বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৮০০ বিঘায় হযরত আলীর ২৭১ জাতের ফল

  •    
  • ১১ অক্টোবর, ২০২১ ০৯:৫২

বাগানের ম্যানেজার আবু সাঈদ বলেন, ‘মাল্টাসহ অন্য ফল কীটনাশক ও ফরমালিনমুক্ত। তাই এসব ফলের চাহিদা বেশি। এ বছর ১৪ কোটি টাকার ফল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে এরই মধ্যে ১০ কোটি টাকার ফল বিক্রি করা হয়েছে।’

শেরপুরের কৃষক একসময় ধান আর পাট ছাড়া অন্য কিছু চাষাবাদ করতেন না। পরে এ দুই ফসলের পাশাপাশি কৃষকরা শুরু করেন শাক-সবজি ও ফলের চাষ।

অবশ্য অনেক কৃষক জানতেন না সমতল মাটিতে নানা ধরনের ফলের চাষও করা যায়।

শেরপুরের সেই সমতল মাটিতে মাল্টা, আঙুরসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির ফল চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন হযরত আলী। তার মিশ্র ফল বাগানগুলো থেকে তিন বছরের মধ্যেই মুনাফা আসতে শুরু করেছে।

শেরপুর জেলা সদরের হাজি ইব্রাহিম খলিলুল্লাহর তিন ছেলের সবার বড় হযরত আলী ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে ব্যবসা করেন। ব্যবসার ফাঁকে তিনি চিন্তা করেন, নিজ এলাকায় ফলের বাগান করবেন।

এরপরই শুরু করেন বিভিন্ন কৃষি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া। পরামর্শ পেয়ে ২০১৯ সালে শেরপুর সদরের রৌহায় গ্রামে নিজেদের ১০০ বিঘা জমিতে শুরু করেন ফলের চাষ।

হযরত আলী সে সময় ওই বাগানে বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা, কমলা, আঙুর, ড্রাগন, লটকন, পেঁপে, পেয়ারা, লেবু, কুল, সৌদি খেজুরসহ ১২ প্রজাতির ফলের চাষ শুরু করেন।

একই সঙ্গে বিদেশি উন্নত জাতের এমকাটো, ফ্রাই ছবেদা, মালবেরি, থাই সরিষাসহ আরও ২৭১টি জাতের ফলের পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করেছেন আলী।

এরই মধ্যে তিনি শেরপুর সদর উপজেলার রৌহা, ভাতশালা, কামারিয়া ও বলায়েরচর ইউনিয়নে প্রায় ৮০০ বিঘা জমিতে ১২টি ফল ও চারা উৎপাদন বাগান করেছেন। নিজের ১০০ বিঘার পাশাপাশি বাকি জমি তিনি ২০ বছরের জন্য লিজ নিয়েছেন।

ফলচাষি হযরত আলী বলেন, ‘আমি ব্যবসার পাশাপাশি চিন্তা করি দেশের মানুষকে কীভাবে বিষমুক্ত ফল খাওয়ানো যায়। সে চিন্তা থেকেই আমি ২০১৯ সাল থেকে ফল চাষ শুরু করি। ফল চাষ ভালো হওয়ায় একটি নার্সারি ও ১১টি ফলের বাগান করেছি।’

তার এসব ফলের বাগানে এখান দুই শতাধিক শ্রমিক কাজ করেন বলে জানান তিনি। আগামী কিছুদিনের মধ্যে নতুন প্রকল্প এলে আরও শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে বলে জানান হযরত আলী।

তিনি বলেন, ‘আমি যে লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিলাম, তার চেয়ে বেশি ফল উৎপাদন ও বিক্রি হচ্ছে। আমার দেখাদেখি অনেক মানুষ ফলচাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। আমার কাছে সহযোগিতা নিচ্ছেন, এতে আমার খুব ভালো লাগে।’

হযরত আলী বলেন, ‘প্রতিদিনই অনেকেই আমার ফলবাগান দেখতে আসেন। তারা খুশি হন, ফল কেনেন, আবার কেউ কেউ ফল বাগান করার সহায়তা চান।

‘আমরা বিভিন্ন শহরে ছাদবাগান করে দিই। আমরা শতাধিক ছাদবাগান করে দিয়েছি।’

বাগানে ফলের পাশাপাশি মাছ, মুরগি, কবুতর ও গরু পালন করছেন বলেও জানান তিনি।

বাগানের ম্যানেজার আবু সাঈদ জানান, বাগানের মাল্টাসহ অন্য ফল কীটনাশক ও ফরমালিনমুক্ত। তাই এসব ফলের চাহিদা বেশি।

তিনি বলেন, ‘এ বছর ১৪ কোটি টাকার ফল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে এরই মধ্যে ১০ কোটি টাকার ফল বিক্রি করা হয়েছে।’

আবু সাঈদ বলেন, ‘আমাদের বাগানের কীটনাশকমুক্ত ফল কিনতে সরাসরি ক্রেতারা আসেন। ঘুরে দেখে কিনেন নিয়ে যান।’

বাগানের শ্রমিক শাহিন আলম বলেন, ‘আমরা এখন সারা বছর এসব বাগানে কাজ করি। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করানোসহ সংসার চালাতে এখন কোনো চিন্তা করতে হয় না।’হযরত আলীর সফলতা দেখে শেরপুরের কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন ফল চাষে। অনেকেই শুরুও করেছেন।

কৃষক হবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি হযরত সাবের বাগান দেইখা আমার ১০ কাঠা জমিতে মাল্টার চাষ করেছি। আমার মাল্টার বাগান অনেক ভালো হয়েছে। আমি সামনে আরও বেশি জমিতে ফল বাগান করব।’বাগানগুলো এখন অনেকটা পর্যটন কেন্দ্রও হয়ে উঠেছে। পরিবারসহ অনেকেই এসব বাগানে ঘুরতে যান, দেখে মুগ্ধ হন।

শেরপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক মানিক দত্ত ঘুরতে গিয়ে বলেন, ‘আমি এ বাগানে এসে মুগ্ধ হয়েছি। আমাদের এলাকায় এত সুন্দর ফলবাগান হতে পারে আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না।’

শেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুবাইয়া ইয়াসমিন বলেন, তারা বাগান করতে নানাভাবে পরামর্শসহ সহযোগিতা দিয়ে আসছেন।

তিনি বলেন, ‘আগে আমাদের ধারণাই ছিল না শেরপুরের সমতল ভূমিতে মাল্টা চাষ হবে। হযরত আলী সাহেবের মাল্টা চাষে সফল হওয়ায় উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছি আমরা। এখানকার মাল্টাসহ অন্য ফল চাষে বিদেশি ফল আমদানি অনেকাংশেই কমে যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’

এ বিভাগের আরো খবর