বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রায়হান হত্যা: এক বছরেও শুরু হয়নি বিচার

  •    
  • ১১ অক্টোবর, ২০২১ ১২:২৫

রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা বলেন, ‘আমার স্বামীর খুনিদের সহায়তাকারী নোমান এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। সে যে দেশেই থাকুক না কেন, তাকে সে দেশের প্রশাসনের সহায়তায় দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হোক।’

এক বছরেও বিচার শুরু না হওয়ায় হতাশ সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে মারা যাওয়া রায়হান আহমদের মা ও স্ত্রী। সিলেটের আলোচিত এই হত্যা মামলার এক আসামি এখনও গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ তারা।

রায়হানের মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগের দিন রোববার বিচারকাজ দ্রুত শুরুর দাবি নিয়ে রাস্তায় নামেন তার মা সালমা বেগম ও স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি। সঙ্গে ছিল রায়হানের দেড় বছরের শিশুকন্যা আলফাও।

নগরীর চৌহাট্টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে রোববার বিকেলে মানববন্ধন করেন তারা।

রায়হানের মা সালমা বেগম বলেন, ‘৫ আসামি গ্রেপ্তার হলেও মামলার অভিযোগপত্র দিতে অনেক দেরি হয়েছে। আর বিচারকাজ শুরুতে আরও দেরি হচ্ছে। আমরা হতাশ।’

প্রয়োজনে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি স্থানান্তর করার দাবি জানান তিনি।

রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা বলেন, ‘আমার স্বামীর খুনিদের সহায়তাকারী নোমান এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। সে যে দেশেই থাকুক না কেন, তাকে সে দেশের প্রশাসনের সহায়তায় দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হোক।’

সিলেট নগরের আখালিয়া এলাকার রায়হান আহমদকে গত বছরের ১০ অক্টোবর রাতে তুলে নিয়ে যায় বন্দরবাজার ফাঁড়ি পুলিশ। সেখানে তাকে রাতভর নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ পরিবারের। পরদিন সকালে মারা যান রায়হান।

নগরীর স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় এক চিকিৎসকের চেম্বারে সহকারী হিসেবে কাজ করতেন রায়হান।

মানববন্ধনে কথা বলছেন রায়হানের মা সালমা বেগম, পাশে মেয়েকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে রায়হানের স্ত্রী

তার মৃত্যুর ঘটনা প্রথমে ‘ছিনতাইকারী সন্দেহে পিটুনিতে মৃত্যু’ বলে প্রচার করে পুলিশ। তবে রায়হানের পরিবার প্রথম থেকেই নির্যাতনে হত্যার অভিযোগ করে আসছে। সিলেট মহানগর পুলিশের প্রাথমিক তদন্তেও নির্যাতনের প্রমাণ মিলেছে।

এ ঘটনায় গত বছরের ১২ অক্টোবর পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে রায়হানের স্ত্রী সিলেট কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।

মামলার সবশেষ অবস্থা

শুরুতে মামলাটি তদন্তের দায়িত্বে ছিল কোতোয়ালি থানা পুলিশ। এরপর তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) স্থানান্তর করা হয়। পিবিআই পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে গত ৫ মে অভিযোগপত্র জমা দেয়।

তাতে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা এসআই (সাময়িক বরখাস্ত) আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে প্রধান আসামি করা হয়। অন্য অভিযুক্তরা হলেন এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল হারুন অর রশিদ, টিটু চন্দ্র দাস, ফাঁড়ির টুআইসি পদে থাকা এসআই হাসান উদ্দিন ও সাংবাদিক পরিচয় দেয়া আবদুল্লাহ আল নোমান।

সবশেষ গত ৩০ সেপ্টেম্বর আদালত এই অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। সেদিন পলাতক আসামি আবদুল্লাহ আল নোমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

আদালত সূত্রে জানা যায়, করোনা পরিস্থিতির কারণে অভিযোগপত্র গ্রহণে সময় লেগে যায়। অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য আদালত আগামী ২ নভেম্বর তারিখ দেয়।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) সৈয়দ শামীম আহমদ বলেন, ‘এত দিনে এই মামলার বিচারকাজ শুরু হয়ে যেত, কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে অন্য সবকিছুর মতো এই মামলার কার্যক্রমে কিছুটা ধীরগতি দেখা দিয়েছে। তবে আমরা আশা করছি, দ্রুতই বিচারকাজ শুরু হবে এবং দ্রুততম সময়েই তা শেষ হবে।’

বিভাগীয় মামলার তদন্তেও ধীরগতি

রায়হানের স্ত্রীর মামলার পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সিলেট মহানগর পুলিশ। ওই কমিটি তদন্ত করে ফাঁড়িতে রায়হানকে নির্যাতনের সত্যতা পায়।

