ষষ্ঠীতে বোধনের মধ্যে দিয়ে সোমবার শুরু হচ্ছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। করোনা মহামারির বিবর্ণ সময় পার করে এবারের দুর্গোৎসব জমজমাট করতে প্রস্তুতি সারা দেশে। গতবারের চেয়ে বেড়েছে মণ্ডপের সংখ্যা, জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে দেবীবন্দনায় তৈরি সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, এবার দেবী মর্ত্যে আসছেন ঘোড়ায় চেপে। পুরাণ অনুযায়ী, দুর্গা ঘোড়ার পিঠে চড়ে এলে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ, ঝড়, রাজনৈতিক অস্থিরতা ইত্যাদি পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। আর ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে দেবী মর্ত্য ছাড়বেন দোলায় চড়ে। দোলায় গমনেও বাড়বে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্বিপাক। আবহাওয়ার পূর্বাভাসও বলছে, এবার পূজার সময়টিতে ঘটতে পারে ঝড়-বৃষ্টির বিঘ্ন।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, সোমবার মহাষষ্ঠীর সকালে হবে দুর্গা দেবীর ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ এবং ষষ্ঠিবিহিত পূজা, সন্ধ্যায় হবে দেবীর বোধন। মঙ্গলবার মহাসপ্তমীবিহিত পূজা, বুধবার মহাষ্টমীবিহিত পূজা, বৃহস্পতিবার মহানবমীবিহিত পূজা এবং শুক্রবার দশমীবিহিত পূজা সমাপন ও প্রতিমা বিসর্জন হবে।
পূজা উদযাপন পরিষদের হিসেবে দেশে এবার প্রায় ৩২ হাজার মণ্ডপে দুর্গাপূজা হচ্ছে। এই সংখ্যা গতবারের চেয়ে প্রায় দুই হাজার বেশি। ঢাকা মহানগরে এবার পূজা হবে ২৩৭টি মণ্ডপে।
তবে করোনা মহামারির কারণে এবারও মেনে চলতে হবে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি। মণ্ডপ এলাকায় বসবে না মেলা, থাকবে না আরতি প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক আয়োজন।
ষষ্ঠীতে ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপে, ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, রমনা কালী মন্দির, স্বামীবাগের লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম ও মন্দির, রামসীতা মন্দির, জয়কালী মন্দিরসহ বিভিন্ন মণ্ডপে ষষ্ঠী পূজার আয়োজন করা হয়েছে।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কিশোর রঞ্জন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি শেষের দিকে। এবার মেলা বসবে না, তবে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের কয়েকটি দোকান থাকবে। পূজাতে আরতি থাকবে, তবে আরতি প্রতিযোগিতা হবে না।’
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সদস্য রজত কুমার সুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঢাকা মহানগরে মোট ২৩৭টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হবে। এর মধ্যে সূত্রাপুর থানায় সবচেয়ে বেশি ২৫টি মণ্ডপে, কোতোয়ালি থানায় ২১টি, ওয়ারীতে ১৬টি, গেণ্ডারিয়ায় ১৪টি, হাজারীবাগে ১৩টি, তুরাগে ১২টি, বাড্ডায় ১০টি, বনানীতে নয়টি, মোহাম্মদপুরে নয়টি, দারুসসালাম ও গাবতলীতে আটটি, ডেমরায় আটটি এবং তেজগাঁও থানায় ছয়টি মণ্ডপ রয়েছে।’
পুরান অনুযায়ী, ব্রহ্মার বর পেয়ে মানুষ ও দেবতাদের অজেয় হয়ে উঠেছিলেন মহিষাসুর। ফলে তাকে পরাজিত করার জন্য ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর যে মহামায়ারূপী নারী শক্তি তৈরি করেন তিনিই দেবী দুর্গা। দশভূজা দুর্গা টানা ৯ দিন যুদ্ধ করে মহিষাসুরকে বধ করেন।