খুলনায় জনপ্রিয়তা পাচ্ছে তরমুজ থেকে তৈরি গুড়। মে মাসে একজন কৃষককে দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে এটা শুরু হয়। অক্টোবরে আরেকজন কৃষক সফলভাবে সেটা করেছেন। মনে করা হচ্ছে, আগামী মৌসুমে গুড়ের বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু হয়ে যাবে।
মে মাসে প্রথম যিনি এ পরীক্ষা করেন তিনি খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার আব্দুর রহমান শেখ। প্রায় ৫০ বছর বয়সী এ কৃষক স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে তরমুজ থেকে গুড় তৈরি করেন।
এরপর অক্টোবরে অসময়ের তরমুজ থেকে আবার গুড় তৈরি করেন ডুমুরিয়া উপজেলার কৃষক মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডল।
কৃষিবিদদের দাবি, যেসব তরমুজ কৃষকরা বিক্রি করতে পারেন না, তা দিয়ে তারা গুড় তৈরি করে লাভবান হতে পারবেন।
বটিয়াঘাটা উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরদার আব্দুল মান্নান জানান, গত ২৩ মে তার বুনারাবাদ ব্লকের কৃষক আব্দুর রহমান তরমুজ থেকে গুড় তৈরি করেন। বিষয়টি তখন এলাকায় আলোচনায় এসেছিল।
স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা, পুলিশ, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধিসহ অনেক উৎসাহী মানুষ তরমুজের গুড় খেতে এসেছিলেন। অনেকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে গুড় কিনতেও চেয়েছিলেন, তবে আব্দুর রহমান তা বিক্রি করেননি।
গত মৌসুমে বটিয়াঘাটা উপজেলায় ৯৬ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদন হয়েছিল। কিন্তু অনেক ক্ষেতে তরমুজের আকার ছোট হয়েছিল এবং তা ফেটে গিয়েছিল। এগুলো বিক্রি করা যায়নি।
কৃষক আব্দুর রহমান শেখ জানান, গত তরমুজের মৌসুমে তিনি দুই একর জমিতে তরমুজ চাষ করেন। অনেক তরমুজ ফেটে গিয়েছিল। কিছু তরমুজ গাড়িতে লোড দেয়ার সময় নষ্ট হয়েছিল। আবার কিছু তরমুজ আকারে খুবই ছোট ছিল, যা স্থানীয় ভাষায় ক্যাট নামে প্রচলিত। এসব অবিক্রীত তরমুজের পরিমাণ অনেক ছিল।
এরপর কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে তিনি তরমুজ থেকে গুড় তৈরির চেষ্টা করেন। প্রথম ধাপে গুড় খুব ভালো হয়; খেতেও সুস্বাদু হয়েছিল।
বর্তমানে তরমুজের মৌসুম না হলেও খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় অসময়ের তরমুজের চাষ করা হচ্ছে। যেসব তরমুজ বিক্রিযোগ্য নয়, সেগুলো থেকে গুড় তৈরি করে সফলতা পেয়েছেন উপজেলার ছোটবন্ড এলাকার কৃষক মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডল।
তিনিও স্থানীয় সংসদ সদস্য ও কৃষি কর্মকর্তাকে তরমুজের গুড় দিয়েছেন। তার কাছ থেকে অনেকেই গুড় কিনতে চেয়েছিলেন।
কৃষক আব্দুর রহমান ও মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডলের মতো লবণাক্ত এলাকার অনেক কৃষকই মৌসুমে হেক্টর হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ করেন। তার অনেকটাই অবিক্রীত থেকে যায়।
চলতি বছর তরমুজের গুড়ের জনপ্রিয়তা দেখে আগামী মৌসুমে তারা অবিক্রীত তরমুজ থেকে গুড় তৈরি করে সেটি বিক্রি করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এতে করে কৃষকদের লোকসান কমবে। সাধারণ মানুষ তালের গুড়, খেজুরের গুড়ের মতো তরমুজের গুড়েরও স্বাদ পাবেন।
এ দুই কৃষক জানান, অবিক্রীত তরমুজের লাল অংশটুকু নেট বা জালি দিয়ে তারা ছেঁকে নেন। এরপর সেটি পাত্রে ৪/৫ ঘণ্টা জ্বাল দেন। এতে কোনো ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো হয় না। তবে গুড় কত দিন খাওয়া যাবে বা এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী হবে, তা নিয়ে এখনও কোনো সংস্থা গবেষণা করেনি।