তদন্ত কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেনসহ চারজনকে গত ১২ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত এবং তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর কনস্টেবল হারুনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।

তবে প্রধান অভিযুক্ত আকবর ১৩ অক্টোবর পুলিশি হেফাজত থেকে পালিয়ে ভারতে চলে যান। গত বছরের ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

রায়হান হত্যা মামলার মূল অভিযুক্ত বরখাস্ত হওয়া এসআই আকবর হোসেন

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পরপরই আকবরসহ পাঁচ পুলিশ এবং কোতোয়ালি থানায় মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবদুল বাতেনসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে ৯টি বিভাগীয় মামলা হয়। এ মামলার তদন্তও এক বছরে শেষ হয়নি।

ওই ৯ পুলিশ সদস্যের মধ্যে ৫ জন রায়হান হত্যা মামলায় কারাগারে আছেন। আর এসআই আবদুল বাতেন, এএসআই কুতুব আলী ও দুজন কনস্টেবল বরখাস্ত হয়ে মহানগর পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত আছেন।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, ‘অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আসছে, সেগুলো বিশ্লেষণ ও তদন্ত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে কয়েকজনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বক্তব্যও নেয়া হয়েছে।

‘তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ বিভাগেই পাঠানো হবে। পরে পুলিশ আইন অনুযায়ী তাদের শাস্তি দেয়া হবে।’

প্রাণে বাঁচতে আকবরের ‘নানা ফন্দি’

শাস্তি থেকে রেহাই পেতে প্রধান অভিযুক্ত বহিষ্কার হওয়া এসআই আকবর কারাগারে বসে নানা ফন্দি আঁটছেন বলে দাবি করেছেন রায়হানের মা সালমা বেগম।

তিনি জানান, কিছুদিন আগে বাহক মারফত রায়হানের স্ত্রীকে বিয়ে করে পরিবারটির ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয়ার প্রস্তাব দেন আকবর। বিভাগীয় মামলায় সাক্ষ্য দিতে সালমা কারাফটকে গেলে আকবর তার পা জড়িয়ে ধরে প্রাণভিক্ষা চান বলেও তিনি জানান।

সালমা বেগম বলেন, ‘কিছুদিন আগে পুলিশের এক সদস্য আমাদের বাসায় আসেন। তিনি আরেকটি মামলায় কারাগারে ছিলেন। সেখানে আকবরের সঙ্গে তার দেখা হয় জানিয়ে ওই পুলিশ সদস্য জানান, আকবর রায়হানের স্ত্রীকে বিয়ে করতে চান এবং আমার ও আমার নাতনির ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে চান।

‘এ ব্যাপারে আমাদের সম্মতি জানতে চান ওই পুলিশ সদস্য। তবে আমরা আমাদের আপত্তির কথা তাকে জানিয়ে দিয়েছি। ছেলের খুনিকে আমার বৌমা বিয়ে করবে কী করে।’

সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ ইউনিয়নের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন আকবর

সালমা বেগম আরও বলেন, ‘ওই দিন (বিভাগীয় মামলায় সাক্ষ্য দেয়ার দিন) আকবর আমার ও রায়হানের চাচার (সৎ বাবা) পা ধরে অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করেন। তিনি ক্ষমা চেয়ে আমাদের তার প্রাণভিক্ষা দেয়ার জন্য বলেন। আমাদের যাবতীয় দায়িত্ব তিনি নেবেন বলেও জানান।’

রায়হানের মা বলেন, সেদিন আকবর আমাকে বলেছিল- ‘আমরা ভুল তথ্য পেয়ে রায়হানের মতো ভালো একটি ছেলেকে নির্যাতন করেছি। আমাদের ভুল হয়েছে। আমরা বুঝতে পারিনি। আমাদের ক্ষমা করে দিন।’

আকবরকে কখনও ক্ষমা করব না জানিয়ে সালমা বেগম বলেন, ‘তিনি আমার নিরপরাধ ছেলেকে খুন করেছেন। তাকে আমি কখনোই ক্ষমা করব না। আমাদের ভরণপোষণের চিন্তা করতে হবে না। পারলে তিনি আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিক।’

রায়হান যখন মারা যান তখন তার মেয়ে আলফার বয়স ছিল দুই মাস। সেই মেয়ে এখন বড় হয়ে উঠছে। হাঁটা শিখছে। ধীরে ধীরে কথাও ফুটছে তার মুখে।

সালমা বেগম বলেন, ‘নাতনিটা কেবল বাবা বাবা করছে। সব সময়ই সে বাবাকে খোঁজে, কিন্তু পায় না। তার জন্য বুক ফেটে যায়। এই শিশুকে যে এতিম করেছে তাকে কী করে ক্ষমা করব?’

এ বিভাগের আরো খবর