পাবনায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘিরে বাংলাদেশে যে পারমাণবিক কার্যক্রম চলছে তা শান্তির জন্য বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউনিট-১-এ রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল বা পরমাণু চুল্লিপাত্র স্থাপন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে এ কথা বলেন সরকারপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পারমাণবিক শক্তি আমরা শান্তির জন্য ব্যবহার করছি। অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে, সেই বিদ্যুৎ গ্রামপর্যায়ে মানুষের কাছে যাবে। মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নতি হবে। আজকে আমরা এটা দাবি করি, এখন আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ৯২ ভাগ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি। মানুষের উন্নতি হলে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে।
‘আমাদের দুইটা লক্ষ্য। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এখন পরমাণু শক্তির একটা অংশ হিসেবে আমরা একটা স্থান করে নিতে পারলাম। এটা শান্তির জন্য।’
দেশে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলেছি। যত অঞ্চল হবে সেখানে শিল্পায়ন হবে, আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে। সেটাকে মাথায় রেখে আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালনের পরিকল্পনা মাথায় নিয়েছি। সেই বিষয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে পরমাণু কার্যক্রম নিয়ে দেশের একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে আমাদের দেশে যারা বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট বা পাওয়ার সম্পর্কে যাদের জ্ঞান আছে, যারা আমাদের অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনের সঙ্গে জড়িত সকলের কিন্তু নতুন অভিজ্ঞতা হলো।
সবাইকে ট্রেনিং করাতে হচ্ছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘রাশিয়াতে ট্রেনিং করাচ্ছি, ইন্ডিয়াতে ট্রেনিং করাচ্ছি। কারণ, একই রকম পাওয়ার প্ল্যান্ট ইন্ডিয়াতে হচ্ছে। একই জায়গা থেকে ট্রেনিং নিয়ে আসছেন। রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রে তিন থেকে চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা করা হয়েছে।’
‘টক শোতে টক-মিষ্টি-ঝাল মিশিয়ে সমালোচনা’
দেশে ভালো কিছু করতে গেলে সমালোচনা শুনতে হয় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, সরকারের সমালোচনায় টক শোতে টক-মিষ্টি-ঝাল মিশিয়ে নানা কথা হয়।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে একটা কিছু করতে গেলে এত সমালোচনা হয় যে... নানাভাবে নানা জনে অনেক কথা বলে ফেলে, অনেক কথা লিখে ফেলে। টক শোতে অনেক কথাও হয়। টক-মিষ্টি-ঝাল মিশে বহু কথা হয়। এটা তো বাংলাদেশের একটা চরিত্র। কোনো কিছু করতে গেলেই তার মধ্যে একটা খুঁত খোঁজে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পরমাণু শক্তি শান্তি রক্ষায় ব্যবহার করব, অস্ত্র বানাব না। এই চুক্তিতে আমাদের স্বাক্ষর করতে হয়। আমরা সেটাও করি। এ ছাড়া আমেরিকা থেকে একটা টিম আসে। এটা উপযুক্ত কি না। এইভাবে অনেক কাজ আমরা ৯৬ সালে এগিয়ে রাখি। ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে না পারার কারণে আর আগাতে পারিনি। বিএনপি সব বন্ধ করে দেয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৯-এ সরকার গঠনের পর আবার আমরা উদ্যোগ নিই। সেই উদ্যোগের ফলেই নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট হচ্ছে। এটা স্থাপন করতে আমাদের যথেষ্ট কাজ করতে হয়েছে।
‘আমি যখন রাশিয়া সফরে যাই তখন পুতিনের সঙ্গে আমার এই বিষয়ে আলোচনা হয়। তিনি আমাদেরকে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করে দেবেন এটা বলেন। তখন সেখানে যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার সাথেও আলোচনা হয়৷ আমাদের যে চুক্তি হয় সেখানে বলা হয় এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা রাশিয়া নিজেই করবে।’