দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী উল্লেখ করে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ জানিয়েছেন, আগামী এক মাস পেঁয়াজের দাম কিছুটা ‘নাজুক’ (বাড়তি) থাকবে।
তিনি বলেছেন, দাম নিয়ন্ত্রণ ও ক্রয়সীমার মধ্যে রাখতে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দামের দেশি ও আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় সোমবার অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন বাণিজ্যসচিব।
ব্রিফিংয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ভার্চুয়ালি অংশ নেন। ওই সময় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য) এ এইচ এম শফিকুজ্জামান, অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) হাফিজুর রহমান, প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মফিজুল ইসলামসহ বিভিন্ন সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্যসচিব জানান, বৈঠকে পেঁয়াজ, ভোজ্য তেল, চিনি, মসুর ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়, তবে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে পেঁয়াজ নিয়ে। কারণ এর আগের বৈঠকগুলোতে ভোজ্যতেল ও চিনির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি জানান, ভোজ্যতেল নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে। চিনির দাম একটু বাড়লেও সেটি নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করেছে। ফলে আলোচনার লম্বা সময় পেঁয়াজ ইস্যুটি গুরুত্ব পেয়েছে।
সচিব জানান, ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে বৃষ্টির কারণে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়েছে। এর জন্য দুই দেশের ব্যবসায়ীরা দায়ী, তবে সরকার তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নেয়ায় এখন পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে ছয় টাকা কমে এসেছে। আগামীতে দাম আরও কমবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ ওঠার আগ পর্যন্ত আগামী এক মাস দেশে পেঁয়াজের দাম কিছুটা ‘নাজুক’ থাকবে।
তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘পেঁয়াজের ৮০ ভাগ দেশে উৎপাদন হয়। আর ২০ ভাগ আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। মূলত ভারত থেকেই বেশিরভাগ আমদানি পেঁয়াজ আসে।
‘কিন্তু ব্যাঙ্গালুরুতে বৃষ্টি এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের লিয়েন পিরিয়ডের বিবেচনায় ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করতে পারে, এমন আশঙ্কায় পেঁয়াজের দামে কিছুটা অস্থিরতা তৈরি হয়।’
তিনি বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে পণ্যটির ওপর আরোপিত পাঁচ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করার চিঠি দেয়া হয়েছে। আজকের বৈঠকেও এনবিআর প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। তিনি অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠকে পেঁয়াজের ওপর শুল্ক প্রত্যাহারের বিষয়ে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছেন।
‘এ ছাড়া আমরা বিকল্প বাজার হিসেবে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আনার উদ্যোগ নিয়েছি। দ্রুত আমদানিকারকদের আইপি ইস্যু করা হচ্ছে। টিসিবির মাধ্যমে ট্রাক সেল কার্যক্রম বাড়ানো হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যবসায়ীদের কঠোর বার্তা দেয়া হয়েছে।’
ওই সময় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘যেসব পণ্যের দাম নির্ধারণের সুযোগ আছে, তা নির্ধারণের মাধ্যমে দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে, তবে সব জায়গায় ইন্টারফেয়ার করা যায় না। এতে আরও সমস্যা হয়।’
তিনি বলেন, ‘দেশে এখন পাঁচ লাখ টন পেঁয়াজ মজুত আছে। পাশাপাশি পেঁয়াজ আমদানির যে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, চারদিকের এসব উদ্যোগের ফলে আশা করছি পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।’
ওই সময় তিনি সংবাদপত্র ও সংবাদকর্মীদের সঠিক তথ্য উপস্থাপনের পরামর্শ দেন।