আওয়ামী লীগ সরকারকে হটিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে ১৯৯০ সালের মতো একটি গণঅভ্যুত্থান ঘটানো দরকার বলে মনে করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এজন্য সবাইকে এককাট্টা হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে শহীদ জেহাদ দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছিলাম। লাখ লাখ মানুষের জীবনের বিনিময়ে আমরা সেদিন স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলাম। পরে ১৯৯০ সালে একটি গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে দিয়েছিল। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেদিন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আজকে আবার সেই সময় এসেছে। আরও দৃঢ়তার সঙ্গে আরেকটি গণঅভ্যুত্থান ঘটাতে হবে।’
এই সরকারের আমলে মানুষ মত প্রকাশের স্বাধীনতা হারিয়েছে উল্লেখ করেন বিএনপির এই নেতা। বলেন, ‘বিদেশ থেকে কনক সরোয়ার কিছু সত্য কথা বলেন, আপনারা সবাই তার নাম জানেন। সর্বশেষ তিনি বলেছেন শেখ হাসিনা লন্ডনে ২৬টি স্যুটকেস নিয়ে গিয়েছেন। এই কথা বলার পর একজন মা যার তিনজন সন্তান আছে কনক সারোয়ারের সেই বোনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে রিমান্ডে নিয়ে অত্যাচার ও নির্যাতন করা হয়েছে।
‘এ কোন দেশে আমরা বসবাস করি? এত জংলি দেশ। কোনো সভ্যতা নেই এখানে। এই অবস্থা তৈরি করেছে শেখ হাসিনা। সুতরাং আপনাকে যদি বাঁচতে হয়, আমাকে যদি বাঁচতে হয়, আমাদের দেশকে যদি বাঁচিয়ে রাখতে হয়, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের অর্জন, নব্বইয়ের অর্জন যদি ফিরিয়ে আনতে হয় তবে অবিলম্বে শেখ হাসিনার পতন ঘটাতে হবে। পরিষ্কারভাবে বলতে হবে সরে দাঁড়াও, সরে যাও।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ আমাদের কোনো কিছু অবশিষ্ট নেই। এই সরকার বিচার বিভাগকে ধ্বংস করেছে, আমাদের পার্লামেন্টকে ধ্বংস করেছে, আমাদের প্রশাসনকে ধ্বংস করেছে, শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে ও অর্থব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। তাই এই হাসিনা সরকারকে কোনোভাবেই আর সময় দেয়া যাবে না।’
১৯৯০ সালের ১০ অক্টোবর এরশাদবিরোধী গণআন্দোলনে রাজধানীর পল্টনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন ছাত্রদল কর্মী নাজির উদ্দিন জেহাদ। সেই থেকে দিনটিকে শহীদ জেহাদ দিবস হিসেবে পালন করে থাকে বিএনপি।
দলটির মহাসচিব বলেন, ‘জেহাদ যে কারণে রক্ত দিয়েছিল সেই গণতন্ত্রকে আজকে আমাদের কাছ থেকে হরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমাদের অর্জনগুলোকে কেড়ে নেয়া হয়েছে। ১৯৭১ সালে আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছিলাম সেই স্বাধীনতা এখন আমরা ভোগ করছি না। আমাদের দেশের স্বাধীনতা সার্বোভৌমত্ব আজকে বিপন্ন হয়েছে। আমরা আজকে একটি নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছি।
‘স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা মানুষের জন্য যে ভালো জিনিসগুলো লাভ করেছিলাম তা এই দানবীয় সরকার কেড়ে নিয়েছে। এই সরকার অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। আদালতকে ব্যবহার করে ২০১২ সালে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে। তারপর বেআইনিভাবে প্রায় ১৪ বছর যাবত ক্ষমতা দখল করে বসে আছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আপনারা লক্ষ্য করেছেন প্রায় প্রতিটি আন্দোলনে আমাদের ছাত্ররাই সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে যেমন আমান উল্লাহ আমানরা তাদের দায়িত্ব পালন করে সফল হয়েছেন। ঠিক একইভাবে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ছাত্ররাই সফল হয়েছিল। এমনকি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ছাত্র-যুবকরাই জয়ী হয়েছিল।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।