষণ করছে। বিপন্ন এশীয় বন্য হাতিসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ বন্য প্রাণীর নিরাপদ বসতি এই ঝিলংজা বনভূমি।
বন আইন অনুযায়ী, পাহাড় ও ছড়াসমৃদ্ধ এই বনভূমির ইজারা দেয়া বা না দেয়ার এখতিয়ার কেবল বন বিভাগের। কিন্তু বন বিভাগ ভূমি মন্ত্রণালয়কে লেখা তাদের চিঠিতে বলেছে, ১৯৯০ সালে জারি করা ভূমি মন্ত্রণালয়েরই একটি পরিপত্রে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড় ও পাহাড়ের ঢাল বন্দোবস্তযোগ্য নয় এবং ওই জমি মূলত বন বিভাগ বনায়নের জন্য ব্যবহার করবে। বন আইন অনুযায়ী, এ ধরনের রক্ষিত বনে কোনো ধরনের স্থাপনা করা নিষিদ্ধ।
পত্রিকার এই প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট আবেদন জমা দেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শেখ মো. মনিরুজ্জামান কবির।
শুনানিতে আইনজীবী বলেন, প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা রক্ষার জন্য দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় রয়েছে। সেখানে সরকারের একটি বিভাগ ৭০০ একর বনভূমি ধ্বংস করে সেখানে প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণের জন্য এই জমি বরাদ্দ নিয়েছে। যদি এখানে একাডেমি করা হয় তাহলে ভয়াবহ পরিবেশগত বিপর্যয় নেমে আসবে।
শুনানি শেষে হাইকোর্ট বনভূমি বরাদ্দের আদেশ তিন মাসের জন্য স্থগিত করে রুল জারি করে।