টাঙ্গাইলের গোপালপুরে শারীরিক পরিবর্তনে এক মেয়ে ‘ছেলেতে পরিণত হচ্ছে’ এমন খবরে ভিড় করছেন স্থানীয়রা। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈজ্ঞানিকভাবে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যক্তির লিঙ্গ পরিবর্তন সম্ভব নয়। হরমোনগত বা অন্য কোনো কারণে কৈশোরে যে কারও ক্ষেত্রে কিছু অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা যেতে পারে।
১৬ বছরের ওই কিশোরী স্থানীয় একটি স্কুলে পড়ছে। এবার তার এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা।
মেয়েটি নিউজবাংলাকে বলে, ‘ভেতরে ভেতরে কিছু পরিবর্তন লক্ষ করছিলাম। লোকলজ্জার ভয়ে এতদিন কিছু বলতে পারিনি।’
কিশোরীর বাবা জানান, বেশ কিছুদিন ধরে মেয়ের আচরণে নানা পরিবর্তন চোখে পড়ে। এখন তার শারীরিক গঠন অনেকটা পুরুষের মতো। এ ছাড়া চেহারাতেও কিছু পরিবর্তন এসেছে। ‘ছেলেতে রূপান্তরের’ কারণে তার নাম রাখা হয়েছে আবদুল্লাহ আল জিহাদি।
কিশোরীর মা জানান, ‘ছয় মাস আগে মেয়ের বিয়ে ঠিক করা হয়। তখন সে অসম্মতি জানায়। শারীরিক পরিবর্তনের কথা বললে প্রথমে আমি বিশ্বাস করিনি। পরে আমি সব দেখে বিশ্বাস করেছি। আগে আমাদের দুই মেয়ে ছিল। এখন ১ ছেলে ও ১ মেয়ে হওয়ায় আমি খুবই খুশি।’
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের গাইনি বিভাগের কনসালটেন্ট উম্মে নাজমিন ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করতে হয় বা মতামত জানাতে হয়।
‘যে শিশুটি ১৬ বছর ধরে মেয়ে হিসেবে বেড়ে উঠেছে, আমরা ধরে নিতে পারি শারীরিক গঠনের দিক থেকে সে নারী। তার এখনকার পরিবর্তনের অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। হুট করে একটা মেয়ে ছেলে হয়ে যাচ্ছে, বিষয়টি আসলে এমন নয়।’
ডা. নাজমিন ইসলাম বলেন, ‘প্রতিটি মানুষের শরীরে নারী হরমোন ও পুরুষ হরমোন থাকে। যারা নারী, তাদের শরীরে নারীত্বের হরমোনের পরিমাণ ও প্রভাব বেশি থাকে। পুরুষের ক্ষেত্রেও পুরুষের হরমোন একই ভূমিকা রাখে।
‘কিছু কারণে মেয়েদের শরীরে ছেলেদের হরমোনের প্রভাব বেড়ে যেতে পারে। যেমন কোনো টিউমার বা কোনো এনজাইমের পরিমাণগত পরিবর্তনের কারণে পুরুষত্বের প্রকাশ ঘটে এমন হরমোন সক্রিয় হয়ে ওঠে। এ ধরনের ক্ষেত্রে গলার স্বর মোটা হয়ে যাওয়া, গোঁফ ওঠা কিংবা গঠনগত দিক থেকেও পুরুষালি কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। কোনো ওষুধের কারণেও এটা হতে পারে।’
ডা. নাজমিন ইসলাম বলেন, ‘এখানে আরেকটি বিষয় এখানে লক্ষণীয়, ১৬ বছরের ওই শিশুটি পুরষাঙ্গ নাকি নারী অঙ্গ বহন করছে সেটাও দেখা দরকার। কারণ এতদিনেও হয়তো বিষয়টি সেভাবে লক্ষণীয় ছিল না। অথবা তার অভিভাবকরা হয়তো বিষয়টি আড়াল করার চেষ্টা করেছেন।
‘আবার ওই শিশুটি ট্রান্সজেন্ডারও হয়ে থাকতে পারে। তাই ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া এমন ঘটনা কেন ঘটছে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসা যায় না।’