ঢাকায় ‘সাংগঠনিক দুর্বলতা’ কাটিয়ে মাঠ গোছানোয় মনোযোগ দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ জন্য দলের একেবারে তৃণমূল থেকে কাজ শুরু করতে যাচ্ছে দলটি।
সোমবার ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের অধীন ইউনিটসমূহের সম্মেলনের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। উদ্বোধন করবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সকাল সাড়ে ১০টায় মোহাম্মদপুরের রিং রোডের সূচনা কনভেনশন সেন্টারে সম্মেলন শুরু হবে। দলের মহানগর নেতারা বলছেন, ঢাকায় এ ধরনের সম্মেলন আওয়ামী লীগের ইতিহাসে প্রথম।
দলের নেতারা মনে করেন, করোনায় দীর্ঘদিন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকায় ঝিমোচ্ছিল ঢাকার তৃণমূল। তেমন কোনো কর্মসূচি ছিল না দলটির। তারও আগে থেকে দফায় দফায় ঘোষণা দিলেও মহানগরীর ওয়ার্ডগুলোতে কোনো কমিটি এখনও দেয়া হয় নি।
২০১৯ সালে আওয়ামী লীগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের আংশিক কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় সংসদ। এতে বজলুর রহমানকে সভাপতি ও এস এম মান্নান কচিকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা দেয়া হয়। এ ছাড়া আবু আহমেদ মন্নাফীকে সভাপতি এবং মো. হুমায়ুন কবিরকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা দক্ষিণ মহানগরের আংশিক কমিটি ঘোষণা হয়। পরের বছরের সেপ্টেম্বরে তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটির প্রস্তাব কেন্দ্রে জমা দেন। ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর সেই প্রস্তাব অনুমোদন করে ঢাকা উত্তরের জন্য ৯২ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর এক দিন পরেই ৭৩ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি পায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ।
মহানগরে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন, ঢাকায় দলকে শক্তিশালী দেখতে চায় দলের হাইকমান্ড। এ জন্যই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিএনপির আন্দোলনের হুমকির কারণে মাঠ গুছিয়ে রাখা হচ্ছে, এমনটি তারা মানতে নারাজ। তারা বলছেন, যেভাবে পরিকল্পনা করা হচ্ছে, সেভাবে এগুনো গেলে বিএনপির জন্য আলাদা করে মাঠ গোছানোর প্রয়োজন পড়বে না।
এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল সিদ্দিক তুহিন নিউজবাংলাকে জানান, ‘কালকে (সোমবার) থেকে ইউনিট আকারে সম্মেলন শুরু হতে যাচ্ছে, যাকে বলে দলের একেবারে তৃণমূল। সাধারণত ৮ থেকে ৯টি ইউনিট নিয়ে একটি ওয়ার্ড গঠিত হয়। ইউনিটের পর ওয়ার্ডের সম্মেলন হবে।’
ইউনিট সম্মেলন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের পোস্টার।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ইতিহাসে এবারই প্রথম ইউনিট পর্যায়ে সম্মেলন হচ্ছে। আমি তো বলব ঢাকায় আওয়ামী লীগ তার শেকড়ের কাছে যাচ্ছে। এর আগে ইউনিট পর্যায়ের দায়িত্ব ওয়ার্ডের হাতে ছেড়ে দেওয়া হতো। কিন্তু আমরা মনে করি, ওয়ার্ডের অধীনে দলের যে ইউনিট আছে, সেগুলোই আসল শিকড়। ইউনিট পর্যায়ে আমরা প্রথম সম্মেলন করতে যাচ্ছি।’
এ জন্য ২৬টি টিম গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। এর কারণ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সময় ইউনিটগুলো যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে এবং আন্দোলন সংগ্রামেও তারা মিটিং-মিছিল করে। শিকড়ের পরিচর্যা করলে গাছ যেমন শক্তিশালী হয়, তেমনি দলও শক্তিশালী হবে।’
সম্প্রতি ঢাকায় দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়ে দলের এক বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে দুর্বল সংগঠন ঢাকা মহানগর। কোনো চর্চা না থাকায় মহানগরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের জড়তা চলে এসেছে। আমরা চেষ্টা করছি এটা সচল করতে। ঢাকা মহানগর উত্তর মোটামুটি সচল থাকলেও পিছিয়ে রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ।’
তবে এ বিষয়টি মানতে নারাজ ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। তিনি বলেন,‘ঢাকা মহানগর কখনই দুর্বল ছিল না। এখন পর্যন্ত সব কাজই তো ঢাকা মহানগর করেছে। এরশাদবিরোধী আন্দোলন থেকে এক-এগারোর সময় নেত্রীর মুক্তি আন্দোলনে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল।’
ইউনিট সম্মেলন হলে সংগঠন শক্তিশালী হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি। বলেন, ‘আমরা চাই আগামী মাসের মধ্যে আমরা সব ইউনিটের কাজ শেষ করব। এরপর ক্রমানুসারে ওয়ার্ড ও থানার কমিটিতে হাত দেব। এসব কমিটি করতে বেশি সময় লাগবে না। কিন্তু ইউনিট কমিটি করতে সময় লাগবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের তৃণমূলের এই সম্মেলন সব কাজই করবে। সংগঠনকে শক্তিশালী করবে, আবার বিএনপি যদি আন্দোলনের নামে জ্বালাও পোড়াও করে, তা প্রতিহতেও এই উদ্যোগ বেশ কাজে দেবে।’
ঢাকা মহানগর উত্তরের মতো দক্ষিণ আওয়ামী লীগেও চলতি মাসেই ইউনিট পর্যায়ে সম্মেলন শুরু হবে। বিষয়টি নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, ‘এর আগে কখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ইউনিট পর্যায়ে আমরা সম্মেলন করিনি। সে অর্থে এবারই ঢাকার ইতিহাসে এটা প্রথম। আমরাও মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছি। হয়তো সম্মেলনের আয়োজন শেষ হতে এক সপ্তাহ লাগবে।’
দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই এবার ইউনিট পর্যায়ে সম্মেলন হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বিএনপির আন্দোলনের বিষয়টি মাথায় রেখে এবার ইউনিট থেকে সম্মেলন শুরু করা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা বিএনপির আন্দোলনের হুমকিতে এত চিন্তিত নই। এটা দলের রুটিন ওয়ার্ক। ক্রমানুসারে ওয়ার্ড ও থানায় দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিও দেয়া হবে।