হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান ও অনাথ শিশুরা এ সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত একটি অংশ। তাদের যেমন থাকে না খাবারের নিশ্চয়তা তেমনি নেই নিরাপদ থাকার স্থানও। পড়াশোনা, সে তো অনেকের জন্য চিন্তারও অতীত।
সমাজের এমন শিশুদের জন্য দেশের অন্যতম নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠেছে ফরিদপুরের সরকারি শিশু পরিবার কেন্দ্র। মৌলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় বড় হচ্ছে এখানে থাকে অনাথ শিশুরা।
এই কেন্দ্রে শিশুদের সুষ্ঠুভাবে বেড়ে ওঠার জন্য রয়েছে অত্যাধুনিক আবাসিক হল, দৃষ্টিনন্দন শ্রেণিকক্ষ। পড়ালেখার পাশাপাশি শিশুদের দেয়া হচ্ছে কম্পিউটার ও সেলাই প্রশিক্ষণ।
শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এই সরকারি শিশু পরিবার কেন্দ্র।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে সরকারি ব্যবস্থাপনায় দরিদ্র, এতিম ও অসহায় শিশুদের লালন-পালনের জন্য ১৯৬১ সালে ফরিদপুর শহরের টেপাখোলায় ১১ একর জমিতে সরকারি এতিমখানা নামে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরে এগুলোকে রূপান্তর করা হয় সরকারি শিশু সদন হিসেবে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সরকারি শিশু পরিবার নামকরণ করা হয় এই কেন্দ্রের।
শিশু কেন্দ্রে কন্যাশিশু দিবসের কেক কাটছেন ডিসি অতুল সরকার
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানান, এই কেন্দ্রে বর্তমানে ১৭৫টি শিশু বেড়ে উঠছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখানে নিয়মিত তদারকি করা হয়।
তিনি বলেন, “এখানে শিশুদের জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় উন্নতমানের খাবার, পোশাক, সুচিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে জানার জন্য রয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু’ কর্নার।”
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে নানাবিধ সুবিধার মধ্যে বেড়ে ওঠা শিশুরা ভুলেই গেছে নিজেদের বাড়ির অভাবের কথা। মনের আনন্দে পড়ালেখা করছে তারা।’
সরকারি শিশু পরিবারের (বালিকা) শিক্ষার্থীরা জানায়, তারা এই কেন্দ্রে খুব ভালো আছে। পড়ালেখার পাশাপাশি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে তারা।
ফরিদপুর সরকারি শিশু পরিবারের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘এই শিশুগুলোর জন্য রয়েছে আধুনিক ডাইনিং হল, লাইব্রেরি, ইনডোর গেমস, টিভি রুম, মাল্টিপারপাস হল রুম, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, কম্পিউটার ল্যাব, সিক রুম, জসিম মঞ্চ, অপেক্ষালয়, প্রেয়ার রুম, সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ব্যাডমিন্টন কোর্ট।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই কেন্দ্রের শিশুদের অভিভাবক রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের পক্ষে আমরা দেখভাল করি। শিশুগুলোকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যা যা করা দরকার, আমরা তা করে যাচ্ছি। তাদের সুষ্ঠুভাবে বেড়ে ওঠাই আমাদের লক্ষ্য।’
ফরিদপুর জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ এস এম আলী আহসান বলেন, ‘একজন শিশুর স্বাভাবিক ও সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে যেসব সুযোগ-সুবিধার দরকার, আমরা তার সবটুকুই দেয়ার চেষ্টা করছি।’