ব্যক্তিশ্রেণির ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ব্রোকারেজ হাউস থেকে ঋণ নিয়ে শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করেছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম।
স্বল্প পুঁজি নিয়ে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে বলেছেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান।
চলমান বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহে রোববার বাংলাদেশ ব্রোকারেজ হাউস (ডিবিএ) আয়োজিত সেমিনারে বক্তব্য রাখছিলেন শিবলী রুবাইয়াত। সেমিনারের বিষয় ছিল ‘সচেতন বিনিয়োগ, টেকসই পুঁজিবাজার’।
বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘ফাইন্যান্সিয়াল টার্মস অনুযায়ী, আপনি যত রিস্ক নেবেন, তত রিটার্ন বেশি হবে। এ ক্ষেত্রে যার সক্ষমতা আছে, সে রিস্ক নিতে পারে। রিস্ক নিতে গিয়ে ক্ষতির আশঙ্কাও আছে। তাই স্বল্প পুঁজি নিয়ে রিস্ক নেবেন না। ঋণ নিয়ে রিস্ক নেবেন না। তাই শিক্ষাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
এ ক্ষেত্রে ডিবিএ বিনিয়োগকারীদের সচেতন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
পুঁজিবাজারে ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো বিনিয়োগকারীদের তাদের তহবিলের বিপরীতে ঋণ দিয়ে থাকে। একে মার্জিন ঋণ বলে। প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ৮০ টাকা ঋণ পাওয়া যায়।
শেয়ার মূল্য যখন বাড়তে থাকে, তখন এই ঋণ কোনো চাপ হিসেবে দেখা দেয় না। তবে শেয়ার মূল্য কমে গেলে সেটি বিনিয়োগকারীর জন্য বোঝা হয়ে যায়।
শেয়ার মূল্য কমে গেলে ব্রোকারেজ হাউস সমন্বয়ের কথা বলে। টাকা দিতে না পারলে একপর্যায়ে শেয়ার বিক্রি করেও দেয়া হয়।
২০১০ সালের ধসের পর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মার্জিন ঋণধারীরা। কারণ, বহু হাউস শেয়ার বিক্রি করে তাদের টাকা উশুল করে নিয়েছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীর টাকা শূন্য হয়ে গেছে।
ঋণের চাপ না থাকলে আরও শেয়ার কিনে সমন্বয় করা গেছে বা পরে শেয়ারের দাম বাড়লে বিনিয়োগকারী লোকসান কাটিয়ে মুনাফায় ফিরেছে।
বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের আগে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। আর বিনিয়োগকারীদের এই কাজটিতে সহযোগিতা করবে ব্রোকার হাউসগুলো।’
অযৌক্তিক হারে মুনাফার পেছনে না ছোটার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘কিছু মানুষের অতি লোভের কারণে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এ জন্যই নৈতিক শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। অতি লোভে পড়ে কারসাজির মাধ্যমে মুনাফাকে হারাম করা হয়েছে।‘
ব্রোকারেজ হাউসগুলোর আইনবিরুদ্ধ কর্মকাণ্ডেও পুঁজিবাজারের ক্ষতি হয় বলে মন্তব্য করেন শিবলী রুবাইয়াত। বলেন, ‘ডিবিএ বা ব্রোকারেজ হাউসগুলো হচ্ছে পুঁজিবাজারের প্রাণ। অনেক সময়ে তারা পুঁজিবাজারে অযৌক্তিক আচরণ করে থাকে। তখন তাদের বিরুদ্ধে আমাদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু আমরা তা করতে চাই না। আমাদেরও এ কাজটি করতে খারাপ লাগে।
‘পুঁজিবাজারের উন্নয়নে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই। প্রয়োজনে আপনারাই আপনাদের সদস্যদের নিয়ে বসে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করুন। আপনাদের নিজেরাই আলোচনা করে ঐক্যবদ্ধভাবে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে এগিয়ে আসুন। আপনাদের কয়েকজনের কারণে যেন পুঁজিবাজারে বদনাম না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।‘
বিনিয়োগ শিক্ষা নিতে হবে
এর আগে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, ‘অনেক সময় বলা হয় পুঁজিবাজার সবার জন্য না। কিন্তু আমি এর বিরোধিতা করি। কারণ, আমি মনে করি পুঁজিবাজার সবার জন্য। সবাই এখানে ব্যবসা করতে পারে। মুনাফার জন্য বিনিয়োগ করতে পারে।
‘এ জন্য আমাদের এখানে যারাই আসবে তাদের সবাইকে বিনিয়োগ শিক্ষা দিতে হবে।’
সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শরিফ আনোয়ার হোসেন।
আয়োজক হিসেবে আরও ছিল বাংলাদেশ অ্যাকাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেট (বিএএসএম)।
সেমিনারে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভূঁইয়া বলেন, ‘পুঁজিবাজারে তথ্যের সঠিক সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। ডিএসই সেই তথ্য বিক্রিও করতে পারে। কিন্তু তথ্যগুলো যাতে পুঁজিবাজারের জন্য কার্যকর হয়, সে জন্য পুঁজিবাজারের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তাদের যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে এখন নতুন নতুন প্রোডাক্ট আসছে। আরও নিয়ে আসতে হবে। এ জন্য বিএসইসি অসাধারণ কাজ করছে। মার্কেট মেকারদের লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে। তারাই পুঁজিবাজারে সিকিউরিটিজগুলোকে যাচাই-বাছাই করে বিনিয়াগকারীদের জন্য ভালো একটি মেসেজ দিতে পারবে।’